দারুণ কিছুর আভাস দিয়েই শুরু হওয়া ম্যাচটি তখন হতাশায় শেষ হওয়ার অপেক্ষায়। শুরুতে এগিয়ে যাওয়ার পর ব্রাজিলকে আর তেমন খুঁজে পাওয়া গেল না। এর মধ্যে সমতায় ফেরা কলম্বিয়াও তেমন কিছু করে দেখাতে পারল না। ব্রাসিলিয়ার মানে গারিঞ্চা স্টেডিয়ামের দর্শকরাও যখন হতাশা নিয়ে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় তখনই জ্বলে উঠলেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। বক্সের বাইরে থেকে নিলে দারুণ এক শট। আর তাতেই পয়সা উশুল। ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচটিতে ব্রাজিল পেয়ে যায় ২-১ গোলের দারুণ এক জয়।  

২৬ মার্চ আর্জেন্টিনা ম্যাচ সামনে রেখে আজকের খেলাটি ব্রাজিলের জন্য ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। কলম্বিয়ার বিপক্ষে জিতে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় থেকেই সেই ম্যাচের প্রস্তুতি সারল ব্রাজিল।

এই জয়ে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে উঠে আসল ব্রাজিল। ১৩ ম্যাচে ব্রাজিলের পয়েন্ট এখন ২১। আর ব্রাজিলের কাছে হেরে কলম্বিয়া নেমে গেছে ৬ নম্বরে। ১৩ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট ১৯।

ঘরের মাঠে আজ আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেই শুরু করে ব্রাজিল। ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই গতিময় ও পাসিং ফুটবলে কলম্বিয়াকে চমকে দেওয়ার চেষ্টা করে তারা। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে রাফিনিয়ার পাস ধরে দারুণভাবে কলম্বিয়ার বক্সে ঢুকে পড়েন ভিনিসিয়ুস। বক্সের ভেতর ভিনিকে থামাতে গিয়ে ফাউল করেন কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার দানিয়েল মুনোজ। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিতে একটুও দেরি করেননি রেফারি। স্পট কিকে গোল করে ব্রাজিলকে এগিয়ে দেন বার্সেলেোনা তারকা রাফিনিয়া।

এগিয়ে গিয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের কাছে রাখে ব্রাজিল। পাসিং ও গতিতে কলম্বিয়ার রক্ষণে চাপও তৈরি করে তারা। পাশাপাশি এ সময় ব্রাজিল জায়গাও বের করছিল দারুণভাবে। ৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোলের কাছাকাছিও পৌঁছে যায় তারা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলটি পাওয়া হয়নি।  

এদিন প্রথম ২০ মিনিটে খুঁজেই পাওয়া যায়নি কলম্বিয়াকে। এরপর অবশ্য গুছিয়ে নিয়ে কয়েকবার আক্রমণে যায় তারা। শুরুর কয়েকটি আক্রমণ তেমন কার্যকর না হলেও ৪১ মিনিটে ঠিকই গোল আদায় করে নেয় তারা। দারুণ এক আক্রমণ থেকে ব্রাজিল রক্ষণের প্রতিরোধ ভেঙে দেয় কলম্বিয়া। অসাধারণ ফিনিশিংয়ে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান লিভারপুল তারকা ‍লুইস দিয়াজ।   

নিজেদের মাঠে প্রথমার্ধে ব্রাজিলের শুরুটা ভালো হলেও সেটা ধরে রাখতে পারেনি তারা। খেলা যতই এগিয়েছে ধার হারিয়েছে ব্রাজিল। যে কারণে ভালো না খেলেও শেষ পর্যন্ত সমতা ফিরিয়ে বিরতিতে যেতে পারে কলম্বিয়া।

বিরতি থেকে ফিরেই দারুণ এক আক্রমণে যায় ব্রাজিল। যদিও অল্পের জন্য পাওয়া হয়নি গোল। এরপর আক্রমণ, প্রতি-আক্রমণে দুই দলই চেষ্টা করে গোল আদায়ের। একাধিকবার কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিল, কিন্তু পাওয়া হচ্ছিল না প্রত্যাশিত গোলটি। এর মধ্যে ৬৪ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করে ব্রাজিল। কিন্তু প্রতিপক্ষ রক্ষণে গিয়ে খেই হারানোয় শেষ পর্যন্ত গোল পাওয়া হয়নি।

৬৮ মিনিটে কলম্বিয়ার আক্রমণ রুখে দেন ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক আলিসন। শেষ দিকে দুই আরও কিছু সুযোগ পেয়েছিল। কিন্তু আর কোনো গোল না হওয়ায় মনে হচ্ছিল সমতাতেই শেষ হবে ম্যাচ। কিন্তু ভিনিসিয়ুস অবশ্য অন্য কিছু ভেবে রেখেছিলেন। খেলা শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে করেন দারুণ এক গোল। আর তাতেই ব্রাজিল পেয়ে যায় মহামূল্যবান এক জয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কলম ব য় র দ র ণ এক

এছাড়াও পড়ুন:

ফাহামিদুলের বাদ পড়া এবং কিছু প্রশ্ন

জাতীয় ফুটবল দলের কোচ হ্যাভিয়ের কাবরেরার ইচ্ছাতেই সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত ক্যাম্পে ডাকা হয়েছিল ইতালি প্রবাসী ফুটবলার ফাহামিদুল ইসলামকে। তবে দল যখন ক্যাম্প শেষ করে বাংলাদেশে ফিরল (১৮ মার্চ, ২০২৫) তখন দলের সঙ্গে দেখা গেল না ফাহামিদুলকে! সৌদি থেকে ইতালিতে ফেরত পাঠানো হয় এই ১৮ বছর বয়সী মিডফিল্ডারকে।

গোটা দেশ যখন হামজার হোমকামিংয়ে মজে ছিল, তখন জন্ম নেয় বিশাল এই বিতর্কের। হ্যাঁ, বিতর্কই বটে। কারণ, ফাহামিদুলকে স্কোয়াডে না রাখার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠলেও কোন সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেনি ফুটবল দল সংক্রান্ত কেউই।

আরো পড়ুন:

‘মেসির সঙ্গে’ পরিচয় করিয়ে দিলেন জামাল, ছেত্রীর সঙ্গে তুলনায় দিলেন অন্যরকম উত্তর

আসিফের হুঁশিয়ারি
বাফুফেতে সিন্ডিকেটের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেবে সরকার

দলের ম্যানেজার আর কোচের কথার সুর প্রায় একই, ফাহামিদুল দলের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেননি, তবে তিনি ভবিষ্যত পরিকল্পনায় আছেন। অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে, তারা যখন এই উত্তরগুলো দিচ্ছিলেন, মনে হচ্ছিল না তারা নিজেরাই বিশ্বাস করছেন! তাছাড়া অতীতে নর্দার্ন আইরিশ টপ ডিভিশনে খেলা রিয়াসাত ইসলামের সাথেও এক দশক আগে ফাহামিদুলের মতো একই কাজ করা হয়েছিল।

আজ বুধবার (১৯ মার্চ, ২০২৫) দুপুর ১টা নাগাদ যখন ভারত ম্যাচের পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলন চলছিল ঢাকার একটি পাঁচ তারকা হোটেলে, তখন বাইরে চৈত্রের তাপ উপেক্ষা করে সারাদেশ থেকে আসা ফুটবল সমর্থকরা করছিল প্রতিবাদ। তাদের মতে, ফাহামিদুলের সাথে যা ঘটেছে তা এক কথায় অন্যায়। এই সমর্থকরা দাবি করছে বহুদিন ধরেই একটা সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ ফুটবল।

প্রতিবাদীদের মাঝে উল্লেখযোগ্য একটা অংশ হচ্ছে ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ ফুটবল আল্ট্রাসের।’ গতকাল বিকেল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর রাজপথে এই প্রতিবাদী সমর্থকগোষ্ঠীর স্লোগান ছিল, ‘জনে জনে খবর দে, সিন্ডিকেটরে কবর দে।’ আন্দোলনের স্ফূলিঙ্গের মাঝেই দুই একজন জানালেন, সিন্ডিকেটের মানুষদের জন্যই যোগ্য ফুটবলাররা খেলতে পারেন না একাদশে। অনেক সময় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে দারুণ খেলা ফুটবলারদের রাখা হয় না স্কোয়াডেও।

এই আন্দোলনরত ফুটবল সমর্থকগোষ্ঠীর দাবি, রিয়াসাত এবং ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে সেই সিন্ডিকেটেরই প্রভাব আছে। তাদের পাল্টা প্রশ্ন, প্রস্ততি ম্যাচে হ্যাটট্রিক করার পড়ও কিভাবে বাদ পড়ে? এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বয়ং বাফুফের পোস্ট করা একটা ভিডিওর প্রসঙ্গ টেনে আনলেন তারা। যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সিরি’ডিতে খেলা ফাহামিদুলের ড্রিবলিংয়ের সামনে রীতিমত খাবি খাচ্ছিলেন দেশের স্বনামধন্য ডিফেন্ডাররা।

যদিও বাংলাদেশ দলের তরফ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফাহামিদুলের বাদ পড়ার পেছনে কোচের কৌশলগত কারণই বারবার সামনে আসছে। বাদ দেওয়ার কারণ নিয়ে কোচ কাবরেরা বলেন, “তার বয়স ১৮ বছর। সে আমাদের বিবেচেনায় আছে। কিন্তু এই মুহুর্তে জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত না। সে আমাদের সঙ্গে থাকবে ভবিষ্যতে।”

এই বয়সের যুক্তি কতখানি ধোপে টিকে? এই কাবরেরার স্বদেশী লামিনে ইয়ামাল যখন জার্মানিতে ২০২৪ সালের ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে স্পেনকে শিরোপা জেতান, তখন তার বয়স মাত্র ১৬! জার্মানির আইন অনুযায়ী শিশু হওয়াতে, স্পেন দলকে গুনতে হয়েছিল মোটা অঙ্কের জরিমানাও।

অন্যদিকে কাবরেরা যখন জামাল ভূঁইয়া ও হামজা চৌধুরীকে নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন, তখন প্রেস কনফারেন্স রুমের শেষদিকে দাঁড়িয়ে ছিলেন তার স্বদেশী ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের সহকারী কোচ ডেভিড গোমেজ। তাকে সামনে পেয়ে প্রশ্ন করার লোভ সামলাতে পারলাম না। প্রস্ততি ম্যাচে ফাহামিদুল হ্যাটট্রিক করেছিল কিনা জানতে চাইলে ব্যাচারা একদম হতবম্ভ হয়ে পড়ে। একদমই আশা করেনি এমন প্রশ্ন। অপ্রস্তুতভাবেই একগাল হেসে জবাব দিলেন, ‘‘আমি না ঠিক মনে করতে পারছিনা। নিশ্চিত না এই ব্যাপারে।’’

ডেভিডের উত্তরটা খুবই অনুমেয় ছিল। এরপর কিছুটা নিপাট ভদ্রলোকের মতোই যোগ করলেন, ‘‘আমি আসলে উত্তর দিতে পারব না। কোড অব কন্ডাক্টের বাইরে যেতে পারব না।’’

জাতীয় দলের ম্যানেজার, কোচ এবং সহকারী কোচ, সবার কথা একই সুতোয় গাঁথা, সব জায়গাতেই আছে সমন্বয়। তবে একটু জিজ্ঞাসু কিংবা অনুসন্ধানী চোখে তাকালেই লক্ষ্য করা যায় অদ্ভুত এক রহস্য, কি জানি এক লুকোচুরি, কোথায় জানি বড্ড বেখাপ্পা। ফাহামিদুলের বাদ পড়াটা কেন জানি বারবার জন্ম দিচ্ছে কিছু অস্বস্থিকর প্রশ্নের।

শেষ করা যাক বর্তমান সময়ের সেরা ফুটবলার কিলিয়ান এমবাপ্পের শুরুর দিকের এক ঘটনা দিয়ে। এই রিয়াল মাদ্রিদ তারকার বাবা ক্যামেরনের এবং মা আলজেরিয়ার। তবে এমবাপ্পে বিশ্বজয় করেছেন ফ্রান্সের জার্সিতে। এই উইঙ্গার যখন মোনাকোর সিনিয়র দলে সুযোগ পেলেন, তখন তার বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন ক্যামেরুন জাতীয় দলের ট্রায়ালে। ছোট্ট এমবাপ্পে সহজেই জয় করলেন সবার হৃদয়। তবে ক্যামেরুন দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুই একজন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে বসলেন উঠতি তারকার বাবার কাছ থেকে।

তাতেই বেঁকে বসল এমবাপ্পে ও তার পরিবার। তারা ফ্রান্সে ফিরে যায়। এই ব্যাপারটা পরে জানাজানি হলে ক্যামেরুন ফুটবল ফেডারেশন ফেরাতে চান এমবাপ্পেকে। তবে তিনি আর ফিরেননি। গোটা ক্যামেরুনের সৌভাগ্য হলো না, এমন একজন বিস্বয়কর ফুটবলারকে তাদের জার্সিতে দেখার। এরপর ফ্রান্সের নীল জার্সিতে ২০১৮ সালের বিশ্বকাপ জয় করে আগমনী বার্তা জানান দেন এমবাপে। পরের বিশ্বকাপের ফাইনালে হ্যাটট্রিক করে লিওনেল মেসির হাত থেকে প্রায় একাই বিশ্বকাপটা ছিনিয়ে নিচ্ছিলেন, একটুর জন্য হয়নি সেবার।

তবে ক্যামেরুনের ফুটবলে আজীবনের আফসোস থাকবে এমবাপ্পেকে পেয়েও না পাওয়ার গল্প, কিছু হটকারী কর্মকর্তার জন্য। বাংলাদেশের ফাহামিদুলের গল্পটাও কি সেদিকেই যাচ্ছে? এই প্রশ্ন তোলা থাক।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শাকিলের সাথে সি টু সামিটে পথের সঙ্গী  
  • কষ্টের জয়ে শীর্ষেই রইল আবাহনী
  • হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট যে ৪ কৌশলে বেশি হ্যাক করা হয়
  • সার্বিয়া যেতে না পেরে ১১ দিন ধরে বিমানবন্দরে
  • মহানবীর (সা.) ইতিকাফ
  • আমি আর সিনেমা করতে চাই না: বর্ষা
  • আসামির বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই, রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত 
  • রাজশাহীতে শাশুড়িকে হত্যা মামলার আসামি গ্রেপ্তার
  • ফাহামিদুলের বাদ পড়া এবং কিছু প্রশ্ন