হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৮টি বাগানে চলতি মার্চ মাস থেকে স্বল্প পরিসরে নতুন চা পাতা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকৃতি সদয় হলে চা বাগানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাগান-সংশ্লিষ্টরা। 
জানা গেছে, গত বছর চায়ের নিলাম বাজারে ভালো দাম না পাওয়া ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় অধিকাংশ বাগান মালিক লোকসানের মুখে পড়েন। এ কারণে অনেক চা বাগান বন্ধ হবার পথে। কোনো কোনো চা বাগানে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-মজুরি। এ নিয়ে বাগান-সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাগান কর্মকর্তাদের ভাষ্য, চায়ের নিলামে ভালো দাম ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন না হলে চাশিল্প টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে। 
মার্চের শুরুতে কিছু বৃষ্টি হওয়াতে ছাঁটাই করা চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে জানিয়ে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিক নেতা স্বরজিত পাশি জানান, ফাল্গুন মাসে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় ছাঁটাই করা চা গাছে কুঁড়ি এসেছে। চা বাগান এখন সবুজ থেকে সবুজে ভরে যাবে। চা বাগান সবুজ দেখলে বাগানের শ্রমিকদের মন আনন্দে নেচে ওঠে। কারণ বাগান বেশি সবুজ পাতা এলে শ্রমিকরা বেশি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। পাতা বেশি সংগ্রহ হলে মালিক ও শ্রমিকরা বেশি লাভবান হতে পারেন। বাগানের শ্রমিকরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বনপূজা করে চা পাতা তোলা শুরু করেছে।
চা বাগান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চায়ের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য মূলত প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। বর্ষায় অতি বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচণ্ড তাপদাহও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতেই হয়। এবার মৌসুমের  শুরু থেকেই তারা নতুন কুঁড়ি পেয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে দেখা যায়, দলবেঁধে নারী শ্রমিকরা এখন প্রতিদিন চা পাতা সংগ্রহ করছেন। নতুন মৌসুমে বাগান থেকে চা পাতা তোলার আগে বাগান কর্তৃপক্ষ ও পঞ্চায়েত নেতাদের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা পূজা-অর্চনা, গীতাপাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা করেন। এরপর নাচে-গানে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন শ্রমিকরা। 
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, দেশের ১৬৮টি চা বাগানে  ২০২৪ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৯৩ মিলিয়ন কেজি চা; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল। চলতি অর্থবছর ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। 
নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ মাহমুদ বলেন, ভালো দর না পেলে বর্তমানে চা বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ সব কিছুর দাম বেড়েছে কিন্তু সে হারে চায়ের দাম বাড়ছে না। এ কারণে অনেক চা বাগান এখন রুগণ্‌ বাগান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। টাকার অভাবে সকল ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকে দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন বছর মালিকদের জন্য কঠিন অবস্থা যাবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা। 
ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) পরিচালক মো.

মহসীন মিয়া মধু বলেন, বাগানগুলোতে চা পাতা তোলা শুরু হয়েছে। তবে লোকসান কাটিয়ে বাগান লাভ করতে হলে শ্রমিক, মালিক ও সরকার পক্ষ মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে। 
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী এমদাদুল হক বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আমরা বাগানে নতুন চা পাতা তোলা শুরু করেছি। গত বছর সুখবর ছিল না, নানা সংকটের মধ্যে কেটেছে। এ বছর নতুনভাবে ব্যাংক থেকে টাকা না পাওয়া গেলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতে পারে। তাই এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখে শ্রমিকদের নিয়ে আমরা নতুন বছরে চা পাতা তোলা শুরু করেছি। চায়ের ভালো দর পেলে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’ 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

সরকারের ব্যয় ও আয়ের মধ্যে ঘাটতি কম রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে নজিরবিহীন আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট বাজেট দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সরকারের আর্থিক, মুদ্রা এবং মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত  কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের সভায় আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা চলতি বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। নতুন বাজেটে বরাদ্দ কমছে মূলত উন্নয়ন খাতে।

সাধারণত চলমান অর্থবছরের তুলনায় পরবর্তী অর্থবছরে কিছুটা হলেও ব্যয় বাড়িয়ে বাজেট দেওয়া হয়। কিন্তু এবার অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমানো হচ্ছে। নতুন বাজেটে পরিচালন ব্যয় কমানো হচ্ছে না। তবে  উন্নয়ন বাজেট কমানো হচ্ছে। বৈঠক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত সভায় পরিকল্পনা, বাণিজ্য, খাদ্য উপদেষ্টা এবং এসব  মন্ত্রণালয়ের সচিব, এনবিআর চেয়ারম্যানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যোগ দেন। সভায় আগামী বাজেটের বিষয়ে উপস্থাপনা দেন অর্থসচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।

অর্থ মন্ত্রাণলয় সূত্র জানায়, নতুন বাজেটে পরিচালন বা অনুন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। তবে উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ কমিয়ে রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি চলতি বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ লাখ ৮১ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ছিল ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার। আগামী বাজেটে এডিপিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, রাজস্ব আহরণে কাক্ষিত অগ্রগতি না হওয়া এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান কমে যাওয়ায় এডিপিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাদ বা স্থগিত রাখার দেওয়ার বিবচেনায়  আগামী অর্থবছরের ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেওয়া অনেক বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যেয়ে প্রচুর ঋণ নেওয়া হয়েছে। অনেক প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে। বারবার সময় এবং ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এ প্রবণতা সার্বিক অর্থনীতি বিশেষত ঋণ পরিশোধের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে  অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মেগা প্রকল্প গ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

তারা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলকমুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয় কমানো এবং বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য করতেই আকার কমানো হচ্ছে। তবে আকার কমলেও মূল্যস্ফীতির চাপে থাকা নিম্নআয়ের মানুষদের স্বস্তি দিতে সামাজিকর সুরক্ষা কর্মসূচিতে উপকারভোগী ও কিছু ক্ষেত্রে ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাত অগ্রাধিকার পাবে।  

তবে বাজেটের আকার কমলেও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা না কমে বরং বাড়ছে। আগামী অর্থবছর সংস্থাটির জন্য ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করছে সরকার। যদিও এনবিআরের পক্ষ থেকে লক্ষমাত্রা ৫ লাখের মধ্যে সীমাদ্ধ রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।  চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব লক্ষমাত্রা ছিল  ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে লক্ষমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আহরণ অনেক কম হওয়ায় সংশোধিত বাজেটে লক্ষমাত্রা প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা কমানো হয়। 

আগামী অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হচ্ছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি বাজেটে যা ছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে ঋণের অর্ধেকেরও বেশি বিদেশি উৎস থেকে এবং  ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করবে সরকার। এদিকে নতুন অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয় ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অবশ্য বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ এবং এডিবির পূর্বাভাস এর চেয়ে অনেক কম। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাজেট ২০২৫-২৬: বেশি জোর থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে
  • ১৫ বছর পর আজ বাংলাদেশ–পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে বৈঠক
  • বন্দর থেকে ১০০ কোটি টাকা গৃহকর পেল চসিক
  • জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অর্থায়ন বন্ধের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের
  • নতুন বাজেট ঘোষণা হতে পারে ২ জুন, ছোট হচ্ছে আকার 
  • জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের প্রস্তাব ট্রাম্প প্রশাসনের
  • ২ জুন বাজেট দেবে অন্তর্বর্তী সরকার
  • শিল্প খাতে স্থবিরতা আরও বাড়বে
  • আসছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট
  • আগামী বাজেট হবে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার