কুষ্টিয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে মিনিকেট চালের দাম প্রতি কেজিতে ৮ টাকা বেড়েছে। দেশের চালের অন্যতম বড় মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগর মিলগেটে দফায় দফায় পাইকারি দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।

খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৬ টাকা কেজি। যে চাল দুই সপ্তাহ আগে ছিল ৭৮ টাকা। তবে মোটা চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে খাজানগর মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল পাইকারি বিক্রি করা হয়েছে ৭৬ টাকা। সেই চাল বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ৮৪ টাকা কেজি।

হঠাৎ করে দফায় দফায় চালের দাম বাড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। সংসারে বাড়তি খরচ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ। অসাধু চালকল মালিকদের কারসাজি ঠেকাতে বাজারের প্রতি নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ভোক্তারা।

আরো পড়ুন:

ভারত থেকে জাহাজে এলো ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল

কুষ্টিয়ায় প্লাস্টিকের বস্তার ব্যাপক ব্যবহার  

তবে চালকলের মালিকেরা ধানের মূল্য বৃদ্ধি ও ধান সংকটকে দায়ী করছেন। কুষ্টিয়া পৌর বাজারের চাল ব্যবসায়ীরা জানান, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে কুষ্টিয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৮ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তারা অর্ডার দিয়েও মিলগেট থেকে চাল কিনতে পারছেন না। মিনিকেট চালের সংকট দেখা দিয়েছে।

চালের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে ক্রেতারা জানান, চালের দাম বৃদ্ধিতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। গরিব মানুষ কুলিয়ে উঠতে পারছে না। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। যারা দফায় দফায় দাম বৃদ্ধি করে অধিক মুনাফা লাভ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

তারা অভিযোগ করেন, অসাধু চালকল মালিক ও ব্যবসায়ীরা পরিকল্পিতভাবে চালের দাম বৃদ্ধি করে। অধিক মুনাফার জন্য তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ান। বাজার নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিক।

কুষ্টিয়া পৌর বাজারের খুচরা ও পাইকারি চাল বিক্রেতা মা ট্রেডার্সের মালিক মনজুরুল হক রিপনসহ ব্যবসায়ীরা বলেন, দুই সপ্তাহ আগে খাজা মিলগেটে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল পাইকারি বিক্রি করা হয়েছে ৭৬ টাকায়, সেই চাল বর্তমানে বিক্রি করা হচ্ছে ৮৪ টাকা কেজিতে। মিল মালিকরা পাইকারি চালের দাম বৃদ্ধি করেছে। ফলে খুচরা বাজারেও বৃদ্ধি পেয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৮৫ থেকে ৮৬ টাকায়। প্রতি বছর এ সময় দাম বেড়ে যায়। নতুন ধান উঠলে দাম কমে যাবে। তারা কেজিতে ১-২ টাকা টাকা লাভ করেন। যেমন দামে ক্রয়, তেমন বিক্রি করেন।

বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিলমালিক সমিতির কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন প্রধান জানান, প্রতি বছর এই সময় সরু ধান ও মিনিকেট চালের দাম বৃদ্ধি পায়। এবারও ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। দুই-তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ সরু ধানের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতি মণের দাম ছিল ১ হাজার ৯০০ টাকা। সেই ধান বর্তমানে ২ হাজার ২০০ টাকা। সরু ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। এ জন্য ধানের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। ধানের দাম বৃদ্ধি ও সংকটের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মিনিকেট চালের সংকট দেখা দিয়েছে।

তিনি জানান, মাস দেড়েক পরে বোরো ধান বাজারে এলে সংকট কেটে যাবে, দামও কমে যাবে। তবে সরকারের উচিত চাল আমদানি করা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, ‘‘ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা নিয়মিত চালকল ও বাজার মনিটরিং করছি। অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে যদি অতিমুনাফা করে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক তৌফিকুর রহমান বলেন, খাজানগরে চালের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা দেখতে কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। মিনিকেট চালের দাম কমানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। 
 

