মার্কিন কথাসাহিত্যিক জয়েস ক্যারল ওটস ১৯৩৮ সালের ১৬ জুন নিউইয়র্কের লকপোর্টে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে লেখালেখির শুরু, কলম আজও চলছে। নারীবাদ, সাম্যবাদ, যুদ্ধ ও সহিংসতাবিরোধী চিন্তার জন্য তিনি, বিশেষত পশ্চিমাবিশ্বে, সুবিদিত। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জিরো-সাম’। নাইনটিন্থ নিউজের প্রতিবেদক জেনিফার গারসন, ২৪ আগস্ট ২০২৩ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ওটস সেখানে বর্তমান আমেরিকায় নারীবিরোধী অবস্থান, শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান আধিপত্যবাদ প্রভৃতি নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন। অনুবাদ করেছেন হামিম কামাল

জেনিফার গারসন: আপনার সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জিরো-সাম’। দেখিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে নারী কেমন আচরণ করে ও পায়, লড়ে ও বেঁচে থাকে। আপনি দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। এই সময়ের ভেতর নারীর লড়াইয়ে কোনো বিবর্তন, পরিবর্তন কি আপনার চোখে পড়েছে? আপনার লেখক-জীবনের পরিপ্রেক্ষিতেও এ নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাই। 
জয়েস ক্যারল ওটস: যদিও আমি নিজেকে নারীবাদী বলছি, তবুও, ‘নারী’ শব্দটি কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্বের ধরন চিহ্নিত করে দেয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। 
কেবল ‘নারী’ বলেই তার কোনো পৃথক ধরন, ভাগ্য, ‘নারীসূচক’ দায়, ভবিতব্য আছে বলে আমার বিশ্বাস নেই। অন্য কারও কথা দ্বারা আমি সংজ্ঞায়িত হতে চাইনি, চাই না। তবে বিশ্বাস করি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে নারীবাদ গুরুত্বপূর্ণ। এবং এ আদর্শের আওতায়, আইনের সমর্থন নিয়ে, নারীদের একীভূত হওয়ার প্রয়োজন, সমতার পক্ষে লড়াইয়ে পরস্পরের পাশে থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে, বর্তমান আমেরিকার সাপেক্ষে, গর্ভধারণ ও গর্ভপাত ইস্যুতে সচেতনতা প্রয়োজন। নারীর অধিকারের এই দিকটি বর্তমান আমেরিকায় আক্রমণের শিকার।  তবে আমি নিজেকে কারও প্রতিনিধি মনে করি না। প্রাকৃতিক ছক্কা-পাঞ্জা খেলায় যদি আরও একবার আমার জন্ম হয়, নিশ্চিত, আমি আজকের 


