ইসরায়েলের নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু
Published: 21st, March 2025 GMT
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। এই হামলা আঁচ করতে ব্যর্থতার জন্য ইসরায়েলের নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের বরখাস্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা বৈঠক করে।
নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে বারকে বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে আগামী ১০ এপ্রিল।
২০২১ সালের অক্টোবরে শিন বেতের প্রধান হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে বারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল।
নেতানিয়াহু গত রোববার এক ভিডিও বিবৃতিতে বারকে বরখাস্ত করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তখন তিনি বারের সঙ্গে তাঁর চলমান অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই অবিশ্বাস আরও বেড়েছে।
নেতানিয়াহুর পদক্ষেপটি ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। জেরুজালেমে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে হামলার বিরুদ্ধে জেরুজালেমে চলা বিক্ষোভে যোগ দেন হাজারো ক্ষুব্ধ ইসরায়েলি।
গত মঙ্গলবার থেকে গাজায় তীব্র হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। তারা বলছে, হামাসের লক্ষ্যবস্তুতে তারা হামলা চালাচ্ছে।
এই হামলার মধ্য দিয়ে গাজায় দুই মাস ধরে চলা ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির অবসান ঘটে।
গাজায় ইসরায়েলের নতুন এই হামলায় অন্তত ৫৯১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্থাটির কার্যক্রমসহ সদস্যপদের তথ্য রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপন রাখা হয়।
বার তাঁকে পদচ্যুত করার সিদ্ধান্তকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে বর্ণনা করেছেন।
অন্যদিকে ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা বলেছেন, পদক্ষেপটির বৈধতা মূল্যায়ন না করা পর্যন্ত বারকে বরখাস্ত করা যাবে না।
প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর একজন কট্টর সমালোচক এই অ্যাটর্নি জেনারেল। তিনি নিজেও বরখাস্ত প্রক্রিয়ার মুখোমুখি।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচার হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় প্রথম ধাপের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার আগে ১৫ মাসের ইসরায়েলি হামলায় ৪৮ হাজার ৫০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ন য় ইসর য় ল মন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
হঠাৎ বাড়ছে হাইডেলবার্গ সিমেন্টে শেয়ারদর, চার দিনে বাড়ল ৬৩ টাকা
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত সপ্তাহে মূল্যবৃদ্ধিতে চমক দেখিয়েছে সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ সিমেন্ট। মাত্র চার কার্যদিবসে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৬৩ টাকা বা প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। তাতে গত ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠেছে। ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ঈদের ছুটির আগে সর্বশেষ গত ২৭ মার্চ হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ২১৪ টাকা। ঈদের ছুটির পর শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় গত রোববার। ওই দিন বাজারে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম সাড়ে তিন টাকা কমেছিল। এর পরের চার দিন মূল্যবৃদ্ধিতে কোম্পানিটি বড় চমক দেখায়। চার দিনেই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়েছে ৬৩ টাকা। তাতেই সপ্তাহ শেষে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির শীর্ষে জায়গা করে নেয়। সপ্তাহ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ২৭৪ টাকায়।
হঠাৎ গত সপ্তাহে কোম্পানিটি মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে বাজারসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সামনে বছর শেষের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে কোম্পানিটি। গত ডিসেম্বরে কোম্পানিটির আর্থিক বছর শেষ হয়েছে। শেয়ারবাজারের নিয়ম অনুযায়ী, বিমা খাতের কোম্পানি ব্যতীত অন্যান্য কোম্পানির ক্ষেত্রে হিসাব বছর শেষ হওয়ার ১২০ দিন বা চার মাসের মধ্যে বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে তা পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন করতে হয়। সাধারণত পরিচালনা পর্ষদের যে সভায় বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়, সেই সভা থেকেই বছর শেষে শেয়ারধারীদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এই নিয়ম অনুযায়ী, হাইডেলবার্গ সিমেন্টকে চলতি মাসের মধ্যে ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে লভ্যাংশের ঘোষণা দিতে হবে। এই ঘোষণা সামনে রেখে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি হঠাৎ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
