বনের ৮৭৫ একর জমির বরাদ্দ বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। আরও ১৩ হাজার ৫৬৭ একরের বরাদ্দ শিগগির বাতিল হচ্ছে। গত তিন দশকে সারাদেশে সরকারি ৪৫টি সংস্থাকে ১ লাখ ৬১ হাজার একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এসব জমির বড় অংশে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ শুক্রবার সরকারি-বেসরকারিভাবে বিশ্ব বন দিবস পালন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য– ‘বন-বনানী সংরক্ষণ, খাদ্যের জন্য প্রয়োজন’।
পরিবেশবিদরা বলছেন, স্থাপনাকে উন্নয়নের ‘হাতিয়ার’ দেখাতে সরকারই বনভূমি দখলে মদদ দিয়েছে। এতে কমছে বনভূমি; ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য ও বাস্তুতন্ত্র। বনের জমি দখলমুক্ত করতে সরকারের শক্ত পদক্ষেপ চান তারা।
সরকারি সংস্থার কবজায় বনভূমি
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে হাজার হাজার একর বনভূমি সরকারি সংস্থার কবজায় রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে সারাদেশে রয়েছে ৫৩ হাজার ৫৭৯ একর ভূমি। প্রতিষ্ঠানটি শুধু কক্সবাজারেই দখলে নিয়েছে ৪৩ হাজার ৯৫ একর। জেলাটিতে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং র্যাব ও বিজিবির অধীনে রয়েছে ৯৩ হাজার ৯২৩ একর। পাশাপাশি মিয়ানমার থেকে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর আশ্রয় দিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৮ হাজার একর বনভূমি। কক্সবাজারে ৯ হাজার ৪৮৭ একর বরাদ্দ পেয়েছে বেজা-চট্টগ্রাম।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অন্তত ৩০টি সরকারি সংস্থা বনভূমি বরাদ্দ নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৮৬ হাজার ৭০০ একর বরাদ্দ নোয়াখালীতে। দ্বিতীয় চট্টগ্রামে, ২৭ হাজার ৬৯৮ একর। এর পর টাঙ্গাইলে ১৪ হাজার ৯৯৩, কক্সবাজারে ১৪ হাজার ২৩২ ও সিলেটে ৯ হাজার ১৫৬ একর।
জাতীয় বননীতির ১৯ নম্বর ঘোষণায় বলা আছে, সরকারি মালিকানাধীন বনভূমি বনায়ন ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু এসব জমিতে নিত্যনতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
পরিবেশবাদীদের আপত্তি উপেক্ষা করে মৌলভীবাজারের জুড়ীর লাঠিটিলা বনে ২০২৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক, মৌলভীবাজার (প্রথম পর্যায়)’ প্রকল্পে অনুমোদন দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। এটি তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের নির্বাচনী এলাকা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দুই মাস আগে চাপ দিয়ে ৩৬৪ কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন নেন তিনি। এতে সংরক্ষিত বনের ৫ হাজার ৬৩১ একর জমি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত ছিল। তবে গত ডিসেম্বরে প্রকল্পটি বাতিল করেছে সরকার।
কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কের শুকনাছড়ি এলাকায় বড় বড় পাহাড়কে ব্রিটিশ আমলে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৯ সালে এগুলোকে ‘প্রতিবেশ সংকটাপন্ন’ বনভূমি ঘোষণা করে সরকার। অথচ ২০২১ সালে এখানে ৭০০ একর বনভূমি ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমি অব পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’-এর জন্য ১ লাখ টাকা প্রতীকী মূল্যে বরাদ্দ দেওয়া হয় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের। গত বছরের নভেম্বরে এটি বাতিল করে সরকার।
একইভাবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কের পাশে খুনিয়াপালং মৌজায় আবাসিক প্রশিক্ষণ একাডেমির জন্য ২৫ একর সংরক্ষিত বন দেওয়া হয় বাফুফেকে। বন বিভাগের আপত্তি উপেক্ষা করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে বিশেষ ক্ষমতাবলে এটি দেওয়া হয়। অবশ্য গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর বরাদ্দ বাতিল করে বিকল্প জায়গা খোঁজার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজারের দরিয়ানগরের পাঁচ একর জমি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্স ইউনিভার্সিটিকে বরাদ্দ দেয় তৎকালীন সরকার। ভূমি মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালে উপকূলীয় প্রাণবৈচিত্র্য, সামুদ্রিক মৎস্য ও বন্যপ্রাণী গবেষণার জন্য এখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে ইজারা দিয়েছিল। শর্তে না থাকলেও ২০১৮ সালে পাঁচ তলা ডরমিটরি করে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিকরা বেড়াতে গেলে ৪৪টি কক্ষের ডরমিটরি ব্যবহার করছেন।
২০২২ সালে কক্সবাজার বিভাগীয় বন কার্যালয় থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়, কক্সবাজারে ৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ২৮৮ একর বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট, শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমি ও বিপিসির মতো প্রতিষ্ঠান। শুধু তাই নয়, ফেরতের শর্তে ২০২১ সালে ভূমি মন্ত্রণালয়কে বনের ১২ হাজার ৩৪১ দশমিক ৮১ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়, যেখানে পাহাড় ও গাছ কেটে তৈরি হচ্ছে স্থাপনা; চাষ হচ্ছে চিংড়ি।
২০১৬ সালে নিয়মবহির্ভূতভাবে শহীদ এটিএম জাফর আলম মাল্টিডিসিপ্লিন একাডেমির নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৫৫ দশমিক ৭ একর বনভূমি। প্রয়াত জাফর আলম মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক সচিব শফিউল আলমের ভাই। এটি বাতিলে গত বছর ২১ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; কার্যকর হয়েছে গত ৬ জানুয়ারি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরের মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য উপকূলীয় ২৬ হাজার একর ম্যানগ্রোভ বন অধিগ্রহণ করে বেজা। পরিবেশ মন্ত্রণালয় মিরসরাইয়ে বরাদ্দ ৪ হাজার ১০০ একর বনভূমি ফেরতের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর সোনাদিয়ার পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ৯ হাজার ৪৬৭ একর জমিও ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আয়তনে সুন্দরবন ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বনের পর তৃতীয় বৃহত্তম টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবন। এখানেও পড়েছে সরকারি থাবা। ১০ হাজার ৬৪৬ একর জমি বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী জানান, ২০২০ সালের অক্টোবর থেকে গত বছর জুলাই পর্যন্ত ৩১ হাজার ৬১৫ একর বনভূমি দখলমুক্ত করা হয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের পর ১ হাজার ৪৪৬ একর বনভূমি উদ্ধার হয়েছে। বাকি ২ লাখ ৩৭ হাজার ১০ একরও উদ্ধারে ১৭ হাজার ৩৮১টি উচ্ছেদ প্রস্তাব সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য ৫ আগস্টের পরও ঢাকা, টাঙ্গাইল এবং রংপুরে প্রায় ১৪০ একর বনভূমি দখল হয়েছে বলে জানান তিনি।
২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল নোয়াখালীর হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ও জাহাজমারা এলাকার ১১টি চরের ৪০ হাজার ৩৯০ একর জমি নিয়ে ঘোষণা হয় ‘নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান’। কিন্তু সরকারিভাবে শুধু চর ওসমানে জরিপ হয়।
বন উজাড়ে বিপন্ন প্রাণবৈচিত্র্য
দেশের ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি না থাকলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশ বন বিভাগের ২০১৯ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বন আচ্ছাদিত এলাকা মোট ভূমির ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। যদিও এখানে বনের বাইরের গাছ আমলে নেওয়া হয়নি। তবে বন বিভাগের নতুন সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বনের বাইরে গাছের পরিমাণ মোট ভূমির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। এসব গাছের বেশির ভাগই সামাজিক বনায়নের। বনের ভেতর ও বাইরে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা মোট ভূমির প্রায় সাড়ে ২২ শতাংশ।
বনভূমি কমে যাওয়ায় খাদ্য ও অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বন্যপ্রাণী। ইতোমধ্যে সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীসহ ৩১টি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। প্রকৃতি সংরক্ষণের আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের হিসাবে, বাংলাদেশে ৩৯০ প্রজাতির বন্যপ্রাণীর প্রায় সবক’টি ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে মহাবিপন্ন চিহ্নিত হয়েছে ৫৬টি বন্যপ্রাণী, বিপন্ন ১৮১ ও ঝুঁকিতে ১৫৩ প্রজাতি।
বন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক বনভূমি বন অধিদপ্তরের নামে নিবন্ধন নেই। ফলে জেলা প্রশাসকরা খাসজমি হিসেবে সংরক্ষিত বনের জমি প্রতীকী মূল্যে বন্দোবস্ত দেন।
বন অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক এবং আইইউসিএনের সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, বেশির ভাগ দখলে রাজনৈতিক মদদ রয়েছে। বনের ভেতরে জমি বরাদ্দ দিলে পুরো বনেই বিপর্যয় নেমে আসে। উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দিতে হলে ক্ষতির বিষয় জানতে হবে। কারণ উজাড়ের পর জমি এমন হয়, সেখানে ১০ গুণ গাছ লাগানো সম্ভব নয়।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সমকালকে বলেন, ‘বনভূমি বরাদ্দের অর্থ এটিকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা। সব প্রতিরোধ উপেক্ষা করে আমরা বন উদ্ধারে মনোযোগ দিয়েছি। বিভিন্ন সংস্থার নামে বরাদ্দ বাতিল করা হচ্ছে। দখলদার যত প্রভাবশালীই হোক, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র হ জ র একর র বর দ দ ব ত ল কর প রকল প গত বছর পর ব শ মন ত র এক ড ম র জন য দশম ক একর জ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি
ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার সীমান্তঘেঁষা দুটি ইউনিয়নে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এখানকার মানুষের জীবনধারণের ভরসা পাহাড়ি ছড়া ও পুকুরের পানি।
গতকাল শুক্রবার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলাগড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি ছড়ায় বালু সরিয়ে গর্ত করে পানি সংগ্রহ করছেন আমেনা খাতুন ও জোসনা বেগম। এ সময় জিজ্ঞাসা করতেই আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার কোমর লইয়া খারাইবার পারি না। কষ্ট কইরা এই ঝর্ণার পানি লইয়া খাইয়া বাঁচুন লাগে। সরকার যদি আমাগো একটা ব্যবস্থা করতো, তাইলে বিরাট উপকার অইতো।’
এমন আক্ষেপ শুধু আমেনা বেগমের নয়, ধোবাউড়া এলাকার দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অন্তত ১২টি গ্রামের মানুষের এমন আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। সুপেয় পানির জন্য তাদের সংগ্রাম যেন শেষ হবার নয়। মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ছড়ার ময়লা পানি ও পুকুরের ঘোলা পানি দিয়ে গৃহস্থালির কাজ সারতে হয় তাদের। খেতেও হচ্ছে সেই পানি। এতে দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।
সরেজমিন দেখা গেছে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের গিলগড়া, কাশিপুর, বাকপাড়া, শানখলা, পঞ্চনন্দপুর গ্রাম ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাংগা, চন্দকোনা এলাকা পাহাড়ি অঞ্চল। এসব এলাকায় নলকূপ বসানো যায় না। এসব এলাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আর শুকনো মৌসুমে পুকুর ও পাহাড়ি ছড়ার পানি পান করতে হয়। এতে পেটের পীড়া, চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তারা। এসব গ্রামের হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেশি থাকায় তাদের পক্ষে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব নয়। গ্রামে দু-একজন অধিক অর্থ ব্যয় করে সাবমারসিবল পাম্প বসালেও বেশির ভাগ মানুষের ভাগ্যে জুটছে না বিশুদ্ধ পানি।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য কার্যালয়ের তথ্যমতে, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন হচ্ছে ধোবাউড়া উপজেলার মেঘালয় সীমান্তঘেঁষা। এই এলাকা আদিবাসী অধ্যুষিত। পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় নলকূপের পাইপ মাটির গভীরে পানির স্তর পর্যন্ত নেওয়া সম্ভব হয় না। ৫০-৬০ মিটার গভীরে গেলেই পাইপ আটকে যায় পাথরে। তাই গভীর নলকূপ বসানো কষ্টসাধ্য। যারা নিজ উদ্যোগে অগভীর নলকূপ বসিয়েছেন, তাদের নলকূপেও শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকে না।
আদিবাসী নারী ইতি চিসিম ছড়ার পানি সংগ্রহ করতে এসে জানান, তাঁর বাড়িতে নলকূপ না থাকায় পানির জন্য সারা বছরই কষ্ট করতে হয়। তিনি বলেন, ‘আমরার কল (টিউবওয়েল) নাই। আমরা অনেক আগে থাইকা পাহাড়ের ছড়ার পানি খাই। রান্নাবান্নাসহ সব কাজ করি। খালি আমি না, সবারই এই অবস্থা।’
পানির কষ্টের কথা বলতে গিয়ে আক্ষেপ করেন ঘোষগাঁও ইউনিয়নের গোলইভাঙ্গা সীমান্ত এলাকার আমির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বাবারে, আমরা শুষ্ক মৌসুমে হিসাব করে পানি পান করি। টিউবওয়েলে পানি উঠে না। পুকুর আর ছড়াই আমাদের ভরসা।’
দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির জানান, তিনি চেয়ারম্যান হওয়ার পর তিন বছরে সীমান্ত এলাকায় ১০টি গভীর নলকূপের ব্যবস্থা করেছেন। ওই এলাকার কেউ আবেদন করেননি। আবেদন করলে বিকল্প পদ্ধতিতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হবে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী শফিউল আজমের দাবি, সীমান্ত এলাকায় দুটি নলকূপ দেওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। এবার নতুন প্রকল্প সব প্রতিষ্ঠানভিত্তিক।
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিশাত শারমিনের ভাষ্য, পাহাড়ি এলাকায় পাথরের কারণে গভীর নলকূপ বসানো সম্ভব হয় না। পাহাড়ি এলাকায় পানি সংকট নিরসনে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করতে চাইছেন তারা। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে।