শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় ধানখেতে জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে গুচ্ছগ্রাম–সংলগ্ন পাহা‌ড়ের ঢা‌লে এ ঘটনা ঘটে।

ওই ঘটনার পর গতকাল রাতেই বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে জেনারেটরের তার জব্দ করেছেন। আজ শুক্রবার সকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ময়মনসিংহ বন বিভাগের মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী।

বন বিভাগ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে ১৮-২০টি বন্য হাতির পাল উপজেলার সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ের বিভিন্ন টিলায় ও জঙ্গলে অবস্থান করছে। দিনের বেলায় টিলা বা জঙ্গলে অবস্থান করলেও সন্ধ্যা নামার পর হাতির পাল দল বেঁধে ধানখেতে, লোকালয়ে নেমে আসে। এ জন্য কৃষকেরা ফসল রক্ষায় মশাল জ্বালিয়ে, রাত জে‌গে হাতির পাল প্রতিরোধের চেষ্টা করেন।

পূর্ব সমশ্চুড়া গ্রামে গুচ্ছগ্রাম–সংলগ্ন এলাকায় পাহা‌ড়ের ঢা‌লে ৭০-৮০ একর জমিতে বো‌রো আবাদ করা হয়েছে। বন‌্য হা‌তির কবল থেকে ফসল রক্ষায় কৃষকেরা ধানখেতে জেনারেটরের মাধ্যমে তার দিয়ে ঘিরে রাখেন। গতকাল রাতে হাতির পাল সেই ফসল খেতে হানা দেয়। এ সময় একটি হাতি তারে জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। এ সময় অন্য হাতিগুলো মৃত হাতিটিকে ঘিরে রাখে। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন বিভাগের কর্মীরা ঘটনাস্থল থেকে জেনারেটরে‌র তার জব্দ ক‌রে নিয়ে যান। এ সময় হা‌তির দল‌টি মৃত হা‌তির আশপা‌শে জঙ্গ‌লে অবস্থান ক‌রছিল। শেষ রা‌তে মৃত হাতিটি রেখে অন্য হাতিগুলো জঙ্গলে ফিরে যায়।

মধুটিলা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম প্রথম আলো‌কে বলেন, খা‌দ্যের সন্ধা‌নে আমন ও বোরো মৌসুমে বন্য হাতির দল লোকাল‌য়ে নে‌মে আসে। গতকাল রা‌তে ১৮-২০টি হাতি পাহাড় থেকে গুচ্ছগ্রাম–সংলগ্ন ধানখে‌তে নেমে আসে। এ সময় জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি হাতির মৃত্যু হয়।

মধুটিলা ইকোপার্কের রেঞ্জ কর্মকর্তা দেওয়ান আলী প্রথম আলোকে বলেন, জেনারেটরের তারে জড়িয়ে একটি মা‌দি হাতির মৃত্যু হয়েছে। হা‌তি‌টির বয়স পাঁচ বছর হ‌বে। রাতেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। মৃত হাতির ময়নাতদন্ত করা হবে। এ ব্যাপারে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ এ সময় গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

৩০০ বছরের পুরোনো মোগল ফৌজদারের মসজিদ

ছয়-গম্বুজের মসজিদ। পদ্মফুলের ওপর কলসের নকশায় সাজানো হয়েছে গম্বুজের চূড়া। কমলা রঙে রঙিন গম্বুজের জৌলুশ যেন কিছুটা ম্লান করে দেয় মসজিদটির বাইরের দেয়াল। বিবর্ণ হয়ে যাওয়া দেয়ালটিতে শেওলা জমেছে। যদিও মসজিদের ভেতরে সবকিছুই বেশ পরিপাটি। মসজিদটির ভেতরে-বাইরের নানা কারুকার্য আর স্থাপত্যশৈলী ছড়ায় মুগ্ধতা।

চট্টগ্রাম নগরের চকবাজারে অবস্থিত এই মসজিদটি। নাম ‘ওয়ালী বেগ খান জামে মসজিদ’। তবে পরিচিত ‘অলি খাঁ মসজিদ’ নামেও। মসজিদটির বয়স তিন শ বছরের বেশি। চট্টগ্রাম নগরে আঠারো শতকের আগে নির্মিত সাতটি পাকা মসিজদের বিবরণ বিভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্রে পাওয়া যায়, যার এর একটি এই মসজিদ।

চট্টগ্রামের মুসলিমদের পুরাকীর্তির বিবরণসহ প্রথমবারের মতো বেশ কিছু শিলালিপির পাঠ পাওয়া যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীর এক সদস্যের লেখা ভ্রমণবৃত্তান্তে। তাঁর নাম—ক্যাপ্টেন পগসন। ১৮৩১ সালে শ্রীরামপুর প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর ‘ক্যাপ্টেন পগসন্স ন্যারেটিভ ডিউরিং এ ট্যুর টু চাটিগাঁও’ নামের বই। এতে চট্টগ্রামের চারটি শিলালিপি সংবলিত মুসলিম পুরাকীর্তি এবং তিনটি শিলালিপিবিহীন মসজিদের নাম উল্লেখ করা হয়। যার মধ্যে রয়েছে ওয়ালী বেগ খান মসজিদের নামও।

ঐতিহাসিকদের মতে, এই মসজিদটি নির্মাণ করেন মোগল ফৌজদার (আঞ্চলিক শাসনকর্তা) ওয়ালী বেগ খান। তাঁকে চকবাজারের প্রতিষ্ঠাতাও বলা হয়। চট্টগ্রামবিষয়ক গবেষক আবদুল হক চৌধুরী তাঁর ‘বন্দর শহর চট্টগ্রাম’ বইয়ে উল্লেখ করেন, ১৭১৪ থেকে ১৭১৯ সালের মধ্যে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণের খরচ মেটানোর জন্য জেলার রাউজান থানার কদলপুর, মিরসরাইয়ের নিজামপুর এবং সন্দ্বীপে ১২০ দ্রোণ (এক দ্রোনে ৮ একর) জমি ওয়াক্ফ করেছিলেন ওয়ালী বেগ খান। মসজিদের পাশে ‘কমলদহ’ নামের একটি দিঘি থাকার উল্লেখও বইটিতে রয়েছে।

আবদুল হক ছাড়াও আরও বেশ কিছু গবেষকের ইতিহাসবিষয়ক বইয়ে একই এলাকায় মোগল ফৌজদার ওয়ালী বেগ খানের আবাসসহ-কাছারি নির্মাণ আর দিঘি খননের উল্লেখ পাওয়া যায়। তবে এসব এখন নেই। কালের সাক্ষী হয়ে আছে কেবল মসজিদটি।

মসজিদের ওপর রয়েছে ছয়টি গম্বুজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