* চলতি মাসের মধ্যে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে হবে কোম্পানিটিকে।* সিমেন্ট খাতের ৭ কোম্পানির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার।
* ছয় মাসের মধ্যে শেয়ারের দাম সর্বোচ্চ, ২৭৪ টাকা।
নেদারল্যান্ডসভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি হাইডেলবার্গ স্ক্যান ও রুবি ব্র্যান্ডের সিমেন্ট বাজারজাত করে থাকে। শেয়ারবাজারে সিমেন্ট খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ দামি শেয়ার। ঢাকার শেয়ারবাজারে বর্তমানে দেশি-বিদেশি সাতটি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি দেশীয় মালিকানাধীন আর বাকি দুটি বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানি। সিমেন্ট খাতের দেশীয় কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর গণনা হয় দেশের অর্থবছরের সঙ্গে সংগতি রেখে, অর্থাৎ জুলাই-জুনকেন্দ্রিক। আর বিদেশি কোম্পানিগুলোর হিসাব বছর মূলত ক্যালেন্ডার বছর বা জানুয়ারি-ডিসেম্বরকেন্দ্রিক।
গত বছরের প্রথম ৯ মাসের (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ৪১ কোটি টাকার মুনাফা করেছে, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকা কম। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর—এই সময়ে কোম্পানিটি মুনাফা করেছিল ৫১ কোটি টাকা। গত বছর কোম্পানিটির মুনাফা কমে যাওয়ার কারণ বিক্রি বা ব্যবসা কমে যাওয়া। গত বছরের প্রথম ৯ মাসে হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১ হাজার ১১৫ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। ২০২৩ সালের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটি ব্যবসা কমেছে ২৭১ কোটি টাকার। একদিকে ব্যবসা কমেছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেই কারণে মুনাফা কমে গেছে।
কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম তিন প্রান্তিক বা ৯ মাসের মধ্যে শেষ ৩ মাস (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি লোকসান করেছে। ওই প্রান্তিকে কোম্পানিটির লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এক প্রান্তিকে লোকসানের পরও আগের দুই প্রান্তিকের মুনাফার কারণে এটি শেষ পর্যন্ত মুনাফার ধারাতেই ছিল।
ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের ২৫ শতাংশ বা শেয়ারপ্রতি আড়াই টাকা নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তার আগের বছর এই লভ্যাংশের পরিমাণ ছিল নগদ ১০ শতাংশ। এখন শেয়ারধারীরা অপেক্ষায় আছেন গত বছরের লভ্যাংশের জন্য। যে লভ্যাংশ সামনে রেখে কোম্পানির শেয়ারের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে গত সপ্তাহে।
হাইডেলবার্গ সিমেন্ট ১৯৮৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এটি মাঝারি মূলধনের একটি কোম্পানি। কোম্পানিটির মূলধন ৫৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে এটির শেয়ারের প্রায় ৬১ শতাংশেরই মালিকানায় ছিলেন উদ্যোক্তা-পরিচালকেরা। বাকি ৩৯ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ২৬ শতাংশ রয়েছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে। আর ১৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে।
হাইডেলবার্গ সিমেন্টের শেয়ারধারণ-সংক্রান্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারধারীর সংখ্যা ছিল মোট ১০ হাজার ১৯১ জন। এর মধ্যে ৯ হাজার ৯১৭ জন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী, যাঁদের হাতে কোম্পানিটির ৫ হাজারের কম শেয়ার রয়েছে। এসব বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির মোট শেয়ারের প্রায় ৬ শতাংশ ধারণ করেন। আর ৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ২২৬ জন। ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ শেয়ার রয়েছে এমন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ৩৮ জন। আর ২ লাখ থেকে ৫ লাখ পর্যন্ত শেয়ার রয়েছে ৮ জন বিনিয়োগকারীর হাতে। ৫ লাখ থেকে ১ কোটি শেয়ার ধারণ করেন এমন বিনিয়োগকারী রয়েছেন ৬ জন। এক কোটির বেশি শেয়ার রয়েছে শুধু কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে।