বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধে জড়ালে সর্বোচ্চ সাত বছর জেল হতে পারে। এ বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে উপদেষ্টা পরিষদ।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এর অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ অধিকতর কার্যকর করার লক্ষ্যে নতুন খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এটি গত সোমবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। নীতিগত অনুমোদন দেয় পরিষদ। এর পর অংশীজনের মতামত পর্যালোচনা করা হয়। গতকাল উপদেষ্টা পরিষদ বৈঠকে খসড়া অধ্যাদেশটি অধিকতর পরিমার্জন করা হয়। লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের ভেটিং সাপেক্ষে চূড়ান্ত অনুমোদন করা হয়।

সংশোধিত অধ্যাদেশে মৌলিক বিধানগুলো হলো– ধর্ষণের সংজ্ঞা সংশোধন। বিয়ের প্রলোভন বা অন্যবিধ প্রতারণার মাধ্যমে যৌন সম্পর্ক করার শাস্তি। শিশু ধর্ষণ অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠন। অধ্যাদেশটি জারি হলে ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীন অন্যান্য অপরাধের দ্রুত বিচার করা সম্ভব।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ধর্ষণের মামলায় সংজ্ঞাগত দুর্বলতার কারণে মামলা প্রমাণিত হয় না। বেশির ভাগ মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের কথা উল্লেখ করেন, যা বিচারকে দুর্বল করে তোলে।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন বলেন, ‘আইনে ধর্ষণের সংজ্ঞায় ভুল ছিল। বিয়ের প্রলোভন দেখানো– এটাকেও ধর্ষণের সংজ্ঞায় ঢুকিয়ে রেখেছে। প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) লেখা হয়– বিয়ের লোভ, প্রেম বা প্রতারণা করে শারীরিক সম্পর্ক করা হয়েছে। এতে ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধকে ছোট করা হয়।’

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বিয়ের প্রলোভনে শারীরিক সম্পর্ককে ধর্ষণের আওতাভুক্ত করা চরম ভুল এবং আইনের মূল নীতির পরিপন্থি। ধর্ষণের ক্ষেত্রে মূল বিবেচ্য বিষয় হলো সম্মতি। বিয়ের প্রলোভনের নামে শারীরিক সম্পর্ক এবং পরে বিয়েতে অস্বীকৃতি বড়জোর প্রতারণার অপরাধ হতে পারে, ধর্ষণ নয়।’

বৈঠকের পর রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এটা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার মধ্যেই থাকবে। আলাদা একটা সেকশনে বিচার হবে। এটা আলাদা অপরাধ না, একই অপরাধ। একই আইনের আওতায় পৃথকভাবে এটা হলো। অর্থাৎ এ অপরাধটির অভিযোগে আলাদা করে মামলা হবে।’

বৈঠকে  আইন নিয়ে ঘণ্টাখানেক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, আইনে বলাৎকারের নতুন সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ মামলাগুলোর জন্য ডিএনএ টেস্ট একটি বিলম্বের কারণ ছিল। সেই জায়গাগুলোর বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

শতভাগ দরপত্র অনলাইনে

বর্তমানে সরকারি কাজের দরপত্রের ৬৫ শতাংশ হয় অনলাইনে। এটি শতভাগে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া প্রাক্কলিত দরের ১০ শতাংশের কম হলে দরপত্র প্রস্তাব বাতিল করা যেত। সেই বিধান বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বিধান রেখে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, দেখা যেত সিন্ডিকেট করে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে দু-তিনটি প্রতিষ্ঠান বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাজ পাচ্ছিল। এটি যাতে না হয়, সে জন্য আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে। সংশোধনীতে আগের কাজের মূল্যায়নে নতুন শর্ত যুক্ত করা হবে। পুরোনো পদ্ধতিতে একই প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ পেত। এতে করে সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব।

