Prothomalo:
2025-03-21@13:49:12 GMT

পাকিস্তান কি এইভাবে পারবে

Published: 21st, March 2025 GMT

বিদ্রোহের শিকড় দেখতে না পাওয়া, ‘সন্ত্রাসবাদী’ লেবেল লাগানো এবং প্রতিবেশী দেশের ওপর দোষ চাপানো কোনো দিনই কার্যকর কৌশল হবে না।

মার্চ ১১ তারিখে, বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছিনতাই করে। ৩৬ ঘণ্টার অবরোধের পর পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী বিএলএর যোদ্ধাদের হত্যা করে। শতাধিক অপহৃত যাত্রী মুক্তি পান। সরকারের মতে, অপারেশনের সময় কমপক্ষে আটজন সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন। পাকিস্তানি কর্মকর্তারা একটুও দেরি না করে আফগানিস্তান বা ভারতের ওপর দায় চাপিয়ে একে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ হিসেবে আখ্যা দেন।

এই রকম ঘটনাগুলোকে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিজের দায় এড়িয়ে সোজা সন্ত্রাসবাদ হিসেবে তকমা দিয়ে দেন। এই ঘটনা নতুন কিছু নয়। বেলুচিস্তানে ট্রেন ছিনতাই করবার বিষয়ে কোনো ব্যতিক্রম হয়নি।

ট্রেন হাইজ্যাকিংয়ের প্রায় তিন মাস আগে, পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান আফগানিস্তানের খোস্ত ও পাকতিকা প্রদেশে বোমা হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৬ জনকে হত্যা করে। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে নারী ও শিশু ছিল। অনেক নিহত ব্যক্তি ছিল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া অঞ্চলের শরণার্থী।

আফগান সার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে পাকিস্তান দাবি করে যে তারা আফগান ভূখণ্ডে অবস্থানরত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি) যোদ্ধাদের টার্গেট করছে। গত দুই বছর ইসলামাবাদ কাবুলকে পাকিস্তানে হামলা চালানো ‘সন্ত্রাসী’দের আশ্রয়দাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে আসছে।

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান কেন স্বাধীন হতে চায়১৪ মার্চ ২০২৫

এই একই যুক্তি যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’ চলাকালে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আক্রমণ, অপহরণ, লক্ষ্যভিত্তিক হত্যা ইত্যাদি চালাতে ব্যবহার করেছিল। এই প্রক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সব চুক্তি ও নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন করেছিল। তারা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করেছে, বেসামরিক নাগরিক ও যোদ্ধাদের মধ্যে কোনো পার্থক্য করেনি, যুদ্ধবন্দীদের যে অধিকার, তা–ও বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা করেনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দারা বড় কোনো লক্ষ্য অর্জনের সময় বেসামরিক নাগরিকদের সক্রিয় যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করত। সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর আক্রমণে পুরো দেশ এবং সাধারণ জনগণ মূল্য চুকিয়েছে। এখনো তা চুকাচ্ছে। কারণ, আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলেও, তাদের কার্যকলাপের উত্তরাধিকার এখনো বিদ্যমান।

পাকিস্তান সরকারকে এসব গোষ্ঠীর কথা শুনতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ বের করতে হবে। যে সব অঞ্চলে বিএলএ ও টিটিপি সক্রিয়, সেখানে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা স্বীকার করতে হবে।

আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ২০ বছরব্যাপী দখলদারত্বের সময় পাকিস্তান আফগান তালিবানকে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে দেখেনি। তারা তালিবানদের আশ্রয় এবং সমর্থন অব্যাহত রেখেছিল। কিন্তু আজকাল পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ টিটিপি এবং বিএলএকে ‘সন্ত্রাসী’ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। বলে যে আফগান তালিবান সরকার ‘সন্ত্রাসবাদের’ পৃষ্ঠপোষক।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিকভাবে যুক্তিসঙ্গত আলোচনা করার উপযুক্ত বিবেচনা করতে অস্বীকার করে। তাদের দাবি ও অভিযোগ শোনা উচিত, এমনটাও মনে করে না।

যে উপায়ে পাকিস্তান এই গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করবে, তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কার্যকলাপ থেকে কিছু শিক্ষা নেওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্র ‘সন্ত্রাসবাদ’ শব্দের ব্যাখ্যা এতটাই বিস্তৃত করেছিল যে দেশ-বিদেশের মুসলিমদের সন্দেহের চোখে দেখা হতো। আফগানিস্তানে তারা আল-কায়েদা, তালিবান এবং কখনো কখনো সাধারণ আফগান নাগরিকদের শত্রু হিসেবে দেখত।

অভিযুক্ত তালিবান সদস্যদের কারাবন্দী করা এবং তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর ফলে তালিবান যোদ্ধাদের উগ্রতাই কেবল বেড়েছে। সহিংসতা হয়েছে আরও তীব্র। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের বেসামরিক এলাকাগুলোতে নির্বিচারে ড্রোন হামলা চালানো কেবল সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনই করেনি, বরং অনেক তরুণকে আফগান তালিবান ও টিটিপিতে যোগ দিতে উৎসাহিত করেছে।

তালিবান বহুবার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোনো ফল হয়নি। অবশেষে ২০২১ সালে, ২০ বছরের যুদ্ধ ও দখলদারত্বে ক্লান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। একে কার্যত তাদের পরাজয় মেনে নেওয়া ছাড়া আর কী বলা যায়!

