তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সিটি হলের বাইরে হাজারো মানুষ জড়ো হয়ে শহরের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে গ্রেপ্তারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। বৃহস্পতিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তাঁরা এ বিক্ষোভ করেন। একরেম ইমামোগলুকে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হয়। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বীকে সরিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন সমালোচকেরা।

দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে গত বুধবার ভোরে মেয়র একরেম ইমামোগলুকে তাঁর বাসভবনে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। এ বিষয়টিকে বিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর দমন-পীড়ন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জনপ্রিয় বিরোধী নেতার আটকের ঘটনা গণতন্ত্র নিয়ে তুরস্কে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এতে ইস্তাম্বুল এবং অন্যান্য শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভ দমনে মেয়রকে গ্রেপ্তারের পরপরই তুরস্ক সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শহর ও সড়কে যেকোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি চার দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

রাজধানী আঙ্কারার মেয়র ও আরেক জনপ্রিয় বিরোধী ব্যক্তিত্ব মনসুর ইয়াভাস বৃহস্পতিবার ইস্তাম্বুল সিটি হলের বাইরে সমাবেশে যোগ দেন এবং সব বিরোধী দলকে অবিচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

ইস্তাম্বুলের কেন্দ্রীয় চত্বর তাকসিমের দিকে মিছিল করার জন্য ব্যারিকেড ভেঙে যাওয়ার চেষ্টা করা একদল যুবককে পুলিশ বাধা দেয়। আঙ্কারায় শিক্ষার্থীদের একটি প্রধান সড়ক ধরে অগ্রসর হতে গেলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে।

সমালোচকেরা এই দমন-পীড়নকে গত বছর স্থানীয় নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের উল্লেখযোগ্য পরাজয়ের পর এরদোয়ানের দুই দশকের বেশি সময় ধরে শাসনকাল দীর্ঘায়িত করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। সরকারি কর্মকর্তারা বিরোধীদলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তাঁরা বলেন, আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির মুখপাত্র ওমর সেলিক বিরোধীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন।

মেয়রের আটকের বিষয়ে এরদোয়ান অভিযোগ করেন, বিরোধীরা প্রমাণ বা আইনি যুক্তি দিয়ে অভিযোগের জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করার কয়েক দিন আগেই ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলো। রোববার দলীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। দলটির নেতারা বলছেন, ইমামোগলুকে গ্রেপ্তার করা হলেও প্রাথমিক নির্বাচন পরিকল্পনা অনুযায়ীই অনুষ্ঠিত হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এরদ য় ন

এছাড়াও পড়ুন:

রমনা বটমূলে গান–কবিতা–উচ্ছ্বাসে ছায়ানটের বর্ষবরণ, বিভাজন ভাঙার প্রত্যয়

পুব আকাশে সবে লাল সূর্য উঠতে শুরু করেছে। মঞ্চে প্রস্তুত শিল্পীরা। সামনে দর্শকসারিতে ভিড় জমে গেছে। শিল্পী সুপ্রিয়া দাশ গেয়ে উঠলেন ‘ভৈরবী’ রাগালাপ। এর মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরণের পালা। আজ সোমবার ভোরে রাজধানীর রমনা বটমূলে এর আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট।

রাগালাপের পর ‘নূতন প্রাণ দাও, প্রাণসখা’ সম্মেলক গান শোনান ছায়ানটের শিল্পীরা। ‘তিমির দুয়ার খোলো’ একক গান পরিবেশন করেন শিল্পী দীপ্র নিশান্ত। পাখিডাকা ভোরে, সবুজের আচ্ছাদনে দর্শনার্থীরা যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন এ আয়োজন।

এরপর একে একে ২৫টি রাগালাপ, গান আর আবৃত্তি পরিবেশন করা হয়। সকাল সাড়ে আটটার দিকে ছায়ানটের শিল্পীদের সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হয় জাতীয় সংগীত। এ সময় কণ্ঠ মেলান উপস্থিত হাজারো দর্শক। এর মধ্য দিয়ে এবারের আয়োজন শেষ হয়।

তবে অনুষ্ঠান শেষের আগে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এ সময় ছায়ানটের নির্বাহী সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ভয়াবহ মানবতার বিপর্যয় এবং গণহত্যায়, বিশেষ করে শিশু হত্যার তীব্র নিন্দা জানান তাঁরা। ফিলিস্তিনিরা আপন ভূমি রক্ষায় যে সংগ্রাম করছেন, তার প্রতিও সংহতি জানানো হয়।

এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মূল বার্তা ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। রমনার বটমূল, ঢাকা, ১৪ এপ্রিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