শেখ হাসিনা ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত: শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন
Published: 20th, March 2025 GMT
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, জুলাই গণহত্যায় জড়িত শেখ হাসিনা এখন ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত। এটাই প্রকৃতির সুনির্দিষ্ট গন্তব্য। কোনো অমোঘ ঐতিহাসিক ‘নিয়ম’ মানুষকে সৃষ্টি করে না। ছাত্র-জনতা জুলাই গণহত্যা প্রতিরোধে যে বীরত্ব ও অসম সাহসিকতা প্রদর্শন করে ফ্যাসিবাদের আইকনকে উচ্ছেদ করেছে, তাতে আরেকবার প্রমাণ হয়েছে- মানুষই ইতিহাস সৃষ্টি করে, ইতিহাস মানুষকে সৃষ্টি করে না।
বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জেএসডি আয়োজিত ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আগামীর বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশ হবে সকলের বাংলাদেশ। কোনো বিশেষ গোষ্ঠী নিজ অধিকারের জোরে অন্য কোনো গোষ্ঠীর অধিকারকে আত্মসাৎ করতে পারবে না। সকলের অংশীদারিত্বমূলক রাজনীতি ও রাজনৈতিক বন্দোবস্ত রাষ্ট্রীয় এবং সমাজ জীবনে এক গণজোয়ার সৃষ্টি করবে, যা দলকেন্দ্রিক নিষ্ঠুর ও নির্মম রাজনীতিকে চিরতরে উচ্ছেদ করবে। এ লক্ষ্যেই জেএসডি অংশগ্রহণমূলক বা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার দাবি উত্থাপন করছে। এটাই একমাত্র বিকল্প রাজনৈতিক মডেল।
আলোচনা সভায় জেএসডির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, জুলাই গণহত্যায় শেখ হাসিনার স্বরূপ প্রকাশিত হয়ে গেছে। অবৈধ ক্ষমতাকে শুধুমাত্র দীর্ঘায়িত করতে কয়েক হাজার মানুষ হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা এখন দেশবাসীর কাছে ক্ষমার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ এর আহবায়ক আবদুল মান্নান মুন্সি। যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ মোস্তাকের সঞ্চালনায় পুরাতন ঢাকার নবাববাড়ি পুকুরপাড়ে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, বীর মুক্তিযুদ্ধের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট সৈয়দ বেলায়েত হোসেন বেলাল, মোশারেফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম সামছুল আলম নিক্সন, দপ্তর সম্পাদক কামরুল আহসান অপু,মোহাম্মদ শামিম, ছাত্রনেতা মোসলেহ উদ্দিন বিজয় প্রমুখ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত র জন ত ক জ এসড
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন মামলায় গতি পুরোনোতে স্থবির
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও তদন্ত কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। ফলে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দেড় শতাধিক আসামি বিনা বিচারে কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন।
অন্যদিকে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের মামলার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন বিভাগ এখন পর্যন্ত ৩৪১টি অভিযোগ পেয়েছে। তদন্ত সংস্থা জড়িত তিন শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৪০ মামলার তদন্ত করছে।
অবশ্য জুলাই-আগস্ট গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারীদের বিচারও চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না সমকালকে বলেন, কারাগারে বন্দি লোকগুলো তো ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রাখেন। অযথা একটা লোককে দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে কেন আটকে রাখা হবে। তাদের ‘অ্যাকুইটাল’ (বিচারে খালাস) দিয়ে দিতে পারেন ট্রাইব্যুনাল।
জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সমকালকে বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত না জেনে কিছু বলা যাবে না। তবে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারীদের বিচার করতে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৪ বছরে ৫৫ মামলার রায়ে আসামি ছিলেন ১৬৯ জন। যার মধ্যে রায় হওয়ার আগেই মারা যান ১৮ জন; তাদের মধ্যে কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ১৬ জন, পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন দু’জন। আসামির মধ্যে দু’জন খালাস পেয়েছেন। যার মধ্যে একজন শিশু বিবেচনায়। বাকি সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১৪৯ জন।
ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডের সাজা পেয়েছেন ১০৬ জন। আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ২৫ জন, যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ১২ জন এবং সশ্রম কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন ছয়জন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এ পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়েছে ৯টি মামলা। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের ৭ আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে কার্যকর হয়েছে ছয়জনের মৃত্যুদণ্ড।
গত বছর রাজনৈতিক পালাবদলের পর গত ১৪ অক্টোবর পুনর্গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। যেখানে পুরোদমে শুরু হয়েছে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার কার্যক্রম। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ দেড় শতাধিক অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে নতুন মামলার ভারে স্থবির হয়ে যায় একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের পুরোনো মামলা। প্রসিকিউশন সূত্রে জানা গেছে, গণঅভ্যুত্থানের আগে ১১৩ জন সন্দেহভাজন যুদ্ধাপরাধীর বিরুদ্ধে ৩০টি মামলা বিচারাধীন ও তদন্ত সংস্থায় ২৫ মামলা তদন্তাধীন ছিল। অনুসন্ধানের অপেক্ষায় ছিল মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চার হাজার অভিযোগ। গত বছর ৩০ মার্চ পর্যন্ত ৬০ সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিভিন্ন কারাগারে আটক ছিলেন।
এদের মধ্যে ট্রাইব্যুনালের বিচারে ৪৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ছয়জনের বিচার ছিল চলমান। যাদের অধিকাংশ জামায়াত ইসলামীর নেতা। গণঅভ্যুত্থানের পর পাঁচজনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে একজনের বিচার চলমান।
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৫৩টি আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। বেশ কয়েক বছর ধরে এসব আপিলের শুনানি হচ্ছে না। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া এটিএম আজহারুল ইসলামের পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন আগামী ৮ মে সর্বোচ্চ আদালতে শুনানির অপেক্ষায় আছে।