সরকারি পরিত্যক্ত বাড়ি বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিরা আগে নিজ নামে নামজারি করতে পারতেন না। সেই অসুবিধা দূর করতে আইনে সংশোধনী আনা হয়েছে।

ঈদের ছুটি ৯ দিন

ঈদুল ফিতরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য ছুটি এক দিন বাড়িয়েছে সরকার। আগামী ৩ এপ্রিল ছুটি ঘোষণা করায় (২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত) টানা ৯ দিনের ছুটি (সাপ্তাহিক ছুটিসহ) পাবেন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

ঢাকা থেকে ভিসা দেবে অস্ট্রেলিয়া

বাংলাদেশিদের ভিসা দেবে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশন ঢাকা কার্যালয়। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টনি বার্ক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.

) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ফোনে এ কথা জানান। পরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই তথ্য জানান।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত বছরের অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বার্কের বাংলাদেশ সফরের সময় তাঁর কাছে এ অনুরোধ করেছিলেন। এর আগে বাংলাদেশিদের ভিসা ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে ইস্যু করত অস্ট্রেলিয়া।

চৈত্রসংক্রান্তিতে তিন জেলায় ছুটি

এ বছর চৈত্রসংক্রান্তিতে পার্বত্য খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে এক দিনের ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শফিকুল আলম বলেন, পহেলা বৈশাখের সরকারি ছুটি তো থাকবে। কিন্তু তিন পার্বত্য জেলায় ওই সময় বিজু, বৈসাবি ও সাংগ্রাই উৎসব পালিত হয়। এ কারণে নির্বাহী আদেশে তিন পার্বত্য জেলায় সাধারণ ছুটি ঘোষণার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি সাঁওতাল, গারো, খাসিয়া, জৈন্তাসহ সমতলের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠী এ ছুটির আওতায় থাকবে।

আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা নেবে চীন

প্রেস সচিব বলেন, চীন আমাদের এখান থেকে তিনটি কৃষি পণ্য খুব বড় আকারে আমদানি করতে চায়। এগুলো হচ্ছে আম, কাঁঠাল এবং পেয়ারা। আমরা আশা করছি, চীনে রপ্তানির একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। বাংলাদেশের আম চীনের নাগরিকরা পছন্দ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মাধ্যমে এর বাজার উন্মুক্ত হবে। কাঁঠালও পছন্দ করেন চীনারা। এটিও আমরা আশা করি, খুব বড় আকারে রপ্তানি করতে পারব। আমের মান নিশ্চিত করতে খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) আমাদের ৪০ লাখ ডলার দিচ্ছে।

প্রেস সচিব বলেন, মুহাম্মদ ইউনূস চাচ্ছেন চীনের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান যেন বাংলাদেশে এসে বিনিয়োগ করে। এ রকম হলে আমরা ঢাকাসহ বড় বড় শহরে তাদের সেবা পাব। এটার জন্য বিশেষ একটা প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। আমরা চাই, স্বাস্থ্যসেবা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় হোক। এটা প্রধান উপদেষ্টা আগেও আলোচনা করেছেন। এবারের সফরে সেটা অগ্রাধিকারে থাকবে।

ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। অন্তর্বর্তী সরকারের সাত মাসে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বেড়েছে। তবে ভিসা নিয়ে জটিলতা আছে, সেই বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলতে পারবে।

গতকালের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর। আবুল কালাম আজাদ জানান, আগামীকাল শনিবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বর ষ ট র র উপদ ষ ট সরক র গতক ল অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার ফুটপাতে চাঁদাবাজি সচল, কুশীলব বদল

গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর শূন্যের ঘরে নেমে এসেছিল রাজধানীর ফুটপাতের চাঁদাবাজি। সুসময় টেকেনি বেশি দিন। আবারও চাঁদাবাজরা ফিরেছে পুরোনো চেহারায়। আগের চেয়ে বরং ফুটপাত-রাজপথে বেড়েছে হকার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেড়েছে চাঁদার অঙ্ক। কোথাও কোথাও এসেছে নতুন চাঁদাবাজ।