আরও পড়ুনবেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি কারা, তাদের জন্ম কীভাবে?১৬ মার্চ ২০২৫

একটি আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে বাতিল করে দেওয়া সহজ। তখন তা সমাধানের আর কোনো পথও বাকি থাকে না। চলতে থাকে কেবল সহিংসতা। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা দেখায়, এই পথ শেষ পর্যন্ত সফল হয় না।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। তারা টিটিপি ও বিএলএর ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার ভান করতে পারে না। কারণ, এই গোষ্ঠীগুলো তাদেরই দেশের মানুষ। তাদের স্পষ্ট অভিযোগ ও দাবি আছে।

পাকিস্তান সরকারকে এসব গোষ্ঠীর কথা শুনতে হবে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পথ বের করতে হবে। যে সব অঞ্চলে বিএলএ ও টিটিপি সক্রিয়, সেখানে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা স্বীকার করতে হবে। পাশাপাশি, আফগানিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। নিজেদের নিরাপত্তা ব্যর্থতার জন্য তালিবান সরকারকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

যদি পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের পথ অনুসরণ করে, তাহলে তাদের ভাগ্যেও একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি হবে।

ওবায়দুল্লাহ বাহির আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন আফগানিস্তানের প্রভাষক

আল জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির অনুবাদ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ন সরক র কর ছ ল র করত

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় গণধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষ

খুলনা নগরীর শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত সরকারি একটি ভবনের দখল এবং দখলদার উচ্ছেদ নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে সংঘাতে জড়িয়েছে খুলনার গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত গণঅধিকার পরিষদের কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি ওই ভবনে পঞ্চবিথী ক্রীড়া চক্র নামে একটি ক্লাব ছিল। সেখানে জুয়া, মাদক বিক্রিসহ নানা অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়- এমন অভিযোগে গত ২৭ জানুয়ারি পঞ্চবীথির সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সেখানে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানার টানান নেতাকর্মীরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশিদুল ইসলাম রাশেদ। তিনি এস কে রাশেদ নামে পরিচিত। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে রাতেই এস কে রাশেদকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু অব্যাহতির পরও এস কে রাশেদ ওই ভবনে বসে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।

মঙ্গলবার রাতে ওই ভবনের দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে বার্তা ছড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির খুলনার নেতাকর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ভবনে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বালুমহাল ইজারার দরপত্র দাখিল নিয়ে সংঘর্ষ

গোপালগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি  জানান, খুলনার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চবিথী ক্লাব, যা ছিল এলাকার সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে গণঅধিকার পরিষদের নামে কিছু চাঁদাবাজ ও দখলদার গোষ্ঠী এটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। তারা ক্লাবকে নিজেদের আস্তানায় পরিণত করে স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছিল। এলাকাবাসী বারবার প্রতিবাদ জানালেও চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য থামেনি। কিন্তু অবশেষে সাহসী ছাত্রজনতা দখলদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাব দখলমুক্ত করতে গেলে তারা স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি প্রশাসন সেখানে যাওয়ার পরও পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের ভাড়াটে গুন্ডাদের ডেকে এনে ছাত্রজনতার ওপর কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০-১২ জন আহত হন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলেন, ‘‘খুলনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের পরিষ্কার কথা, প্রশাসন দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা এর সমুচিত জবাব দিবে।’’

এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। ফলে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে পঞ্চবিথি ভবন নামে পরিচিত সরকারি বাড়িটি গণপূর্ত বিভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কোনো পক্ষই ওই ভবনে অবস্থান করতে পারবে না। ভবনটি পুলিশের হেফাজতে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবারও নেতজারিম করিডোরের নিয়ন্ত্রণ নিল ইসরায়েল
  • গাজায় হামলা অব্যাহত আলোচনা চায় হামাস
  • ৪৮ ঘণ্টায় ৯৭০ ফিলিস্তিনির প্রাণ কাড়ল দখলদার বাহিনী
  • খুলনায় গণধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে সংঘর্ষ
  • ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার ডি-ফ্যাক্টো প্রধানমন্ত্রী নিহত