সব মামলা থেকেই খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান তিনি। এর মধ্য দিয়ে তাঁর দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন। 

বিচারিক আদালতে সব মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর তিনি কবে দেশে ফিরছেন– এ নিয়েও নানা মহলে গুঞ্জন চলছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দেশে ফেরার বিষয়ে তারেক রহমানই সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি দেশে ফিরতে উন্মুখ হয়ে আছেন।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান গত ৭ জানুয়ারি। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন।

খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘তিনি আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ আছেন, এপ্রিলের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরতে পারেন। তবে ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দুয়েক দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে তিনি দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।’

গত বুধবার খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের এম এ মালেক বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম লন্ডনে ঈদ করে দেশে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফেরার বিষয়টি মাথায় রেখে চিকিৎসকরা তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।’  

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশে ফেরার কিছুদিন পর তারেক রহমানও দেশে ফিরবেন। তবে সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি। একসঙ্গে দুজন অবশ্যই যাবেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি।’ 

জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন সমকালকে বলেন, ‘বিচারিক আদালতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। সব মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন বা নিষ্পত্তি হয়েছে। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন, নিজেই সেটা দেশবাসীকে জানাবেন।’ 

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় তারেকের প্রত্যাবর্তন এখন দলটির নেতাকর্মীর কাছে বহুল প্রত্যাশিত। এ সময়টাতেই সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। 

এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘তারেক রহমান যে কোনো সময় ফিরে আসতে পারেন। তাঁর নিরাপত্তার বিষয়সহ সবকিছু বিবেচনা করে তিনি দেশে ফিরবেন। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী তাঁর দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। আগামী দিনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে তারেক রহমানের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ হবে, সেটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।’

সাব্বির হত্যা মামলায় তারেকসহ ৮ জন খালাস
এদিকে বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যায় দায়মুক্তির জন্য ঘুষ নেওয়ার অপরাধে করা মামলায় গতকাল তারেক রহমানসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ ৩-এর বিচারক আবু তাহের এ রায় দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তারেক রহমানের সাবেক পিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান ও সাদাত সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল। এর মাধ্যমে বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।

তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘এটি একটি হোপলেস মামলা। অন্যায়ভাবে এ মামলায় তারেক রহমানসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছিল। তখনকার সময় কারও অন্যায় ইচ্ছা-অভিলাষ পূরণের জন্য এ মামলা হয়েছে। প্রসিকিউশন এ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক-এগারোর মঈন ইউ আহমেদের সময় রাজনীতিবিদদের বিভাজিত করার চেষ্টা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলার মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে সব মামলা শেষ হয়েছে। তাঁর আর কোনো মামলা নেই।’

বিএনপির আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, আসামিদের বিপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। তাঁর বিরুদ্ধে দেশে আর কোনো মামলা নেই। ফলে তাঁর দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই।

২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির খুনের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। ওই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক আবুল কাসেম রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতির মামলা করেন। মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেকসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন ত র ক রহম ন র ব এনপ র আইনজ ব র জন য আর ক ন র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

কক্সবাজারে সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার শুরু

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডাকাতি প্রতিরোধে যৌথবাহিনীর অভিযানের সময় ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) হত্যার বিচার শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদের আদালতে মামলার বাদী সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবদুল্লাহ আল হারুনর রশীদের সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) বেদারুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম-৪, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ও অ্যাডভোকেট তৌহিদুল এহেসান বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু এবং পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী অ্যাডভোকেট দীলিপ কুমার ধর বাদীকে আংশিক জেরা করেন।

এদিন ১৮ আসামির মধ্যে ১২ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

আদালতে উপস্থিত ১২ আসামিরা হলেন- জালাল উদ্দিন (বাবুল), মো. হেলাল উদ্দিন, মো. আরিফ উল্লাহ, আনোয়ার হাকিম, মো. জিয়াবুল করিম, মো. ইসমাইল হোসেন (হোসেন), নুরুল আমিন (আমিন), মো. নাছির উদ্দিন, মো. ছাদেক, মো. এনাম, এনামুল হক (তোতা এনাম) ও মো. কামাল (বিন্ডি কামাল)।

পলাতক ৬ আসামি হলেন- আবদুল করিম (করিম), আনোয়ারুল ইসলাম (আনোয়ার), মোর্শেদ আলম, শাহ আলম, আবু হানিফ ও মিনহাজ উদ্দিন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালতের বেঞ্চ সহকারী দেলোয়ার হোসাইন জানান, চার্জ গঠনের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। আগামী ২৫ মার্চ বাদীকে অবশিষ্ট জেরা ও অন্যান্য সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। 

২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ভোররাতে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়ায় মাছ ব্যবসায়ী রেজাউল করিমের বাড়িতে ডাকাতির সময় সেনা কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন ছুরিকাঘাতে নিহত হন।

এ ঘটনায় যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থল থেকে তিন ডাকাতকে আটক এবং তাদের ফেলে যাওয়া একটি দেশীয় বন্দুক ও ছয়টি গুলি উদ্ধার করে। সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় ডাকাতির প্রস্তুতি, হত্যা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়।

২০২৫ সালের ১১ মার্চ কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার ১৮ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। তার আগে, ১৯ জানুয়ারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চকরিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) অরূপ কুমার চৌধুরী আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন।

ঢাকা/তারেকুর/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান এক্সের মামলা, অভিযোগ তথ্য নিয়ন্ত্রণের  
  • ২১ কোটি টাকা ঘুষের মামলা থেকে খালাস পেলেন তারেক রহমান
  • ভুক্তভোগীর চরিত্রগত সাক্ষ্য নিষিদ্ধের দাবি
  • বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’, দাবি টিউলিপের
  • বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ‘মিথ্যা’, বললেন টিউলিপ
  • জামায়াত আমিরের সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ
  • কোহলির সঙ্গে যুব বিশ্বকাপ জেতা তন্ময় এখন আইপিএলের আম্পায়ার
  • ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ স্থগিত
  • কক্সবাজারে সেনা কর্মকর্তা তানজিম হত্যার বিচার শুরু