প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার কোনো দাবির প্রেক্ষিতে ভোট বিলম্বিত না করে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার করেছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। তবে দলটির নেতৃত্বের মধ্যে হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দেশের আদালতে বিচার করা হবে।

আজ বৃহস্পতিবার ড.

কমফোর্ট ইরোর নেতৃত্বে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।

বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য দু'টি সময়সীমা নির্ধারণ করেছে। এই তারিখ পরিবর্তন হবে না।

তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে সীমিত আকারে সংস্কার চায়, তাহলে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বৃহত্তর সংস্কার প্যাকেজ চাইলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।’

আসন্ন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের তারিখ পরিবর্তনের কোনও কারণ আমাদের কাছে নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের অপরাধের বিষয়ে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার আওয়ামী লীগ নেতাদেরকে হেগের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে পাঠানোর সম্ভাবনা নাকচ করেনি। বিষয়টি আলোচনার মধ্যে আছে।’ প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, বৃহস্পতিবার ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ চূড়ান্ত ও স্বাক্ষর করার পরিকল্পনা রয়েছে, যা সরকারের নীতিগুলোকে দিক-নির্দেশনা দেবে।’

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কর্মকর্তারা এ সপ্তাহে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নেতা আতাউল্লাহর গ্রেফতারের প্রশংসা করে এটিকে শরণার্থী শিবিরে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিশ্রুতির লক্ষণ বলে অভিহিত করেন। তারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বড় অংশ নিয়ন্ত্রণকারী আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।

অধ্যাপক ইউনূস উল্লেখ করেন, ঢাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা সংগ্রহে কাজ করছে। তিনি আশা করেন, আসন্ন জাতিসংঘের বিশেষ সম্মেলন রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুটির প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

ড. কমফোর্ট ইরো জানান, বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারকে লক্ষ্য করে ভুল তথ্য প্রচার মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতি তার গ্রুপের সমর্থন ব্যক্ত করে। প্রফেসর ইউনূস ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের দৃঢ় সম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেন। যদিও তিনি দুঃখ প্রকাশ করে জানান যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য প্রচারের বেশিরভাগই ভারতীয় মিডিয়া থেকে এসেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আওয় ম ল গ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানকে পেয়ে আনন্দাশ্রু বাধ মানছে না তুষার-শান্তা দম্পতির

বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ উদযাপনে তখন ব্যস্ত সারাদেশ। চলছে শোভাযাত্রা, মেলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ নানা আয়োজন। কিন্তু এ দিনে একটি নবজাত শিশুকে ঘিরে আরও আনন্দের বন্যা বয়ে গেছে কুমিল্লায় আহসান হাবিব তুষার ও শামীমা আক্তার শান্তা দম্পতির ঘরে, তার কাছে যেন বাইরের সব আয়োজন ফিকে। পহেলা বৈশাখের সকালেই তাদের কোলজুড়ে এসেছে দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। শিশুটিকে ঘিরে আনন্দাশ্রু যেন বাঁধ মানছে না বাবা-মার। দাদার দেওয়া নামে শিশুটির নাম রাখা হয়েছে সুফিয়া আহসান রোয়া। তুষার ও শান্তার চাওয়া, তাদের দুই মেয়ে প্রথমে হোক ভালো মানুষ, পরে একজন চিকিৎসক।

গত সোমবার ভোর সাড়ে ৬টায় দেবিদ্বার উপজেলা সদরের সেন্ট্রাল হসপিটালে সিজারিয়ানের মাধ্যমে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন শান্তা। এ হাসপাতালটি তুষারের পারিবারিক যৌথ মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে। এ দম্পতির ৯ বছর বয়সী আরেকটি কন্যাসন্তান আছে। ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স শেষ করা তুষার পেশায় একটি প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় পরিবেশক। উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা তাঁর স্ত্রী শান্তা প্যাথলজি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন। তুষার দেবিদ্বার উপজেলা সদরের নিউমার্কেট এলাকার ব্যবসায়ী মো. সেলিমের ছেলে। শান্তা একই উপজেলার বাঙ্গুরী এলাকার বাসিন্দা। তাদের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক বিয়েতে পরিণতি পায় ২০১৪ সালে। বিয়ের পর ২০১৬ সালে দেবিদ্বার সেন্ট্রাল হসপিটালেই তাদের প্রথম কন্যাসন্তানের জন্ম। এবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে ঘর আলো করে এসেছে দ্বিতীয় সন্তান রোয়া।
 
তুষার বলেন, নববর্ষের কাছাকাছি সময়ে আমার স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল। কিন্তু পহেলা বৈশাখের বিশেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে এ দিনেই সিজার করতে আমরা চিকিৎসকের মতামত নিয়েছিলাম। চিকিৎসকও সিজারিয়ানের জন্য নববর্ষকেই বেছে নেন। এ দিনে সন্তানের জন্ম হওয়ায় আমরা খুব খুশি। ওর জন্মদিন উদযাপনে কাউকে আর তারিখ মনে করিয়ে দিতে হবে না। 

তুষার আরও বলেন, আমাদের প্রথম বাচ্চা হয়েছে সিজারিয়ানের মাধ্যমে। তাই দ্বিতীয় বাচ্চার ক্ষেত্রেও চিকিৎসক স্বাভাবিক প্রসবের ঝুঁকি নেননি। শান্তার গাইনি সার্জন ছিলেন আমার চাচি ডা. হনুফা আক্তার। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে আমাদের বাসা হওয়ায় নিয়মিত ডা. হনুফার তত্ত্বাবধানে আমার স্ত্রী চিকিৎসা ও পরামর্শ নিতেন। তবু মনে শঙ্কা তো ছিলই। অপারেশন থিয়েটারের সামনে মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনসহ ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। মনে মনে আল্লাহকে ডেকেছি, যেন কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। আমার মা যখন বাচ্চা কোলে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হন, তখন সব দুশ্চিন্তা দূর হয়। বাচ্চার জন্য নতুন কাপড়, তোয়ালে উপহার দিয়েছে আমার বোনসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন। 

শান্তা বলেন, স্থানীয় রীতি অনুসারে আমি সন্তান সম্ভবা হওয়ার ৯ মাসের মাথায় আত্মীয়স্বজনকে নিয়ে বিশেষ খাবার ও দোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এখন বাচ্চার জন্য দোয়া কামনায় সাত দিন বয়সের সময় আবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। 

হাসপাতালের আবাসিক গাইনি সার্জন হনুফা আক্তার বলেন, প্রসূতি শান্তা আমার তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। যেন কোনো ঝুঁকিতে না পড়তে হয় এবং গর্ভের সন্তান যেন ভালো থাকে এ বিষয়ে শান্তা ও তুষার আগে থেকেই চেম্বারে এসে নিয়মিত ফলোআপ করতেন। এ ক্ষেত্রে স্বামীদের যতটুকু সচেতন থাকা দরকার, তুষার তার শতভাগ ছিলেন। নবজাতকের ওজন সাধারণত আড়াই কেজি হলেও সমস্যা নেই। শান্তা ও তুষারের মেয়ের ওজন হয়েছে ২ কেজি ৯০০ গ্রাম; যা একজন সুস্থ নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। বর্তমানে মা ও সন্তান সুস্থ আছে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