প্রথমা প্রকাশনের উদ্যোগে শিশুসাহিত্যিক ও অঙ্কনশিল্পীদের নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠান ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবনে প্রথম আলো কার্যালয়ের দশম তলায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ইফতারের আগে শিশুসাহিত্যিক ও অঙ্কনশিল্পীরা শিশুসাহিত্য ও আঁকাআঁকি নিয়ে তাঁদের মতামত তুলে ধরেন। শিশুদের বই কেমন হওয়া উচিত, সেই বইয়ের ছবি কেমন হওয়া উচিত—এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখক ও অঙ্কনশিল্পীরা গঠনমূলক আলোচনায় মেতে ওঠেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রথমা প্রকাশনের শিশুসাহিত্যবিষয়ক সহযোগী সাইদুজ্জামান রওশন বলেন, প্রথমা প্রকাশন শুধু ফেব্রুয়ারি মাসের বইমেলাকে কেন্দ্র করে নয়, সারা বছর ধরে শিশু-কিশোরদের জন্য নানা ধরনের বই প্রকাশ করবে। সে জন্য তিনি লেখক ও অঙ্কনশিল্পীদের প্রথমার সঙ্গে থাকার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে লেখকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আখতার হুসেন, বিনয় বর্মণ, মোস্তাক শরীফ, আহমেদ রিয়াজ, রবিউল কমল, সুলতানা লাবু, পলাশ মাহবুব, শিবব্রত বর্মণ, আশিক মুস্তাফা, কিযী তাহনিন, তারিক মনজুর, নিলয় নন্দী, ইশতিয়াক আহমেদ, রূম্পা ফারজানা প্রমুখ। অঙ্কনশিল্পীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মো.

আল জাবীর রজত, মো. মারুফ মিয়া, পলাশ সরকার, এস এম রাকিব, নাহিদা নিশা, জান্নাতুল ফেরদৌস ও নবনীল আহমেদ।

প্রথমার প্রধান সমন্বয়কারী মশিউল আলম লেখক-শিল্পীদের প্রথমা প্রকাশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’ 

দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।

উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র‍্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।

হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷

তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।

ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।

ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।

সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।

বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷ 

ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’

সম্পর্কিত নিবন্ধ