গণঅভ্যুত্থানে নিহতের পরিবার ও আহতরা নিরাপত্তাহীনতায়
Published: 20th, March 2025 GMT
বরিশালের বাবুগঞ্জে গণঅভ্যুত্থানে নিহতের পরিবার ও আহতরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আহত শিক্ষার্থীকে বাদী বানিয়ে মামলা করে আসামিদের কাছ থেকে আদায় হচ্ছে টাকা। অথচ সেই শিক্ষার্থী জানেন না মামলার খবর।
গতকাল বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহত পরিবার এবং আহতদের মাঝে সরকারি অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব অভিযোগ করা হয়।
অনুষ্ঠানে নিজের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন উপজেলার পূর্ব রহমতপুর গ্রামের জয়নাল হাওলাদারের মেয়ে সুমনা পারভীন অন্তু। বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী সুমনা গণঅভ্যুত্থানে একজন আহত যোদ্ধা। তিনি এখন পঙ্গু। তিনি বলেন, গত ১৬ জুলাই তিনি ঢাকায় আন্দোলনে অংশ নিলে ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে বরিশালে নিজের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে দেখেন তাঁর নামে বরাদ্দ বিএম কলেজ হোস্টেলের সিট বাতিল করা হয়েছে। তিনি এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলামের উস্কানি এবং উপস্থিতিতে তাঁকে বেধড়ক মারধর করেন বিএম কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকা, লক্ষ্মী মজুমদার, অনামিকা সিকদার, কাজী ইসরাত জাহান, সুবর্ণা আক্তার ও সাথী। এ সময় জহিরুলের নির্দেশে তাঁকে বনমালী গাঙ্গুলি ছাত্রীনিবাসের একটি কক্ষে রাতভর আটকে রাখেন ছাত্রলীগ নেত্রীরা। পরদিন তাঁকে হোস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সুমনা গত বছর ১৮ নভেম্বর বরিশালের আদালতে মামলা করেন। মামলাটি মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে তদন্ত রিপোর্ট পক্ষে নিয়ে আদালতে খারিজ করান জহিরুল–অভিযোগ সুমনার।
সুমনা বলেন, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে বরিশাল সিটির সাবেক দুই মেয়রসহ আওয়ামী লীগের ১৪০ জনকে আসামি করে বরিশাল কোতোয়ালি থানায় মামলা করা হয়। মামলার বাদী বানানো হয় তাঁকে। অথচ তিনি এ মামলার ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ওই মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। সেই ভুক্তভোগীদের কাছ থেকেই সুমনা জেনেছেন তিনি এই মামলার বাদী। অথচ তিনি কখনো থানায় যাননি কিংবা কোনো কাগজে সই করেননি। তাঁকে পুঁজি করে মামলাবাণিজ্য চালাচ্ছে একটি চক্র। এদিকে তিনি দিন কাটাচ্ছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। খুন-গুম কিংবা ধর্ষণের শিকার হওয়ার আশঙ্কায় থানায় একটি জিডিও করেছেন। সুমনা উপজেলা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে সহকারী অধ্যাপক জহিরুল ইসলাম জানান, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে হোস্টেল থেকে সুমনাকে বের করে দেওয়া হয়। হোস্টেলের ছাত্রীদের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়েছে বলে শুনেছেন। তাকে মারধর করে আটকে রাখা হয়েছিল কিনা তা তাঁর জানা নেই। এ জন্য সুমনা নাকি আদালতে মামলাও করেছিল। তবে সেটাও তিনি সঠিক জানেন না বলে দাবি করেন।
মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী আয়েশা সিদ্দিকার মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফোন বন্ধ করে দেন।
সুমনার মতো একই দাবি করেছেন নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্তর বাবাসহ বেশ কয়েকজন আহত ছাত্র। ইউএনও ফারুক আহমেদের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা পরিষদের অর্থায়নে জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বাবুগঞ্জ উপজেলার নিহত তিন পরিবার এবং আহত ২০ জনকে অনুদানের চেক দেওয়া হয়।
১৬ জুলাই চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন এমইএস ওমরগণি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ শান্ত। ফয়সালের বাবা উপজেলার মানিককাঠি গ্রামের ফার্নিচার ব্যবসায়ী জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। অথচ সেই স্বাধীন দেশে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নাই। আমরা এখন চোরের মতো পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ফিরে এসে নাকি আমাদের দেশদ্রোহী বানিয়ে প্রকাশ্যে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখবে। লাশ দাফন করতেও দেবে না। এমন হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
সুমনাকে বাদী বানিয়ে মামলার প্রসঙ্গে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, কোন ঘটনায় কোন মামলা হয়েছে এবং কে তার বাদী সেটা মামলা নম্বর ছাড়া বলা সম্ভব নয়। আমি যোগদানের পরে কোতোয়ালি থানায় সুমনা পারভীন অন্তু নামে কোনো বাদী মামলা করেননি। বিষয়টি যেহেতু তাঁর জানা নেই, তাই বিস্তারিত কিছু বলতে পারবেন না।
বাবুগঞ্জের ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, যে অভিযোগগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গণঅভ য ত থ ন কল জ র বর শ ল পর ব র আহম দ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না: মনির উদ্দিন পাপ্পু
গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনির উদ্দিন পাপ্পু বলেছেন, এই গণঅভ্যুত্থান সকল রাজনৈতিক শক্তিকে একসাথে দাঁড় করিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে নতুন আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গায় দাঁড় করিয়েছে। সেই নতুন আকাঙ্ক্ষার প্রধান দিক হচ্ছে, শুধুমাত্র এক ফ্যাসিস্টকে বিদায় করা না বরং এদেশের অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ; যারা দেশের অর্থনীতিতে বিকাশে মূল ভূমিকা পালন করে, তাদের জীবনমানের পরিবর্তন হবে এবং বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন জাতির মানুষেরা, সকলের নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে পারবে এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নিশ্চিত করা। এজন্য গণঅভ্যুত্থানের জনআকাঙ্খার নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীতে লালবাগ কেল্লার বিপরীতে ওয়াটার গার্ডেন কনভেনশন হলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কমিটির উদ্যোগে ‘সংবিধানসংস্কার পরিষদের নির্বাচন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার’ দাবিতে আলোচনা সভা হয়।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আলিফ দেওয়ান, সদস্য সচিব মো. সেলিমুজ্জামান, সম্মিলিত পেশাজীবী সংহতির অ্যাডভোকেট রিয়াজুল ইসলাম, বংশাল থানা সদস্য সচিব আহম্মেদ উল্লাহ (সুমিত), বংশাল থানা আহ্বায়ক জয় ভৌমিক, চকবাজার থানার সদস্য সচিব মো. হাসান, হাজারীবাগ থানার আহ্বায়ক মো. আকতার হোসেন, কোতোয়ালি থানার সদস্য সচিব মো. ফারিক, যাত্রাবাড়ী থানা আহ্বায়ক মোহাম্মদ ময়েজ, কেরাণীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী সমন্বয়কারী আব্দুল জলিল।
আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলন ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সংগঠক ফয়সাল আহমেদের সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করবেন চকবাজার থানার আহ্বায়ক মোহাম্মদ আলী।