অনেক এলাকায় আওয়ামী লীগের বদলে চাঁদাবাজের তালিকায় উঠেছে বিএনপি নেতাকর্মীর নাম। চাঁদাবাজির হোতা হিসেবে রাজধানীর দুয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামও সামনে আসছে। কোনো এলাকায় বদল হয়েছে লাইনম্যানের। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আগের চেয়ে অনেকটাই কম।

রাজধানীর ফুটপাত হকারমুক্ত করতে অতীতে কম চেষ্টা হয়নি। ২০১৬ সালের অক্টোবরে গুলিস্তানকে হকারমুক্ত করার অভিযানে নেমে নিজেই বিপাকে পড়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকন। তখন হকাররা উল্টো নগর ভবন ঘিরে হামলা চালান। এর পরই গতি হারায় হকার উচ্ছেদ কার্যক্রম। পরে ব্যারিস্টার তাপস মেয়র হলে রাস্তায় হকার ঠেকাতে লাল-হলুদ-সবুজ রঙে মার্কিং করে দেন। সেটাও কাজে দেয়নি। সর্বশেষ গণঅভ্যুত্থানের পর যৌথ বাহিনী কয়েক দিন ফুটপাত থেকে অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করলেও এখন আবার রকমারি পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন হকাররা।  

কত হকার কত চাঁদা
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের ৪৩০ কিলোমিটার রাস্তায় ৩ লাখেরও বেশি হকার ব্যবসা করেন। বছরে চাঁদাবাজি হয় প্রায় ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকার। এসব হকার প্রতিদিন ৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দিতে বাধ্য হন। ২০২০ সালে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রত্যেক হকারকে প্রতিদিন গড়ে ১৯২ টাকা করে চাঁদা গুনতে হয়।

ইমনের ইশারায় চলে নিউমার্কেট
রাজধানীর আজিমপুর, ইডেন কলেজ, নীলক্ষেত, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, এলিফ্যান্ট রোড, কাঁটাবনসহ আশপাশের এলাকার ফুটপাতের প্রায় ৭ থেকে ৮ হাজার দোকানের নিয়ন্ত্রণ এখন শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের হাতে। ৫ আগস্টের পর ইমন কারাগার থেকে বের হয়ে আড়ালে থেকে সবকিছু দেখভাল করছেন। এসব এলাকার কয়েকটি মার্কেটে নিজের লোকও বসিয়েছে এই সন্ত্রাসী। পুরোনো দোকানি উঠিয়ে নতুন দোকান বসাতে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ইমনের বিরুদ্ধে। আগে এসব এলাকায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ইব্রাহিম ইবু, নুর ইসলাম, সাত্তার মোল্লা, মনির, সৈয়দুর চৈয়্যা, কালা সিরাজ চাঁদা ওঠানোর দায়িত্বে ছিল।

৫ আগস্টের পর তাদের নিয়ন্ত্রকরা পালিয়ে গেলে আগের লাইনম্যানরাই রাজনৈতিক খোলস পাল্টে দায়িত্ব পালন করছে। সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করেন নিউমার্কেট থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কে এম চঞ্চল। এ ছাড়া কফি হাউসের গলি ও বাটা সিগন্যাল এলাকাও তাঁর নিয়ন্ত্রণে। নিউমার্কেট থানা যুবদল সভাপতি নিজাম বেপারি সায়েন্স ল্যাব ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। ঢাকা কলেজের সামনের ফুটপাত কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাগর, তারেক জামিল ও পারভেজের কবজায়। এ ছাড়া নীলক্ষেতের বই মার্কেট থেকে কাঁটাবনের গাউসুল আজম মার্কেটের সামনে পর্যন্ত জাহাঙ্গীর পাটোয়ারি নামে একজনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে তাদের অধিকাংশই নেতাই ইমনের হয়ে কাজ করছেন। 

ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন সমকালকে বলেন, ‘ইমনের ভয় দেখিয়ে প্রথমে দোকানের জন্য আমার কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে না পারায় আমাকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে নতুন দোকান বসানো হয়েছে।’ 

নীলক্ষেত মোড়ে কাপড়ের দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে আওয়ামী লীগের লোকদের চাঁদা দিতে হতো। এখন বিএনপির লোকদের চাঁদা দিতে হয়।’ কত টাকা দিতে হয় জানতে চাইলে তিনি জানান, তাকে মাসে ২ হাজার টাকা দিতে হয়। অন্যান্য দোকানিকেও ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়।
অভিযোগের বিষয়ে নিউমার্কেট থানা যুবদল সভাপতি নিজাম বেপারি বলেন, ‘নিউমার্কেট থানার ওসিসহ আমরা প্রতিটি দোকানে গিয়ে বলেছি, কেউ চাঁদাবাজি করতে এলে ধরিয়ে দিতে।’

যুবদল ও ছাত্রদল নেতা কে এম চঞ্চল, সাগর, তারেক জামিল ও পারভেজের সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করে সমকাল। তবে তাদের সবার ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় কথা বলা যায়নি। 

গুলিস্তানে বিএনপি নেতা
গোলাপ শাহ মাজারের সামনে থেকে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত লাইনম্যান ছিলেন যুবলীগের হান্নান। এখন নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। বঙ্গবাজার থেকে সিটি প্লাজা হয়ে গোলাপ শাহ মাজার পর্যন্ত তাঁর কবজায়। নতুন দোকান তুলে ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আহাদ পুলিশ ফাঁড়ির সামনে ‘লম্বা হারুন’ নামে একজন হকারের কাছ থেকে টাকা তোলেন। কাপ্তানবাজার কমপ্লেক্সের পশ্চিম-উত্তর ফুটপাতে  চাঁদা ওঠান সাবেক কাউন্সিলর আবুল বাশারের অনুসারী কাপ্তানবাজার ইউনিট বিএনপির সভাপতি নুর ইসলাম। সুন্দরবন মার্কেটের সামনে চাঁদা তোলেন মনির। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে টাকা তোলেন ছিন্নমূল হকার্স লীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ, খলিল, পোটন ও জিয়া। পূর্বগেটে স্থানীয় বিএনপি নেতা নবী।

পল্টন মোড়ের দু’পাশে হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি কবির আর দৈনিক বাংলা মোড়ে তোলেন কালা নুরা। স্বর্ণ মার্কেটের সামনে জিয়া ও আক্তার চাঁদা তোলেন। গুলিস্তানে জাসদ অফিসের সামনে ফুটপাতের হকার নিয়ন্ত্রক হিসেবে হকার সংগ্রাম পরিষদের কামাল সিদ্দিকী ও ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আবুল হোসাইনের নামও উঠে এসেছে। আগে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের অফিসের সামনের ফুটপাতে দোকান বসত না। ৫ আগস্টের পর জায়গাটিও হকারের দখলে। এখান থেকে চাঁদা তোলেন ইউনিট বিএনপির সভাপতি সেলিম। পূর্বানী হোটেলের সামনের ফুটপাতে ৫ আগস্টের পর থেকে সময় অনুযায়ী তিন বেলা তিনটি গ্রুপ চাঁদা তোলে। সেখানকার নিয়ন্ত্রক স্থানীয় বিএনপি নেতা খোরশেদ ও সেলিম। খদ্দের মার্কেটের সামনের ফুটপাত কাদের ও আলী মিয়ার হাতে। ওয়ার্কার্স পার্টির ঢাকা মহানগরীর সভাপতি আবুল হোসাইন সমকালকে বলেন, ‘এখানে সম্ভবত কোনো ভুল হচ্ছে। আমি আর ওই ব্যক্তি এক না।’

ফুটপাতে চাঁদাবাজির ব্যাপারে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান সমকালকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আমার শত্রুরা কুৎসা রটাচ্ছে।’

অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সমকাল।

ফার্মগেট সুইডেন আসলামের
ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হল থেকে তেজগাঁও কলেজ পর্যন্ত প্রায় তিন থেকে চার হাজার হকার প্রতিদিন বসে। আগে শুধু ফুটপাতে দোকান থাকলেও এখন মূল সড়কেও দু’সারিতে বসেছে দোকান। ফার্মগেটে আগে ডিএনসিসির ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান খান ইরান এ এলাকার চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক ছিলেন। তাঁর হয়ে ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নজরুল ও শাহা আলম দৈনিক ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত টাকা ওঠাতো। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে এই নিয়ন্ত্রণ এখন সাবেক কাউন্সিলর ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সমন্বয়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার আর শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলামের হাতে।

৫ আগস্টের পর কারাগার থেকে বেরিয়ে ফার্মগেটের মাহবুব প্লাজা, সেজান পয়েন্টসহ আশপাশের মার্কেট দখলে নেন এ সুইডেন আসলাম ওরফে বড় মিয়া। ফার্মগেটের ইরানের আধিপত্য এখন সুইডেনের হাতে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না। ফুটপাত, টেম্পুস্ট্যান্ড ও রিকশা গ্যারেজের থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ কাউন্সিলর আনোয়ারের নেতাকর্মী এবং সুইডেন বাহিনীর দিকে। তাদের হয়ে আশপাশের মার্কেট, স্ট্যান্ড ও ফুটপাতে চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব দেন কিলার মাসুদ, সজীব খান, ইলিয়াস ও রাজ মিয়া। এ ছাড়া তেজগাঁও কলেজ ছাত্রদলের নাম করে কয়েকজন সড়কের ওপরের দোকান থেকে চাঁদা ওঠায়। হকার কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। কাপড় দোকানি তামিম বলেন, ‘আমি নতুন দোকান দিয়েছি। আব্দুল্লাহ ভাই দোকান বসানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পর আমরা ডিএমপি কমিশনারের কাছ থেকে এই এলাকার ফুটপাতে দোকান বসানোর একটা নকশা নিয়ে আসি। কথা ছিল এখানে শুধু পুরোনো ব্যবসায়ী আর দরিদ্র লোকজন দোকান করবে। তবে সুইডেন আসলাম ও বিএনপির লোকজনের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি।’ এ ব্যাপারে আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার বলেন, ‘দখল ও ফুটপাতের বাণিজ্যের সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমাকে ফাঁসানোর জন্য কুৎসা রটাচ্ছে প্রতিপক্ষ। আমার কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ অভিযোগের বিষয়ে চেষ্টা করেও সুইডেন আসলামের সঙ্গে কথা বলতে পারেনি সমকাল।

ফেন্সি নাসিরের মতিঝিল
মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাত শীর্ষ সন্ত্রাসী নাসির উদ্দিন ওরফে ফেন্সি নাসিরের কবজায়। ২০২৩ সালে এ সন্ত্রাসী দেশে ফেরার পর থেকেই মতিঝিল ব্যাংকপাড়ার ফুটপাতের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ নেন। গণঅভ্যুত্থানের পর শুধু লাইনম্যানের বদল হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে আরামবাগ হয়ে পীর জঙ্গি মাজার পর্যন্ত ফুটপাত থেকে দোকান ভেদে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সোহেল ও রতন। তাদের দু’জনকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন শ্রমিক দল নেতা সবুজ। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ওয়াসার পানির পাম্প পর্যন্ত দুই সারিতে ৫ শতাধিক দোকানের ১০০ থেকে ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন চাঁদা তোলেন হকার্স লীগের সভাপতি হারুন ও আসিফের লোকজন। রূপালী ব্যাংক থেকে বঙ্গভবন পর্যন্ত সহস্রাধিক মাছ, মাংস আর সবজির দোকান থেকে টাকা তোলেন তাইজুল ইসলাম তাজু ও তাঁর ছেলে বাবলু। আগে নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিচয় দিলেও এখন বিএনপি কর্মী পরিচয় দেন। পূবালী ব্যাংক থেকে বক চত্বর পর্যন্ত লাইনম্যানের দায়িত্বে নুরুল ইসলাম, মান্নান ও জুয়েল। শাপলা চত্বর থেকে সোনালী ব্যাংক-জনতা ব্যাংক-ইত্তেফাক মোড় পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার দোকানের চাঁদা তোলেন মকবুল।

পূবালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাতের কাপড়ের দোকানদার পলাশ বলেন, ‘এখন ফুটপাতে দোকান দিতে অনেক কড়াকড়ি। লাইনম্যান নাই, আমরাই সব। পুলিশকেও ম্যানেজ করতে হয়। ডিএমপি কমিশনারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোস্তাফিজের মাধ্যমে ফুটপাতে দোকান বসানোর অনুমতি নিয়েছি।’

তবে ডিএমপি কমিশনারের স্টাফ অফিসার জুয়েল ইমরান বলেন, ‘এই নামে ডিএমপি কমিশনারের অফিসে কেউ নেই। আর যে অভিযোগ, সেটাও সত্য নয়।’
তবে পাশের কয়েকজন কাপড় দোকানি বলেন, ‘মতিঝিলের ফুটপাতে নাসির ভাই সব। মাঝখানে শুধু লাইনম্যান বদল হয়েছে। তাঁর লোকজন প্রতি সপ্তাহে এসে টাকা তোলে। শাপলা চত্বরের আশপাশে হারুন, আসিফ, তাইজুলরা টাকা তোলে। তবে টাকার ভাগ পান নাসির।’

মতিঝিল ব্যাংকপাড়ায় তিন দিন ঘুরেও সন্ত্রাসী ফেন্সি নাসিরকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোন নম্বরেও যোগাযোগ করতে পারেনি সমকাল।

মিরপুরে সমবায় সমিতির নামে চাঁদাবাজি
রাজধানীর মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় হকার বহুমুখী সমবায় সমিতির নামে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা তোলা হয়। হকারের একটি সমিতির বইও দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্টের পর। সেখানে দেখা যায়, বইয়ে ঠিকানা হিসেবে সেনপাড়ার শতাব্দী টাওয়ার উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কোনো হোল্ডিং নম্বর নেই, একটি ফোন নম্বর দেওয়া আছে। হকারের অভিযোগ, বিএনপি নেতা তারেক, বাদশাসহ আরও কয়েকজন লাইনম্যানের মাধ্যমে এই চাঁদা তোলা হয়। তারেক সমকালের কাছে দাবি করেন, তিনি চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। এগুলো হকাররা মিথ্যা কথা বলছে। এ ছাড়া মিরপুর ১ নম্বর ফুটপাত থেকে কবির, হান্নান, হানিফ, খলিল, স্টেডিয়াম থেকে শাহ আলিম প্রতিদিন সহস্রাধিক দোকান থেকে ১০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলেন। গাবতলী টার্মিনালের ভেতর-বাইরের ফুটপাতের নিয়ন্ত্রক আক্তার।

সদরঘাটের সাম্রাজ্য ফিরোজের
সদরঘাট থেকে রায়সাহেব বাজার মোড় আর ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সোহরাওয়ার্দী কলেজ পর্যন্ত সবজি, ফাস্টফুড, জামা-কাপড়, জুতাসহ নিত্যপণ্যের প্রায় তিন হাজার দোকান আছে। এসব দোকান থেকে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা ওঠে। লাইনম্যান ফিরোজ আগে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আশ্রয়ে থাকলেও গণঅভ্যুত্থানের পর এখন স্থানীয় বিএনপি ও কলেজ ছাত্রদল নেতাদের প্রশ্রয়ে চাঁদাবাজি করেন। লক্ষ্মীবাজারে ফুটপাতে সবজির দোকানি রিপন মিয়া বলেন, ‘ভাবছিলাম অভ্যুত্থানের পর ফুটপাতে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। এখনও ফিরোজ মিয়ার লোকজন প্রতিদিন টাকা তোলে।’ তবে সমকালকে ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘আমি এখন আর টাকা তুলি না। এখন কে তোলে সেটাও জানি না।’ 

