দুই দিনে ১৬টি ধর্ষণের খবরের কথা উল্লেখ করে মহিলা পরিষদের উদ্বেগ
Published: 20th, March 2025 GMT
গত দুই দিনে (বুধ ও বৃহস্পতিবার) দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ২টি দলবদ্ধ ধর্ষণ ও ১৪টি ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয়েছে জানিয়ে এসব ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। তারা বলেছে, এই দুই দিনে চারটি ধর্ষণচেষ্টার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। এ সময় ধর্ষণের পর একজন গৃহবধূকে হত্যার খবর পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়ে মহিলা পরিষদ বলেছে, সম্প্রতি নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের ভিডিও ধারণ ও যৌন নিপীড়নের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। স্কুলের ছাত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নারীরাও দৈনন্দিন জীবনে নৃশংস সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। চলমান এসব সহিংসতার ঘটনায় নারী ও কন্যাশিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সঙ্গে তাদের অগ্রযাত্রার পথে প্রতিবন্ধকতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আরও পড়ুনপল্লবীতে রাতে আটকে এক নারীকে ‘দলবদ্ধ ধর্ষণ’, দুজন গ্রেপ্তার১৮ মার্চ ২০২৫মহিলা পরিষদ এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে। সেই সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির মাধ্যমে নারী ও কন্যাশিশুদের ওপর সহিংসতার বিষয়ে শূন্যসহিষ্ণুতার (জিরো টলারেন্স) নীতি গ্রহণ করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ, একই সঙ্গে নারী ও কন্যাশিশুদের নিরাপত্তার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে আশু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।
বিবৃতিতে নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতা ও অপতৎপরতা প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে মহিলা পরিষদ।
আরও পড়ুন‘ধর্ষণের’ শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে ৩ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেলে ৪ শিশু-কিশোরীসহ পাঁচজন ভর্তি৫ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুটি মামলার বিচার হবে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারি চাঁদ (এমসি) কলেজ ছাত্রাবাসে ২০২০ সালের দলবদ্ধ ধর্ষণকাণ্ড এবং চাঁদাবাজি ও ছিনতাইয়ের ঘটনায় দায়ের করা দুটি মামলার বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হবে। উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সোমবার শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।
মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আব্দুল কাইয়ুম লিটন জানান, বিগত দিনে উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার লিভ টু আপিল করেছিল। তিন বছর ধরে বিচার কাজ বন্ধ রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিস থেকে আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। ফলে মামলা দুটি বিচার ট্রাইব্যুনালে চলতে কোনো বাধা নেই।
দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় করা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জেলা মনিটরিং কমিটি। পরে সেই সিদ্ধান্তের অগ্রগতি না হওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন নির্যাতিতার স্বামী। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের আদেশ দেন উচ্চ আদালত। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারির কথা থাকলেও তা হয়নি। উল্টো উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করা হয়।
উচ্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের লিভ টু আপিলকে সরকারের বিচার না চাওয়ার পরিচয় বলে মনে করছেন আইনজীবীরা। দীর্ঘদিন পর সরকার লিভ টু আপিল প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে মামলা দুটি দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে এক সঙ্গে চলতে আপত্তি থাকল না। ২০২০ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জৈনপুর এলাকার এক যুবক তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে এমসি কলেজ ছাত্রাবাস এলাকায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চাঁদা দাবি ও ছাত্রাবাসের ভেতরে নিয়ে যায়। স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় সারাদেশে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আটজনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলো– বালাগঞ্জের চান্দাইপাড়ার সাইফুর রহমান, হবিগঞ্জের বাগুনীপাড়ার শাহ মো. মাহবুবুর রহমান রনি, শান্তিগঞ্জের তারেকুল ইসলাম তারেক, জকিগঞ্জের আটগ্রামের কানু লস্করের ছেলে অর্জুন লস্কর, দিরাই বড়নগদীপুরের রবিউল ইসলাম, কানাইঘাটের লামা দলইকান্দির (গাছবাড়ী) মাহফুজুর রহমান মাসুম, নগরীর গোলাপবাগ এলাকার আইনুদ্দিন ও বিয়ানীবাজারের নটেশ্বর গ্রামের মিজবাউল ইসলাম রাজন।
এদের মধ্যে বিএ কোর্সের (অনিয়মিত) ছাত্র সাইফুর রহমান, ইংরেজি স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, বিএসএস স্নাতক পাস কোর্সের রবিউল ইসলাম, ইংরেজি বিভাগের স্নাতকোত্তর চূড়ান্ত বর্ষের মাহফুজুর রহমানের ছাত্রত্ব বাতিল করে কর্তৃপক্ষ। অন্যরা বহিরাগত এবং সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গ্রেপ্তারের পর সবাই আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
একই বছরের ৩ ডিসেম্বর আটজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন শাহপরাণ থানার পরিদর্শক ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য। চার্জশিটে তিনি উল্লেখ করেন, আসামি সাইফুর, রনি, তারেক, অর্জুন, রাজন ও আইনুল ওই নারীকে ধর্ষণ করে। রবিউল ও মাসুম ধর্ষণকারীদের সহযোগিতা করে।
২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি বিভাগীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ধর্ষণ মামলার বিচার শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে ২০২২ সালে ধর্ষণ ও চাঁদাবাজি মামলা একসঙ্গে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করার নির্দেশনা দেন উচ্চ আদালত।