ঢাকা/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর খ জ নগর ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যান্টন ফেয়ারে ওয়ালটনের এআই-সমৃদ্ধ স্মার্ট প্রযুক্তি পণ্যের প্রদর্শনী

বিশ্বের অন্যতম মেগা ট্রেড শো ‘চায়না আমদানি ও রপ্তানি মেলা’ বা ক্যান্টন ফেয়ারে অংশ নিয়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসমৃদ্ধ (এআই), আওটি বেজড বিশ্বের সর্বাধুনিক স্মার্ট ফিচারসমৃদ্ধ ইলেকট্রিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্ল্যায়েনসহ নিজস্ব ব্র্যান্ড পণ্যের প্রদর্শন করছে বাংলাদেশের টেক-জায়ান্ট ওয়ালটন।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) চীনের ঐতিহ্যবাহী ও মর্যাদাপূর্ণ ক্যাটন ফেয়ারের ১৩৭তম আসর শুরু হয়েছে। বিগত কয়েকটি আসরে ব্যাপক সাফল্য অর্জনের ধারাবাহিকতায় এবার তাতে অংশ নিয়েছে ওয়ালটন।

ক্যান্টন ফেয়ারের আন্তর্জাতিক জোনের ২.১ নম্বর হলে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ালটনের মেগা প্যাভিলিয়ন। সেখানে প্রদর্শন করা হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই), ইন্টারনেট অব থিংসের (আইওটি) মতো সর্বাধুনিক ও উদ্ভাবনী ফিচারসমৃদ্ধ রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার, এয়ার কন্ডিশনার, টেলিভিশনসহ ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েব ওভেন, ব্লেন্ডারসহ হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্যসামগ্রী। 

আরো পড়ুন:

সেমিকন্ডাক্টর চিপের ওপর শিগগির শুল্ক আসছে: ট্রাম্প

মার্কিন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চীনের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ

ক্যাটন ফেয়ারে এবার বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ‘লো নয়েজ’ ফিচারসমৃদ্ধ ফ্রিজ কম্প্রেসার প্রদর্শন করছে ওয়ালটন। 

মেলার উদ্বোধনী দিনে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।

ওয়ালটন গ্লোবাল বিজনেস শাখার ভাইস-প্রেসিডেন্ট এবং ক্যান্টন ফেয়ারে ওয়ালটন প্যাভিলিয়নের প্রধান সমন্বয়ক আব্দুর রউফ বলেন, ক্যান্টন ফেয়ার বিশ্বের অন্যতম এক মেগা ট্রেড শো। এখানে একই ছাদের নিচে বিশ্বের খ্যাতনামা ব্র্যান্ডগুলোর লেটেস্ট প্রযুক্তির পণ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়; বিধায় প্রতিবছরই চীনসহ বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে কয়েক লাখ ব্যবসায়ী ক্যান্টন ফেয়ারে আসেন। 

তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক, ব্যবসায়ী ও উৎপাদকদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরির বড় প্লাটপর্ম হচ্ছে ক্যান্টন ফেয়ার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিগত কয়েক বছর ধরে এই ট্রেড শোতে নিয়মিত অংশ নিয়ে আসছে ওয়ালটন।” 

“প্রতিটি আসরেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের ব্যবসায়িক অংশীদার তৈরি হয়েছে; যাদের মাধ্যমে দেশে দেশে ওয়ালটনের ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ক্যান্টন ফেয়ারের এবারের আসরেও বিশ্বের সর্বাধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ও ফিচারসমৃদ্ধ আন্তর্জাতিকমানের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছে ওয়ালটন। পূর্বের ন্যায় এই আসরেও নতুন নতুন দেশে বাজার সম্প্রসারণে ব্যবসায়িক অংশীদার তৈরিতে সক্ষম হবে ওয়ালটন,” যোগ করেন আব্দুর রউফ। 

