ভালো ফলনেও আলু নিয়ে বিপদ কাটছে না কৃষকের
Published: 20th, March 2025 GMT
মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ীতে অন্য বছরের তুলনায় এবার আলুর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজারে দাম কম এবং হিমাগারে জায়গা না থাকায় বিপদে পড়েছেন কৃষক। দিনের পর দিন আলুবোঝাই ট্রাক, লরি, ট্রলি নিয়ে হিমাগারের সামনে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষায় থাকলেও জায়গা পাচ্ছেন না। এতে হতাশায় ভুগছেন উপজেলার কৃষক। হিমাগার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার তাদের সক্ষমতার তুলনায় আলুর ফলন হয়েছে বেশি।
নদী পথে উপজেলার হাসাইল, দিঘিরপাড়, কামারখাড়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, আলু নিয়ে সারিবদ্ধ ট্রলারে কয়েক দিন ধরে অপেক্ষায় রয়েছেন কৃষক। হিমাগারে যাওয়া গাড়ি ফের ঘাটে আসতে দিন পার হয়ে যাওয়ায় শ্রমিকরাও অলস সময় পার করছে। এতে কৃষকের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ট্রলারচালক, শ্রমিক ও গাড়িচালক।
কৃষক বলছেন, গাড়ি না পাওয়ায় দিনের পর দিন ঘাটেই আলু নিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে। এতে গরমে পচন ধরে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্টোর মালিকরা ইচ্ছা করেই শ্রমিক কম নিয়া তাদের ভোগান্তিতে ফেলছে বলে অভিযোগ তাদের। আর ট্রলারচালকের ভাষ্য, একবার পণ্য নিয়ে যদি ঘাটে বসে থাকেন, তাহলে যে টাকা আয় হবে, সে টাকা এখানেই শেষ করে খালি হাতে বাড়ি যেতে হবে।
আগে হিমাগারের ভাড়া ২০০ টাকা হলেও এখন ৪০০ টাকা হয়েছে জানিয়ে ধামারণ গ্রামের কৃষক সাহাবুদ্দিন হালদার বলছিলেন, আলু ১০-১২ টাকা কেজি। কৃষক কয় টাকা কেজি দরে বিক্রি করবে, সরকার তা নির্ধারণ করে দিল না কেন? হিমাগারের ভাড়া বেশি হয়ে গেছে। আর কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার দুলাল মণ্ডলের ভাষ্য, ‘আগে যা ভাড়া রাখতাম, তার চেয়ে বেশি খরচ হয়। এ কারণে এ মৌসুমে ভাড়া বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।’
ঘাটের শ্রমিক বলছেন, সকালে এক গাড়ি পণ্য উঠালে তিন ঘণ্টা পর ফেরে। এতে বেকার সময় কাটাতে হয় তাদের। আলু নামাতে না পারায় গাড়িচালকরাও সমস্যায় পড়ছেন। তারা জানান, পণ্য নিয়ে স্টোরে গেলে মালিকরা বলে, জায়গা নেই। পণ্য নিয়ে আসতে নিষেধ করেন তারা। এক গাড়ি পণ্য নিয়ে হিমাগারে গেলে তা নামিয়ে আসতে রাত হয়ে যায়। সারাদিন এক গাড়ি পণ্য নামালে খরচও ওঠে না। একজনের ভাষ্য, ‘আমাদেরও তো সংসার আছে।’
১৩ হাজার টন আলু রাখার জায়গা রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কোল্ড স্টোরেজে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ফখরুল বলেন, ইতোমধ্যে ৯ হাজার টন আলু রাখা হয়েছে। স্টোর প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। হয়তো আর দু-একদিন নেওয়া যাবে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী উপজেলার ২৮টি হিমাগারের মধ্যে ২৬টি সচল রয়েছে। গত বুধবার পর্যন্ত ১ লাখ ২০ হাজার ৭ টন আলু হিমাগারগুলোয় তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, ‘হিমাগারের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের ভাড়া পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।’
কর্তৃপক্ষ বলছে, হিমাগার সমিতি থেকে দেশব্যাপী কেজিপ্রতি ৮ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও মুন্সীগঞ্জে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে। জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সামির হোসেন সিয়াম বলেন, ‘খরচটা বেশি হয়ে গেছে। তারাও তাদের সমস্যার কথা আমাদের জানিয়েছেন। এ বিষয়ে আমরা কোনো সহায়তা করতে পারি কিনা, সে চেষ্টা চলছে।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আ. লীগকে নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে বেরোবিতে বিক্ষোভ
রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আওয়ামী লীগকে বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে বাংলার রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করার জন্য একটি কুচক্রী মহল গভীর ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এটি জুলাই বিপ্লবে শহীদ হওয়া ছাত্রদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার সামিল।’’
মানববন্ধনে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘‘নতুন করে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। বাংলার মাটিতে গণহত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্রসমাজ গণহত্যাকারী দলটিকে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন মেনে নেবে না।’’
মানববন্ধনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের সদস্য সচিব রহমত আলী বলেন, ‘‘আমরা ছাত্রসমাজ স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, বাংলার মাটিতে গণহত্যাকারীদের কোনো জায়গা নেই। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে এবং যারা তাদের পুনর্বাসনের ষড়যন্ত্র করছে, তাদের চক্রান্ত রুখতে আমরা রাজপথে আছি, থাকব।’’
এ সময় আরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছাত্র সমন্বয়ক শামসুর রহমান সুমন, আশিকুর রহমান আশিক, জীবনসহ অন্যান্যরা।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা গণহত্যাকারী দল হিসেবে দ্রুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানান। একইসঙ্গে দাবি আদায় না হলে আগামীতে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন তারা।
আমিরুল//