মোহাম্মদপুরের ফুটপাত পিচ্চি হেলালের কবজায়
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলালের হাতে মোহাম্মদপুরের ফুটপাত। মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ আর আদাবরে পিচ্চি হেলালের হয়ে চাঁদাবাজি করেন শফিক, টাউন হলের সামনে আলাউদ্দিন, বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ডের সামনে হাবীব, কলেজ গেটে হাসেম, লালমাটিয়ায় আনোয়ার ও দুলাল ফুটপাত থেকে চাঁদার টাকা তোলেন। প্রতিদিন চাঁদার পরিমাণ ১০০ থেকে হাজার টাকা।

এ ছাড়া শেরেবাংলা নগরে হাসপাতালপাড়া থেকে চাঁদা তুলতে লাইনম্যানের কাজ করেন আব্দুস সাত্তার, রফিক ও হাসেম।  মহাখালী কাঁচাবাজারে ছিন্নমূল হকার্স লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হাসেম চাঁদা তোলেন। আর কাঁচাবাজারের দক্ষিণ থেকে যক্ষ্মা হাসপাতাল পর্যন্ত সড়কের দু’পাশ থেকে আব্দুল হোসাইন, জুয়েল, আক্তার ও মনির চাঁদা তোলেন। যাত্রাবাড়ী থেকে পোস্তগোলা সেতু পর্যন্ত ২ হাজার দোকানে টাকা তোলেন সোহরাব আলী আর সোনা মিয়া। জুরাইন থেকে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার পর্যন্ত চাঁদা তোলেন ফারুক। 

কারা কী বলছেন
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম সমকালকে বলেন, ‘ফুটপাত মানেই টাকার খেলা। যেখানেই হকার, সেখানেই আছে লাইনম্যান-চাঁদাবাজ। আর লাইনম্যানদের অধিকাংশই পুলিশের সোর্স। গণঅভ্যুত্থানের পরও এই ধারা পাল্টাইনি। লাইনম্যান আগের জনই আছেন, শুধু রাজনৈতিক শক্তির বদল হয়েছে।’
বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল হাসিম কবির সমকালকে বলেন, ‘অভ্যুত্থানের পরও ফুটপাতে যে যার মতো করে নতুন দোকান বসাচ্ছে। আগের চেয়েও দোকানের সংখ্যা বেড়েছে। আর এতে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করছে আরেকটা পক্ষ।’

এসব বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবি সমকালকে বলেন, ‘আমাদের দু’জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতই অন্যান্য অভিযানের সঙ্গে ফুটপাত হকারমুক্ত করছে।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ সমকালকে বলেন, ‘ফুটপাতের দোকানের এখন কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যার মতো করে দোকান বসাচ্ছে। আগে পুলিশের সঙ্গে মিলেমিশে চাঁদাবাজি করলেও এখন পুলিশও ভাগ পায় না। আমরা সড়ক, ফুটপাত দখলমুক্ত করছি। কিন্তু পুলিশের তেমন সহযোগিতা না পেলে কার্যকর করা যাচ্ছে না। ঈদের পর জোরদার অভিযান চালানো হবে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সমকালকে বলেন, ‘ফুটপাতে একদিকে উচ্ছেদ করলে তারা আরেকদিকে দোকান বসায়। এ ক্ষেত্রে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদে পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সবার সমন্বয় প্রয়োজন। ফুটপাতে চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। করপোরেশন পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। আমরা চাই, সড়ক পরিষ্কার রাখতে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ হোক।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