Samakal:
2025-03-21@09:16:34 GMT

আতাউল হক সিদ্দিকীর সনেট সমগ্র

Published: 20th, March 2025 GMT

আতাউল হক সিদ্দিকীর সনেট সমগ্র

‘পৃথিবীটা অপরূপ। তবু তার মুগ্ধ তরুতলে।
দোতারা বাজায় বসে কেউ কেউ—উদাসী বাউল।
রাখে সে চরণচিহ্ন দীপ্তিময় তারকার ফুল
দিতে এসে কান্নাভেজা শরতের নিশি শেষ হলে—
ক্লান্ত হাতে উষাকালে রাধিকার ছড়ানো আঁচলে,
স্মৃতির অরণ্যে কিছু রেখে যায় শেফালি বকুল,
ভাদরের ভরানদী ভাঙে যার হৃদয়ের কূল;
অশ্রু তার টলমল তৃণে তৃণে শিশিরের জলে।’
[একটি জিজ্ঞাসা]
‘বিবাগী বসন্ত বাউল যৌবন’ সনেটগ্রন্থের উপর্যুক্ত সনেটটি যখন লেখা হয়, সে সময়টি ছিল ৩ অক্টোবর ১৯৬৮। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষাংশে আত্মপ্রকাশ করা কবি আতাউল হক সিদ্দিকী। গ্রন্থভুক্ত হওয়ার আগে সনেটটির শিরোনাম ছিল, ‘একটি জিজ্ঞাসা : তোমার সমীপে’। সনেটটি রচিত হয়েছিল নওগাঁ ডিগ্রি কলেজ বার্ষিকী শাহাদৎ হোসায়েন স্মৃতি সংখ্যায়, মরহুম শাহাদাৎ হোসায়েন স্মরণে। সনেটের দুটি অংশ, অষ্টক এবং ষষ্ঠক। অষ্টক অংশে যেমন কবি পৃথিবীর ‍রূপ-রস-সৌন্দর্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে সূচনা করেছেন, তেমনি ষষ্ঠক অংশে নিয়ম মেনেই সেই রূপ-রস-গন্ধ ও সৌন্দর্য ছেড়ে যাবার বেদনাকে প্রতিভাত করেছেন। ষষ্ঠক অংশে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে ডানা মেলে দগ্ধ ওরা শ্বেত পারাবত,/ নাগিনী সোহাগীরাত তাহাদের-ফাগুনে আগুন/ ব্যাপ্ত হলে কাছে টানে মরণের চিরচেনা পথ।/ মধুমাসে তারা তাই বুকে নিয়ে তৃষ্ণা নিদারুণ/ করুণার তীর ছুঁয়ে বিস্তৃতির সমুদ্রে মিলায়—/ তুমি কি তেমনিভাবে অসময়ে নিয়েছ বিদায়?’ এই পাঠককে সম্মোহিত করে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তৈরি উপাখ্যান, তাতে যদিও জীবনানন্দীয় আবহ বিদ্যমান, তবুও তার নিজস্বতা, একরাশ ভাবের মুখোমুখি হতে হয় পাঠককে। উন্মোচিত হতে থাকে উপলব্ধির জগৎকে প্রসারিত করে লুকানো বিরহগাথা। 
সনেটের স্মরণীয় এবং পূজনীয় ইতালিয়ান কবি পেত্রার্ক এবং ইংরেজ কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়র। পেত্রার্ককে বলা হয় সনেটের জনক। অন্যদিকে শেক্সপিয়র সনেট লিখেছেন, তাতে তিনি পেত্রার্কের ফর্ম অনুসরণ করেননি। ফলে অন্যান্য ভাষার কবিরা যখন সনেট রচনায় মনোযোগ দেন, তখন সচেতন দুটো ধারা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। বাংলা ভাষার সঙ্গে পেত্রার্কের রীতি অনুসরণ করেই সনেটের প্রথম পরিচয় করিয়েছিলেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। পরবর্তী সময়ে বাংলা ভাষার প্রথিতযথা কবিরা তো বটেই, অন্য কবিরাও সনেট রচনায় মনোযোগ দিয়েছেন। বাংলা ভাষাতেও লেখা হয়েছে অনবদ্য সনেট। সনেটের বিষয়ের ক্ষেত্রে দেশপ্রেমকে যেমন প্রাধান্য দেওয়া হয়, তেমনি ব্যক্তি বন্দনাও। কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকের শেষার্ধে শুরু যখন কাব্য সাধনায় নিজের অস্তিত্ব মিশিয়ে দিতে থাকেন, তখন অন্যদের সঙ্গে তাঁর বড় পার্থক্য হয়ে দাঁড়ায় সনেট রচনার ধারা। সবাই নানা ছন্দের কবিতা লেখার পর সনেট রচনায় হাত দেন, তখন আতাউল হক সিদ্দিকী কাব্যচর্চার সূচনাই সনেটের হাত ধরে। 