‘আমি’ হব না। কোনো মহান নকশা অনুযায়ী আমি নির্মিত নই। বরং দৈবচয়নে নির্মিত। 
জেনিফার গারসন: গল্পগুলোয় অকপটে একটি সত্য উঠে এসেছে। কোন ‘অপরাধ’ ঠিক ‘গুরুতর নয়’ তা অনেক সময়ই লিঙ্গভেদে নির্ধারিত হয়। ছয় বছর আগে ‘মি ‍টু’ ঝড় বয়ে গেল। নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ ও অপরাধের প্রতি এই যে একটা গা-ছাড়া ভাব, একটা নস্যাৎমুখী ভাবনা, এই যুগেও, একে আপনি কীভাবে দেখেন। এই ইস্যুতে কার দায়দায়িত্ব কেমন আপনি মনে করেন?
জয়েস ক্যারল ওটস : আবারও বলে নিই, লেখক-শিল্পী হিসেবে আমি কোনো বিমূর্ত মন্তব্য করার বিপক্ষে। আমার কাছে যেটা স্পষ্ট তা হলো, প্রতিটি ঘটনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি ‘মি-টু’ স্বীকারোক্তিমূলক আবেদন-নিবেদন-প্রতিবাদ আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বাঁধা, স্বতন্ত্র। এটাও স্বীকার করতে হবে যে বহু পুরুষ অন্যায়ভাবে চিহ্নিত ও নিন্দিত হয়েছেন। আমাদের সামনে এমেট টিলের* মর্মান্তিক উদাহরণ রয়েছে। এ উদাহরণ বহুযুগ আগের এক বর্ণবাদী নিকৃষ্ট অতীতের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু সার্বিক বিচার ‘মি-টু’ আন্দোলন অনিবার্য ছিল। যুগ যুগ ধরে, শতাব্দী জুড়ে নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অবিচার-সহিংসতার আড়াল হয়ে থাকা সত্যগুলো, না-বলা কথাগুলো, সামনে নিয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছিল ‘মি-টু’।
একই ঘটনা, একই অপরাধ নতুন যুগে নতুন মাত্রা পেয়ে এখন আরও জটিল, নির্ণায়কগুলো এখন আরও ধোঁয়াটে। এখন নতুন পথে সৃষ্ট হতে পারে ধূম্রজাল। এই পথ এমনকি একেক রাজ্যে একেক রকম হতে পারে। রেড স্টেটে* একরকম, ব্লু স্টেটে* আরেকরকম। টেক্সাসের লাল রাজ্যে নারীর প্রতি আচরণ, এর বিচার যেভাবে গৃহীত, চিহ্নিত, বাস্তবায়িত হবে, ক্যালিফোর্নিয়া-নিউ ইয়র্ক-নিউ জার্সির মতো নীল রাজ্যে তা হবে না। নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারে, তার ভাগ্য নির্ধারণে, তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে, রাজ্যে-রাজ্যে এমন পার্থক্য দেখে কখনও সখনও মনে হয় দুঃস্বপ্ন দেখছি।
জেনিফার গারসন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব স্বনামধন্যদের একজন আপনি। যে বিষয়ে আমরা আলাপ করছি, বর্তমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর উপস্থিতি, সংশ্লেষণ-বিশ্লেষণ কেমন দেখতে পান। সামাজিক মাধ্যমে আপনার নিজের ব্যবহার অভিজ্ঞতা থেকেও যদি কিছু বলতেন।
জয়েস ক্যারল ওটস: আমার মনে হয় বিশেষ কিছু বলয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটা মস্ত ভূমিকা রয়েছে, বিশেষ করে তুলনামূলক কমবয়স্কদের বলয়ে। দীর্ঘদিন ধরে যারা এই মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে, তাদের ভাবনাচিন্তায় মননে এর খুব একটা প্রভাব কিন্তু নেই। এই যে একেকটা ইস্যু একেকবার জ্বলে ‍ওঠে, কদিন উত্তাপ ছড়িয়ে নিভে যায়, এরপর নতুন কিছু এসে তার জায়গা নেয়, এসবে আমরা অভ্যস্ত অনেকটাই। তবে কিছু পরিবর্তন তো অনিবার্য। টুইটারের কথাই ধরা যাক। শুরুর দিকে টুইটার কিন্তু অনেক সরল সাধারণ ছিল। আজকের মতো জটাজটিল রাজনৈতিক ইস্যুমুখর ছিল না। কেউ হয়তো তার কোনো অভিমত রাখত, যে বইটা পড়ে ভালো লেগেছে– যে সিনেমাটা মন কেড়েছে সেগুলোর পাঠ, কথা, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া হতো। যতটা দেখেছি, ২০১৬ সাল থেকে এই বাস্তবতা বিশেষ করে বদলাতে শুরু করে। এখনও সেই দশাই চলছে। বর্তমানে আমেরিকান জীবন বাড়াবাড়িরকম রাজনীতি-ঘেঁষা। মনে হয় না সহসাই এ দশা বদলাবে। আগামী অনেক দিনের ভেতরও এ অবস্থা বদলাবে বলে মনে হয় না। 
টুইটারে ত্রিশটির মতো অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করি আমি। আমার বলয়ে আমরা নিজেদের কথা শুনতেই বেশি উন্মুখ। কিন্তু এটা টুইটারের সার্বিক চিত্র নয়। ধর্মান্ধতা আর বর্ণবাদের চারণভূমি এখন টুইটার। ওসব নিয়ে যারা শতমুখী, তাদের অ্যাকাউন্ট এড়িয়ে চলি।
জেনিফার গারসন: সামনে আরও একটি রাষ্ট্রপতি-নির্বাচন। এবং এক বছর হয়ে গেছে যে উচ্চ আদালত রো ভার্সেস ওয়েইড রদ করেছে। এসব বিবেচনায় বর্তমান রাজনীতি সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী। চলমান লিঙ্গবৈষম্য, সহিংসতা আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে।  
জয়েস ক্যারল ওটস: বলতেই হচ্ছে, ভালো-মন্দের চিরায়ত লড়াই চলছে আমাদের ভেতর। ঠিক গল্পের মতোই, কোনো অংশই হার মানছে না, তেমন লক্ষণও নেই। 
ডানপন্থি, গণতন্ত্রবিরোধী সংখ্যালঘু একট সম্প্রদায় যুদ্ধ চাইছে। এরা শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান আধিপত্যবাদী। যতদূর দেখতে পাই সেই যুদ্ধ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, শিক্ষার বিরুদ্ধে, নাগরিকদের অনুকূল অস্ত্র-আইনের বিরুদ্ধে। ইহজাগতিক মানববাদ তাদের প্রতিপক্ষ। সেই নেতিবাচক শক্তি আরও জোরালো হচ্ছে কিছু অর্থায়নের কারণে। মাত্রাহীন ধনবান কিছু ব্যক্তি, সংগঠন তাদের টাকা দিচ্ছে। যেন ওই ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য কর ও আইন শিথিল হয় এবং পরিবেশবিরোধী ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে। 
গণভোটের ফল বলছে দুই পক্ষের শক্তিই সমান প্রায়। সুতরাং নির্বাচনে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। প্রতিদিনই তো নতুন বিস্ময় আসছে। নিত্যই আসছে নতুন প্রসঙ্গ অভিযোগ, পক্ষ-বিপক্ষ সাক্ষ্য, আত্মপক্ষ .

