ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম কলঙ্কজনক অধ্যায় বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যা। এই হত্যার বিচার নিয়ে পরিবারের ছিল প্রবল সন্দেহ, উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ– সুবিচার আদৌ হবে কী? সন্দেহের কারণটাও সংগত। কেননা, আসামিরা ক্ষমতার ছায়ায় লালিত-পালিত ও হৃষ্টপুষ্ট! তাই এমন ভাবনা অমূলক নয়। অবশেষে উৎকণ্ঠা প্রায় কেটে গেল; এখন রায় কার্যকর হওয়ার পালা। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে বিচারিক আদালত যে রায় দিয়েছিলেন, সেটিই এখন বহাল।  

এবার আপিলে সেই মামলা যখন হাইকোর্টে এলো, আবরার ফাহাদের পরিবারের তখনও একই শঙ্কা। নিম্ন আদালতের রায় টিকবে তো? সব খুনির সাজা বহাল থাকবে তো? নাকি আইনের ফাঁকফোকরে খুনিরা পার পেয়ে যাবে? অবশেষে সেই শঙ্কা-সন্দেহকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ১৬ মার্চ মহামান্য হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের রায়, সাজা হুবহু বহাল তো রাখলেনই; সঙ্গে পর্যবেক্ষণে বললেন, ‘নিম্ন আদালত যে ফাইন্ডিংস দিয়েছেন, এখানে ইন্টারফেয়ারের মতো কিছু নেই’ (সমকাল)। এই মামলায় নিম্ন ও উচ্চ আদালতের দেওয়া রায় নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। একই সঙ্গে অনন্য বিচারিক নজির। তবে এটি শুধু একটি ফৌজদারি মামলার রায় নয়। এই রায়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক নীরব বার্তা:

এক, এই মামলায় দণ্ডিত ২৫ জনই বুয়েটের শেরেবাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। ২০২১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই নিম্ন আদালতের রায়টি ঘোষিত হয়। এর অর্থ এই, ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হওয়ার কারণে অপরাধ করে পার পেয়ে যাওয়ার দিন বুঝি এখন শেষ। অপরাধীর পরিচয় একটাই– তারা অপরাধী। যে কয়টি ব্যর্থতা বিগত আওয়ামী সরকারের গায়ে বারবার কালিমা লেপন করেছে; প্রচণ্ডভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে; তার মধ্যে এক.

ছাত্রলীগের দাপট ও লাগাতার শক্তি প্রদর্শনী, নৈরাজ্য, নিজেদের মধ্যে দলাদলি ও সংঘাত। তারা দিন দিন বেপরোয়া থেকে বেপরোয়াতর হয়েছে। এই রায় ছাত্রলীগসহ যে কোনো ছাত্র সংগঠনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাস ও আস্ফালন রোধে বড়মাপের ‘টোটকা’ বা ‘রোগ প্রতিষেধক’ (ভ্যাকসিন) হিসেবে কাজ করবে।   

দুই. এই মামলা দ্রুত বিচারের একটি গৌরবোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। সাগর-রুনি হত্যা মামলায় ১৩ বছরেও তদন্ত শেষ হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছায় ১১৬ বার (প্রথম আলো); সেখানে এই মামলায় ঘটনার মাত্র ১ মাস ৭ দিনের মাথায় চার্জশিট, মাত্র ৭৮ কার্যদিবসে ৪৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, যুক্তি-তর্ক শুনানি শেষে নিম্ন আদালত রায় প্রদান করেন। এমন দ্রুত বিচার খুবই কাম্য ছিল। এ মামলায় পুলিশ প্রমাণ করেছে– সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত তদন্ত সম্ভব। সম্ভব ‘তদন্তের ধীরগতি’র চিরচেনা গল্পকে মিথ্যা প্রমাণ করা। এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া থেকে সুস্পষ্ট– যত সীমাবদ্ধতাই আমাদের থাকুক; পুলিশসহ বিচারিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিক হলে এ দেশে দ্রুত ও ন্যায়বিচার সম্ভব। 

