জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) রাজনীতিতে তার দলীয় নেতাদের বর্ণনা অনুযায়ী ‘ক্লিন ইমেজের’ নেতা। তবে তার আড়ালে অবৈধ সম্পদই শুধু গড়েননি, বরং বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করে কয়েকটি দেশে সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। জিএম কাদেরের ক্লিন ইমেজের আড়ালে এই ‘কলঙ্ক’ খুঁজে পাওয়ার দাবি করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। 

কেন্দ্রীয় কমি‌টি‌তে পদ ও নির্বাচ‌নে ম‌নোনয়ন বা‌ণিজ্যসহ নানা ‘অপক‌র্ম’ ক‌রে গড়া বিপুল প‌রিমাণ অ‌বৈধ সম্পদ অর্জন ক‌রে সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেছেন বলে প্রাথ‌মিক অনুসন্ধা‌নে জানতে পেরেছে দুদক। ফ‌লে তার বিরু‌দ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধা‌নে নাম‌ছে দুর্নীতি দমনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি।

বৃহস্পতিবার দুদক মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো.

আক্তার হোসেন এই তথ্য দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

মে‌য়েসহ আমুর অবৈধ সম্পদ সাড়ে ৩৮ কোটি টাকা, ৩ মামলা

টুঙ্গিপাড়ার সাবেক চেয়ারম্যানের বাড়িতে দুদকের অভিযান

তিনি বলেন, “গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের (জিএম কাদের) বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

আক্তার হোসেন জানান,  জি এম কাদের সিঙ্গাপুর, লন্ডন, সিডনিসহ বিভিন্ন দেশে নামে-বেনামে সম্পদ পাচার করেছেন। দুদকের গোপন অনুসন্ধানে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের ‘যথেষ্ট প্রমাণ মিলেছে’। এজন্য তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনুসন্ধানের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়ন দিতে ১৮ কোটি ১০ লাখ টাকার ঘুষ গ্রহণ করা হয়, যার মূল সুবিধাভোগী ছিলেন তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের।

চুক্তি অনুযায়ী, অর্থ পরিশোধ না করায় অধ্যাপক মাসুদা এম রশীদ চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং তার স্থলে জিএম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের সংসদ সদস্য হন।

অভিযোগে এ-ও বলা হয়, জিএম কাদের জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হন এবং দলীয় পদ বাণিজ্য ও মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অর্থ সংগ্রহ করেন, যা পরে বিদেশে পাচার করেছেন। জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি ৩০১ সদস্যবিশিষ্ট হলেও বর্তমানে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পদ বাণিজ্যের প্রমাণ।

অ‌ভি‌যোগ আ‌ছে, দু‌টি সংসদ নির্বাচ‌নে সংরক্ষিত নারী আস‌নের প্রত্যেকের কাছ থে‌কে তি‌নি ম‌নোনয়‌নের বি‌নিম‌য়ে মোটা অঙ্কের টাকা নি‌য়ে‌ছেন। তা‌দের কাউ‌কে কাউ‌কে এই টাকা প‌রি‌শোধ কর‌তে গি‌য়ে জ‌মিজমাও বি‌ক্রি কর‌তে হ‌য়ে‌ছে। জিএম কা‌দের পা‌র্টির চেয়ারম্যান হি‌সে‌বে নি‌জে, কখনো মহাস‌চি‌ব ও তার সি‌ন্ডি‌কে‌টের মাধ্যমে এই মনোনয়ন বা‌ণিজ্য ক‌রে‌ছেন। জিএম কাদেরের বিরু‌দ্ধে গত নির্বাচ‌নে আওয়ামী লীগ সরকা‌রের কাছ থে‌কে প্রত্যেক প্রার্থীর জন্য মোটা অং‌কের টাকা নি‌য়ে‌ আত্মসা‌তের অ‌ভি‌যোগও র‌য়ে‌ছে নেতাকর্মী‌দের।

য‌দিও জিএম কাদের সব সময় নি‌জে‌কে সৎ রাজনী‌তিক হি‌সে‌বে দা‌বি ক‌রে আস‌ছেন। তার অনুগত নেতাকর্মীরাও ব‌লে থা‌কেন তি‌নি ক্লিন ই‌মে‌জের রাজনী‌তিক।

২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, জিএম কাদেরের নামে নগদ ৪৯ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ব্যাংকে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্ত্রী শরীফা কাদেরের নামে নগদ ৫৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা, ব্যাংকে ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকা এবং ৮০ লাখ টাকা মূল্যের তারও একটি জিপ গাড়ি রয়েছে। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে লালমনিরহাট এবং ঢাকায় জমি ও ফ্ল্যাট রয়েছে।

১৯৯৬ সালে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া জিএম কাদের জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০০৯-২০১৪ সাল পর্যন্ত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ এম ক দ র জ এম ক দ র র প চ র কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

বোনের বাড়িতে ঈদ উপহার দিয়ে ফিরছিলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু

সামনে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তাই ছোট বোনের শ্বশুরবাড়িতে সেমাই-চিনিসহ ঈদের উপহার নিয়ে গিয়েছিলেন মো. রিফাত (২৫)। সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের সোনাপুর-চেয়ারম্যানঘাট সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত রিফাত জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার কোটবাড়িয়া গ্রামের আবুল খায়েরের ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রিফাতের বোনের শ্বশুরবাড়ি সুবর্ণচর উপজেলার হারিছ চৌধুরীর বাজার এলাকায়। গতকাল বিকেলে সেখানে ঈদ উপহার নিয়ে যান তিনি। পরে রাতে সেখান থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সোনাপুর-চেয়ারম্যানঘাট সড়কে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে তাঁর মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।

এ সময় রিফাত গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিফাতের বোনের শ্বশুর মো. সবুজ প্রথম আলোকে ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

জানতে চাইলে সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আলী আজম প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