যদিও শেষ দশক বলা হয়, তবে পাঠকের এটা অবিদিত নয় যে, এই দশক মানে পূর্ণ দশদিন দশ রাত নয় চান্দ্রমাসের হিসেবে মাস উনত্রিশ দিনে হলে নয় দিনও হতে পারে। বিশ রমজান দিবাগত রাত থেকে শেষ দশকের সূচনা হয়। একে অনেকেই ‘নাজাতের রাত’ বলে অভিহিত করে থাকেন। একটি দুর্বল সনদের হাদিসে রয়েছে রমজানের প্রথম দশদিন রহমত, দ্বিতীয় দশদিন মাগফিরাত এবং তৃতীয় দশদিন নাজাতের উপহার প্রদান করা হয়ে থাকে। শেষ দশকে নবীজির (সা.

) ইবাদতের পরিমাণ বেড়ে যেত, তিনি কখনো এসব রাত জাগরণ ছাড়া কাটাননি।

ইবাদতে বেশি শ্রম দেওয়া

রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফের ‘অবকাশ’ যাপন করতেন নবীজি (সা.)। তিনি রাতের ইবাদতে অত্যধিক শ্রম দিতেন, যা অন্য সময় দেখা যেত না। রমজান মাসের শেষ দশকে নবীজি (সা.) এত বেশি ইবাদত করেছেন যা অন্য সময়ে করেননি। ( মুসলিম, হাদিস: ১১৭৫)

আরেকটি হাদিসে আছে, রমজানে লোকেরা মসজিদে নামাজ আদায় করত...(দীর্ঘ হাদিসের একাংশে আছে, তিনি সকলকে সম্বোধন করে এরশাদ করেন, ‘লোক সকল, আল-হামদুলিল্লাহ, আজ রাত আমি গাফিলতি যাপন করি নি। এবং তোমাদের অবস্থানও আমার অবিদিত নয়।’ (আবু দাউদ: ১,৩৭৪)

আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫

পূর্ণ রাত্রি জাগরণ

রমজানের শেষ দশক আসলে নবীজি (সা.) পরনের কাপড় শক্ত করে বেঁধে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। পরিবারের সকলকে তিনি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি করার জন্য জাগিয়ে দিতেন। (বুখারি, হাদিস: ২০২৪)

‘লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন’ কথাটির অর্থ হলো তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন। মুসলিমের অভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে, রমজানের শেষ দশদিনে নবীজি (সা.) কোমর বেঁধে ইবাদতে আত্মনিয়োগ করতেন। নিজে জাগতেন এবং পরিবারের লোকজনকেও জাগিয়ে তুলতেন। (বুখারি, হাদিস: ২,০২৪, মুসলিম, হাদিস: ১,১৭৪)

আবু যর (রা.) কাছ থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদিসে রাত্রিজাগরণের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়:

‘আমরা রাসুলের সঙ্গে রমজানে সিয়াম পালন করেছি, সাত দিবস অবশিষ্ট থাকা অবধি তিনি আমাদের নিয়ে রাত্রি জাগরণ করলেন না। (সপ্তম রাত্রিতে) তিনি আমাদের নিয়ে রাতের এক-তৃতীয়াংশ অবধি রাত জাগরণ করলেন। ষষ্ঠ রাত্রিতে তিনি আমাদের নিয়ে রাত যাপন করলেন না। পঞ্চম রাত্রিতে তিনি অর্ধ রাত্রি অবধি নামাজে কাটালেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, পুরো রাতই যদি আপনি আমাদের নিয়ে নফল আদায় করতেন! আবু যর বলেন, রাসুল বললেন, ইমাম প্রস্থান করা অবধি যে ব্যক্তি তার নামাজ আদায় করে, তার জন্য পুরো রাত যাপনের সওয়াব লিখে দেওয়া হয়। অতঃপর চতুর্থ রাত্রিতে তিনি আমাদের নিয়ে যাপন করলেন না। তৃতীয় রাত্রিতে তিনি তার পরিবার-পরিজন, স্ত্রীগণ ও লোকদের সবাইকে একত্র করলেন এবং আমাদের নিয়ে এতটা সময় রাত্রি জাগরণ করলেন যে সাহরির সময় অতিক্রান্তের ভয় হল। (আবু দাউদ: ১৩,৭৭০)

হাদিস বিশারদেরা বলেন, ‘শেষ দশ দিনে রাত্রি জাগরণ করা’টা প্রমাণ করে, প্রথম বিশ দিন রাসুল পূর্ণ রাত্রি জাগরণ করতেন না—কিছু সময় ইবাদত করতেন, কিছু সময় ঘুমাতেন। কিন্তু শেষ দশ দিনে তিনি, বিছানায়ও যেতেন না। রাতের পুরোভাগেই ইবাদত করতেন।

আরও পড়ুন  যেমন ছিল মহানবীর (সা.) সাহরি১১ মার্চ ২০২৫

লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান

লাইলাতুল কদর নামের এ দশ দিনের মধ্যে রয়েছে বলে বহু হাদিসে প্রমাণ পাওয়া যায়। সুতরাং শেষ দশকে কঠোর পরিশ্রম ও রাত্রিজাগরণের অন্যতম কারণ যে ছিল ‘কদর’ অনুসন্ধান, তা তিনি বিভিন্ন সময় বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন।

ইতিকাফের আমল

এই দশদিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, নবীজি (সা.) এ-সময় মসজিদে ইতিকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। ইবনে ওমর রা. বলেন, নবীজি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। (মুসলিম, হাদিস: ১,১৭২)

আরও পড়ুনসাহরির যে ৭টি বিধান মনে রাখা জরুরি১২ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ন য় র শ ষ দশক পর ব র দশ দ ন করত ন করল ন

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকের বাজনা ও ‘এসো হে বৈশাখ’ গেয়ে নতুন বছরকে বরণ

চুয়াডাঙ্গায় বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়া হয়েছে। ৪০ বছরের ধারাবাহিকতায় আজ সোমবার সকাল ৬টায় শহরের ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় চত্বরে ঢাকের বাজনার তালে নববর্ষের অনুষ্ঠান শুরু হয়।

পরে মুকুল ফৌজ, আবৃত্তি পর্ষদ ও ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান, মুকুল ফৌজের সংগঠক (প্রধান দরদী বোন) রাশেদা হাসনু আরা ও ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল আটটায় স্থানীয় চাঁদমারী মাঠে (ভিক্টোরিয়া জুবিলি উচ্চবিদ্যালয় মাঠ) হাজারো কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এরপর ‘এসো হে বৈশাখ’ গান পরিবেশনের মধ্য দিয়ে নববর্ষকে বরণ করা হয়। সোয়া আটটায় সেখান থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ ও বিভিন্ন সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যরা বর্ণিল সাজে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।

এরপর জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন মুক্তমঞ্চ চত্বরে তিন দিনের বৈশাখী মেলার উদ্বোধন করা হয়। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলাসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চুয়াডাঙ্গা শহরের চাঁদমারী মাঠ থেকে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আজ সকালে নববর্ষের শোভাযাত্রা বের করা হয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