১৯৬৮ সালে কলেজ বার্ষিকীতে প্রথম লেখা প্রকাশের পর তাঁর সনেটগুলো প্রথম গ্রন্থভুক্ত হয় ১৯৯৮ সালে। ‘বিবাগী বসন্ত বাউল যৌবন’ শিরোনামের সনেটগ্রন্থের পর একে একে প্রকাশ পেয়েছে, ‘আমি সেই লোক’, ‘উড়ে যায় মরমি পাখি’, ‘বেপথু কীর্তনীয়া’, ‘বরেন্দ্র বাউল’। পরে এই পাঁচটি সনেটগ্রন্থ নিয়ে সনেট সমগ্র। এরপর প্রকাশিত ‘সেই ডাকে’ সনেটগ্রন্থটিসহ আগের পাঁচটি গ্রন্থকে ‘সনেট সমগ্র’ নামে দুই মলাটের মধ্যে এনেছে কথাপ্রকাশ। 
গত ছয় দশকে আতাউল হক সিদ্দিকী নেট রচনা থেকে নিজেকে সরিয়ে নেননি। বরং সনেটকেই নিজেকে প্রকাশের বড় মাধ্যম করেছেন। সনেট রচনায় আতাউল হক সিদ্দিকীর পারঙ্গমতা ঈর্ষণীয়। এ ক্ষেত্রে তিনি শুধু পেত্রার্ককেই অনুসরণ করেননি, তিনি শেক্সপিয়রের রীতিতেও সনেট লিখেছেন। শুরু থেকেই দুটো ধারা তিনি সচেতনভাবে লালন করেছেন, প্রকাশ করেছেন। ৮ ও ৬ পঙ্‌ক্তির যে বিন্যাস, ভাবের যে বিস্তার প্রথম ৮ পঙ্‌ক্তিতে এবং শেষের ৬ পঙ্‌ক্তিতে সিদ্ধান্ত জানানোর যে পেত্রার্কীয় রীতি তা যেমন তিনি অনুসরণ করেছেন। তেমনি ৪, ৪, ৪, ২ পঙ্‌ক্তির বিন্যাসের শেক্সপিয়রীয় রীতিকেও অনুসরণ করেছেন। কোথাও তাঁর সপ্রতিভতার ঘাটতি নেই। সনেটের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তাঁর দক্ষতা। সনেটের যে গতি, তা তিনি অনুসরণ করেন। আতাউল হক সিদ্দিকী সনেট রচনার ধারায় আধুনিক। তিনি শব্দ বাছাইয়ে যেমন, তেমনি বিষয়ের ক্ষেত্রেও নিপুণতার ছাপ রেখেছেন। সতত সঞ্চরণশীল কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, তাঁর গাঢ় উপলব্ধির যে সহজাত প্রকাশ সনেটের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, তা বাংলা সনেটের ধারাকেই শুধু সমৃদ্ধ করেনি, পাঠককেও তৃপ্তি দিতে সক্ষম।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বই উৎসব কর ছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ফিট থেকেও না খেলার অভিযোগ—খাজা বললেন, ‘১০০% ভুল’

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শেফিল্ড শিল্ডে গত সপ্তাহের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কুইন্সল্যান্ডের হয়ে খেলেননি উসমান খাজা। জাতীয় দলের এই ওপেনার না খেলার কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, হ্যামস্ট্রিং চোট থেকে পুরোপুরি সেরে ওঠেননি।

তবে রাজ্য দলের হয়ে না খেললেও স্ত্রী র‍্যাচেল ম্যাকলেল্লানকে নিয়ে রেসিং প্রতিযোগিতা ফর্মুলা ওয়ান দেখতে ব্রিসবেন থেকে মেলবোর্নে যান খাজা, যা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের মহাব্যবস্থাপক জো ডস তো সরাসরি দাবি করেছেন, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র হওয়া ম্যাচটিতে খেলার মতো ফিট ছিলেন খাজা।

কুইন্সল্যান্ড ক্রিকেটের মহাব্যবস্থাপক জো ডস

সম্পর্কিত নিবন্ধ