তিন. দূষিত ছাত্র রাজনীতির বিষাক্ত থাবা যুগ যুগ ধরে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি বিষফোড়া হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এর ছোবলে কত মেধাবী ছাত্র যে বলি হয়েছে; কত মা-বাবার কোল খালি হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। আবরার ফাহাদের প্রতিষ্ঠান বুয়েটেই তো এমন ঘটনা ঘটেছে একাধিক। এই যেমন সাবেকুন নাহার সনি। ২০০২ সালের ৮ জুন টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে নিহত হয় বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সনি। ২০১৩ সালে এক হেফাজত কর্মীর এলোপাতাড়ি কোপে নিহত হয় বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বষের্র শিক্ষার্থী আরিফ রায়হান দ্বীপ। দুর্ভাগ্যের বিষয়, সনি হত্যা মামলায় একজন ছাড়া দণ্ডিত খুনিরা কেউ সাজা ভোগ করেনি। মূল খুনিরা এখনও পলাতক। তবে এই রায়ে একটি বার্তা খুবই পরিষ্কার– ক্ষমতার দাপটে অন্ধ হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধরাকে সরা জ্ঞান করার দিন শেষ। সবাইকে আইনের আওতায় আসতেই হবে।

চার. বুয়েট এ দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ। অতি মেধাবীরাই এখানে পড়ার সুযোগ পায়। এই মামলার সব আসামিই বুয়েটের ছাত্র। এই ‘অতি মেধাবীদের’ কারা, কীভাবে খুনি বানাল, তাদের খুঁজে বের করা দরকার। কারণ আমরা চাই না, এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটুক। আমরা চাই, এ ঘটনাই বুয়েটে শেষ ‘হত্যার’ ঘটনা হোক। 
আবরারের পরিবারের মতো আমরাও চাই, আপিল বিভাগ, রিভিউ ও ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ পর্বগুলোও দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ হোক। পলাতক চার খুনিকে গ্রেপ্তার করে অবিলম্বে এই রায় কার্যকর হোক। চাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুনের রাজনীতির রাহুমুক্ত হোক। আমরা চাই না, পড়তে গিয়ে আর কোনো সন্তান লাশ হয়ে ঘরে ফিরুক। পাশাপাশি চাই দ্রুত ন্যায়বিচারের যে ধারা শুরু হয়েছে, তা যেন আমাদের বিচার ব্যবস্থার নিয়মিত চিত্র হয়। 
 
আফতাব উদ্দিন ছিদ্দিকী রাগিব: প্রাবন্ধিক ও
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
aftabragib2@gmail.com

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আবর র ফ হ দ র র জন ত র এই র য় তদন ত আবর র

এছাড়াও পড়ুন:

হাসানের সেঞ্চুরিতে ৯ উইকেটের জয় পাকিস্তানের

হাসান নওয়াজের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারিয়ে ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে জয়ের পথে ফিরেছে পাকিস্তান। শুক্রবার অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে অনুষ্ঠিত সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে একচেটিয়া আধিপত্য দেখিয়ে জয় তুলে নেয় সফরকারীরা।

টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। ব্যাট করতে নেমে ২০৪ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। দলের পক্ষে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন মার্ক চ্যাপম্যান। মাত্র ৪৪ বলে ৯৪ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন তিনি। অধিনায়ক মাইকেল ব্রেসওয়েল করেন ৩১ রান, টিম সেইফার্ট ১৯, ড্যারিল মিচেল ১৭ এবং ইশ সোধি ১০ রান করে দলের সংগ্রহে অবদান রাখেন।

পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন হারিস রউফ। ৪ ওভারে ২৯ রান খরচায় নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া শাহীন শাহ আফ্রিদি, আবরার আহমেদ ও আব্বাস আফ্রিদি প্রত্যেকে নেন ২টি করে উইকেট। একটি উইকেট পান শাদাব খান।

জবাবে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আগ্রাসী মনোভাব দেখায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ হারিস ও হাসান নওয়াজ জুটি রানের গতি বাড়িয়ে দেন শুরু থেকেই। হারিস ২০ বলে ৪১ রান করে আউট হলেও, অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তরুণ ব্যাটার হাসান নওয়াজ। হাসান নওয়াজের ৪৫ বলে ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস এবং অধিনায়ক সালমান আলির অপরাজিত ৫১ রানে ভর করে ১৬ ওভারেই ২০৭ রান তুলে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