করনীতিতে সংস্কার চান ব্যবসায়ী নেতারা
Published: 20th, March 2025 GMT
বর্তমান করনীতি ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নয় বলে মনে করেন ব্যবসায়ী নেতারা। তাই এ নীতি সংস্কার করে ব্যবসাবান্ধব করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট বৈঠকে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এ সভায় ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) প্রশাসক মো.
এফবিসিসিআই করহার কমিয়ে আয়কর ও মূসকের আওতা সম্প্রসারণের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন, পণ্য খালাস এবং সব ধরনের শুল্ক ও কর পরিশোধ ত্বরান্বিত করতে এসাইকুডা সিস্টেমের সার্বিক উন্নয়নসহ সিঙ্গেল উইন্ডো সংক্রান্ত কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের তাগিদ দেওয়া হয় সংগঠনটির পক্ষ থেকে। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা নিশ্চিতের পাশাপাশি বিনিয়োগ বাড়াতে সুদের হার কমিয়ে আনার প্রস্তাবও দিয়েছে সংগঠনটি।
একই সঙ্গে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আগামী বাজেটে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা চেয়েছে এফবিসিসিআই। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক খরচ কমানোর বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। এ ছাড়া রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে নগদ সহায়তার বিকল্প সুবিধা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম লিখিত প্রস্তাবনায় বলেন, বর্তমান করনীতি কোনোভাবেই ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব নয়। তাই এটি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসাবান্ধব নীতি প্রণয়ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংগঠনটির প্রস্তাব হচ্ছে, তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য উৎসে কর আদায়কে চূড়ান্ত কর আদায় হিসেবে গণ্য করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য এ হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করতে হবে।
বিকেএমইএ বলেছে, বর্তমানে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। তারপরও এ প্রণোদনা পেতে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের ডকুমেন্টেশন এবং অডিট প্রক্রিয়ায় হয়রানির শিকার হতে হয়। প্রক্রিয়াটি সহজ করে রপ্তানির বিপরীতে অর্থ প্রত্যাবাসনের সময় হিসাব করে রপ্তানিকারককে সরাসরি দিতে হবে। একই সঙ্গে প্রণোদনার ওপর আয়কর অব্যাহতি দিতে হবে।
সভা শেষে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সাংবাদিকদের বলেন, কর পদ্ধতি সহজ করতে অনেক দিন ধরেই দাবি জানানো হচ্ছে। এবার একটা পরিবর্তন আসবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। এখন ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে সরকার। তবে এটি চূড়ান্ত হিসাব নয়। আবার এই অর্থ পুরোপুরি সমন্বয় হচ্ছে না বা ফেরত দিচ্ছে না। এক কোটি টাকা এআইটি নিলেও ওই ব্যবসায়ী যখন ২০ লাখ টাকা করের রিটার্ন দাখিল করছেন, তখন অগ্রিম আয়কর কেটে রাখলেও তা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করহার কত দাঁড়াচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। এটা পরিবর্তন প্রয়োজন।
বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, মোট বিক্রির ভিত্তিতে কর প্রক্ষেপণ করে এনবিআর, যা যৌক্তিক নয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চর্চাও অনুসরণ করা হয় না। পোশাক খাতকে ১ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হচ্ছে। যদিও এটা চূড়ান্ত হিসাব নিষ্পত্তি নয়। লোকসান হলেও ১ শতাংশ দিতে হয়। বেশ কিছু ক্ষেত্রে দ্বৈতকর হয়ে যায়। এসব কিছু বিষয়ে নিষ্পত্তিতে একমত হয়েছে এনবিআর।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সাহেলউদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের চেষ্টা করা হচ্ছে। ব্যবসা উপযোগী করনীতি প্রণয়নের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উদ্যোগও থাকবে। তিনি বলেন, করের ব্যাপারে মতামত এসেছে। কিছু খাতে সুবিধা কম রয়েছে। ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছেন, কর কাঠামোর প্রক্রিয়া যেন অনলাইনে করা হয়। এ ছাড়া পেমেন্ট নিয়ে যে জটিলতা তা সমাধান চেয়েছেন তারা। এসব বিষয় নিয়ে কাজ করবে সরকার।
বৈঠকে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা তাদের প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস য় স গঠনট স স আই করন ত স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চায় ডিবিএ
শেয়ারবাজারে ভালো কোম্পানি আনতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চেয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্রোকারেজ হাউস মালিকদের সংগঠন ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন বা ডিবিএ। আজ মঙ্গলবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে এই হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়। ডিবিএর সভাপতি সাইফুর ইসলাম এই চিঠি দিয়েছেন বলে সংগঠনটির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
ডিবিএ বলেছে, ১৫ বছর ধরে পুঁজিবাজার চরম অনিয়ম, অপশাসন ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। নানা অনিয়মের কারণে শেয়ারবাজারের অসংখ্য প্রতিষ্ঠান প্রায় অকার্যকর ও ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ সময় বাজার প্রকৃত অর্থে ৪০ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। আবার ২০২০ সাল থেকে কয়েক দফায় সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসের কারণে বাজারের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তাতে আন্তর্জাতিক তহবিল ব্যবস্থাপকেরা যেমন বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তেমনি স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত ১৫ বছরে মানহীন প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও তালিকাভুক্তির মাধ্যমে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। এতে বাজারে স্থায়ী তারল্য ও আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।
এ অবস্থায় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাজারে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ও উন্নয়নের এক সুযোগ তৈরি হয়েছে। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বর্তমান সরকারের সময়ে এই সংকট থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে না পারলে শেয়ারবাজারের উন্নয়নের সুযোগ হাতছাড়া হবে। শেয়ারবাজারের মাধ্যমে ব্যবসা সম্প্রসারণ ও মূলধন সংগ্রহের সুযোগ কাজে লাগাতে রাষ্ট্রমালিকানাধীন লাভজনক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ডিবিএ।
সংগঠনটির সভাপতি স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে বহুজাতিক বেশ কিছু কোম্পানি দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসা ও সুশাসনের দিক থেকেও বেশ উন্নত মানের কোম্পানি। এ দেশের অবকাঠামো, আর্থিক ও মানবসম্পদ ব্যবহার করে কোম্পানিগুলো ব্যবসা করছে। এসব কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দেশের মানুষের হাতে কোম্পানিগুলোর কিছু অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে প্রধান উপদেষ্টার প্রতি অনুরোধ জানায় সংগঠনটি।
ডিবিএ আরও বলেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা, বাজার পরিচালনাকারী সংস্থা, তালিকাভুক্ত কোম্পানি, বাজার মধ্যস্থতাকারী এবং আর্থিক নিরীক্ষক, ঋণমান যাচাইকারী সংস্থাসহ বাজার অংশীজনদের মধ্যে আস্থার মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট দূর ও বাজারকে সমৃদ্ধ করতে নতুন নতুন পণ্যের পাশাপাশি ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্ত করতে হবে। তাতে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন। এর মাধ্যমে নতুন নতুন বিনিয়োগকারী বাজারমুখী হবে এবং তারল্য সমস্যারও সমাধান ঘটবে।