ওয়ালটন গ্লোবাল বিজনেস শাখার তথ্য অনুযায়ী, ক্যান্টন ফেয়ারে এআইওটি ফিচারসমৃদ্ধ ৬৪৬ লিটার ধারণক্ষমতার মাল্টি-কালার ও বিগ ডিসপ্লে ডিজাইনের সাইড বাই সাইড রেফ্রিজারেটর প্রদর্শন করছে ওয়ালটন। এই ফ্রিজের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অব থিংস বেজড এমএসও প্লাস (ম্যাট্রিক্স স্পিড অপটিমাইজেশন) ইনভার্টার টেকনোলজি বাইরের তাপমাত্রা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ খরচে ফ্রিজের অভ্যন্তরীণ সর্বোচ্চ কুলিং পারফরমেন্স নিশ্চিত করে। রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার কম্পার্টমেন্টের কুলিং পারফরমেন্স গ্রাহক তার পছন্দমতো সেট করতে পারবেন। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম। 

ফ্রিজের কম্প্রেসারে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বস্বীকৃত সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব আর৬০০এ গ্যাস। এআইওটি বেজড এই মডেলের ফ্রিজগুলো স্মার্টফোনের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে পরিচালনা করা যাবে।

ক্যান্টন ফেয়ারে ওয়ালটনের ইনভার্টার প্রযুক্তির সোলার হাইব্রিড স্প্লিট টাইপ এসি, ৫-ইঞ্চির ডিজিটাল ডিসপ্লে এসি ও অফলাইন ভয়েস কন্ট্রোল এসি প্রদর্শিত হচ্ছে। স্মার্ট আইওটি প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ওয়ালটন এসি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে স্মার্টফোনের মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ওয়ালটনের সোলার হাইব্রিড স্প্লিট টাইপ এসি দিনের বেলায় সোলার পাওয়ারের মাধ্যমে চলবে। যদি সোলার পাওয়ার কম থাকে, তখন সোলার পাওয়ার থেকে আগে বিদ্যুৎ নিয়ে তারপর প্রয়োজন অনুযায়ী বৈদ্যুতিক লাইনের মাধ্যমে হাইব্রিড পদ্ধতিতে চলবে এই এসি। এতে বিদ্যুৎ খরচ হবে অনেক কম। রাতে সোলার পাওয়ার ব্যাটারির মাধ্যমে বা বৈদ্যুতিক লাইনেও চলবে এটি। এতে আরো ব্যবহার করা হয়েছে মরিচা প্রতিরোধক কোটেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল সলিউশন প্রযুক্তি। 

ক্যান্টন ফেয়ারে প্রদর্শন করা হচ্ছে থ্রি-ইন-ওয়ান কনভার্টিবল টেকনোলজিসহ ইন্টিগ্রেটেড ৫-ইঞ্চি কালার টিএফটি ডিসপ্লে। এতে রুম ও আউটডোর টেম্পারেচার, বিদ্যুৎ কনজম্পশন রেট, গত মাস বা গত বছরের কনজাম্পশন রেট ইত্যাদি সুক্ষ্মভাবে মনিটর করা যাবে। ওয়ালটনের অফলাইন ভয়েস কন্ট্রোল এসি ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমেই পরিচালনা করা যাবে। ওয়ালটন এসিতে ব্যবহার করা বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব আর২৯০ গ্যাস।

চীনের গুয়াংজুতে দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ৬৮ বছর ধরে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ক্যান্টন ফেয়ার। ১৫ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে ১৩৭তম ক্যান্টন ফেয়ারের প্রথম ধাপ । এখানে বিশ্বের নামকরা প্রযুক্তি জায়ান্টরা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড হাউজহোল্ড ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সেস, লাইটিং ইক্যুইপমেন্ট, ভেহিকেলস অ্যান্ড স্পেয়ার পার্টস, মেশিনারি ও হার্ডওয়্যার অ্যান্ড টুলস পণ্য প্রদর্শন করবে। ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড হাউজহোল্ড ইলেকট্রিক্যাল অ্যাপ্লায়েন্সেস ক্যাটাগরিতে বিশ্বের অন্যতম এই বৃহৎ মেলায় পঞ্চম বার অংশ নিয়েছে গ্লোবাল ইলেকট্রনিক্স ব্র্যান্ড ওয়ালটন। 

ঢাকা/সাহেল/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