.. এই তুমুল অস্থিরতায় মনে হচ্ছে, যে নরককাল আমরা অতিক্রম করছি, তাতে বাস্তববাদী কথাসাহিত্য যেন অবান্তর।

*১৯৫৫ সালে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে অপমান করার অভিযোগ এনে ১৪ বছরের কিশোর এমেট টিলকে হত্যা করা হয়। 
* রিপাবলিকান আধিপত্যের রাজ্যগুলো রেড স্টেট ও ডেমোক্রেটিক আধিপত্যের রাজ্যগুলো ব্লু স্টেট হিসেব চিহ্নিত

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ন ফ র গ রসন র জন ত ট ইট র আম দ র আম র ক আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

ফিট থেকেও না খেলার অভিযোগ—খাজা বললেন, ‘১০০% ভুল’

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শেফিল্ড শিল্ডে গত সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে খেলেননি উসমান খাজা। জাতীয় দলের এই ওপেনার না খেলার কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি।

তবে রাজ্য দলের হয়ে না খেললেও স্ত্রী র‍্যাচেল ম্যাকলেল্লানকে নিয়ে রেসিং প্রতিযোগিতা ফর্মুলা ওয়ান দেখতে ব্রিসবেন থেকে মেলবোর্নে যান খাজা, যা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের মহাব্যবস্থাপক জো ডস তো সরাসরি দাবি করেছেন, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচটিতে খেলার মতো ফিট ছিলেন খাজা।

কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের মহাব্যবস্থাপক জো ডস

সম্পর্কিত নিবন্ধ