গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে। এটি কারও একক দাবি নয়। গণ–অভ্যুত্থানও কারও একার চেষ্টায় হয়নি। অভ্যুত্থান এ দেশের জনগণ করেছেন। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর অত্যাচার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে। সব রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ও ব্যক্তিবর্গ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান করেছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম নগরের একটি হোটেলে ইফতার উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ শীর্ষক আলোচনা সভায় জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই গড়ে ওঠেনি। এটাই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল। এমনকি স্পষ্ট ঘোষণাও ছিল যে এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, এতে তার নাগরিকদের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার থাকবে।’

বক্তব্যের শুরুতে তিনি জাতীয় ঐকমত্যের ওপর গুরুত্ব দেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণপর্বে প্রবেশ করার জন্য জাতীয় ঐকমত্যে আসতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে এই রাজনৈতিক উত্তরণে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে কাজ করতে হবে। সরকার এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে, যাতে রাজনৈতিক কোনো পক্ষের প্রতি বিশেষ পক্ষপাতিত্ব তৈরি না হয়। আপনারা পক্ষপাতিত্ব করলে এই দেশ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, ধর্মচর্চার মধ্যে নানা মতবিরোধ তৈরি হতে পারে। সে মতবিরোধ কীভাবে মীমাংসা হচ্ছে, তা গুরুত্বপূর্ণ। যে বিশ্বাসই থাকুক না কেন, পরিচয় যা-ই হোক না কেন; একজন নাগরিকের নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিকের সম্পর্ক কেবল নাগরিকতা দিয়ে। তার কোনো পরিচয় নাগরিক মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করতে পারে না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা মুসলমানের মধ্যেও ভিন্ন বিশ্বাসের কারণে কেউ কারও গায়ের জোরের শিকারে পরিণত হবেন না।

মাজারে হামলার প্রসঙ্গ টেনে জোনায়েদ সাকি বলেন, তৌহিদি জনতার নামে মাজারে হামলা হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ চিত্রিত হচ্ছে জঙ্গি হিসেবে। বাংলাদেশকে জঙ্গি হিসেবে দেখাতে চায় ভারতের মিডিয়ার একাংশ, এমনকি ভারতের শাসক দলও। এর ফলে তৌহিদি জনতার নামে আক্রমণটা ভারতীয় মিডিয়াকে সাহায্য করছে। এসব যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াতেও প্রচারিত হচ্ছে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, এই রাষ্ট্র গঠনকাল থেকেই এমন এক ক্ষমতাকাঠামো বানিয়েছে, যেখানে এক ব্যক্তির হাতেই সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যে ক্ষমতা, সেটি পৃথিবীর কোনো দেশের সরকারপ্রধানের নেই। সমস্ত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রীর হাতে। তিনি জবাবদিহির ঊর্ধ্বে, সংবিধানের ঊর্ধ্বে। এই স্বৈরাচারী ক্ষমতাকাঠামোটাই বাংলাদেশকে বারবার ফ্যাসিবাদী শাসনের খপ্পরে ফেলছে। সর্বশেষ শেখ হাসিনা এটিকে যে জায়গায় নিয়ে গেছেন, তার চেয়ে খারাপ আর কী হতে পারে।

শুধু সরকার পরিবর্তন জনগণের মুক্তি আনে না উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি না হলে পরিবর্তন আসবে না। এ জন্যই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের কথা তোলা হচ্ছে। নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে ক্ষমতাকাঠামোর বদল। স্বৈরাচারী কাঠামোর পরিবর্তে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি করাই হলো নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি কখনো জনগণকে ছাপিয়ে যেতে পারবেন না। জনপ্রতিনিধি বা সরকার সব সময় জনগণের অধীন থাকবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ২৮ জুলাই যে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেখানে কেবল সরকার বদলের কথা হয়নি। সরকার পতনের পাশাপাশি শাসনব্যবস্থা বদলের কথাও বলা হয়েছিল। যুগপৎ আন্দোলনে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব সামনে এসেছিল। যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় সারা দেশে জমিনটা তৈরি হয়েছিল। রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো করে লড়েছে। কিন্তু লক্ষ্য ছিল একটাই, সরকারের পতন, শাসনব্যবস্থার বদল ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।

নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত নির্মাণ জাতীয় দাবিতে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, এটি কারও একক দাবি নয়। অভ্যুত্থানও কারও একক নয়। অভ্যুত্থান এ দেশের জনগণ করেছেন। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ওপর অত্যাচার ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে পরিণত করেছে। সব রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ ও ব্যক্তিবর্গ সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অভ্যুত্থান করেছেন।

তিনি বলেন, সংবিধান সংস্কার ও একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তোলার জন্য জনগণের মতামতের ভিত্তিতে একটি কার্যকর প্রক্রিয়া প্রয়োজন। এ জন্য জবাবদিহি, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়ভিত্তিক রাজনৈতিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমী। সঞ্চালনা করেন ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী সমন্বয়কারী ফাহিম শরীফ খান। বক্তব্য দেন বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। ইফতার ও আলোচনা শেষে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ব যবস থ জনগণ র কর ছ ন ক ষমত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম

নরসিংদীর চর‌আড়ালিয়ায় ষষ্ঠ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজের পর বাঘাইকান্দি গ্রামের কাজীবাড়ির মোড়ে রায়পুরা উপজেলার চর‌আড়ালিয়া ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে এ মানববন্ধন হয়।
ধর্ষণের অভিযোগে ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান, সাইফুল মিয়া, রমজান, কাইয়ুম ও তার দুই সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান বক্তারা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এত ধর্ষণ হচ্ছে কিন্তু অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের কোনো বিচার হচ্ছে না। পুলিশ কী করে? অনতিবিলম্বে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন তারা। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তা না হলে জনগণ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে। আলটিমেটাম দিয়ে তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ষকদের আইনের আওতায় আনা না হলে রামপুরা থানাসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করা হবে।
মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন চরআড়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জহিরুল ইসলাম জাজু, স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু মুসা, জেলা ছাত্রনেতা সাব্বির ভূঁইয়া, সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান সরকার প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেল ৩টার দিকে দুই বান্ধবী চরআড়ালিয়া গ্রামের কাইয়ুম ও মুন্নার সঙ্গে ঘুরতে বের হয়। তারা সারা বিকেল ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে বাঘাইকান্দি এলাকা থেকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া-দাওয়া করে। পূর্ব থেকেই কাইয়ুম ও মুন্না তাদের বন্ধুদের পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে থাকতে বলে। সে অনুযায়ী অন্য বন্ধুরা স্কুলের সামনে অপেক্ষা করতে থাকে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে অটোরিকশাযোগে তাদের নিয়ে পূর্ব বাঘাইকান্দি এসইএসডিপি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে যায় কাইয়ুম ও মুন্না। সেখানে যাওয়ার পর এক ছাত্রীকে জোর করে স্কুলের পাশে নিক্সন মেম্বারের বাড়ির ছাদে নিয়ে যায় ইসরাফিল, সাইখুল, রমজান ও কাইয়ুম এবং অপর ছাত্রীকে মুন্না, ইমরান, রাজ্জাক, আব্দুর রহমান নদীর পারে নিয়ে যায়। সেখানে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটায় অভিযুক্তরা। এ সময় ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী চিৎকার দিতে চাইলে ইট হাতে নিয়ে মাথায় আঘাত করে হত্যার হুমকি দেয়। পরে দুই ছাত্রী বাড়ি ফিরে গেলে অবস্থা দেখে স্বজনরা জানতে চাইলে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ পায়। এ ঘটনায় রায়পুরা থানায় ৮ জনের নাম উল্লেখ করে দুটি মামলা করা হয়েছে।
নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) সুজন চন্দ্র সরকার বলেন, মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খোলপেটুয়ার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেনাবাহিনীর
  • ‘শুধু সরকার ও দল নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক চায় চীন’
  • ঢাকার সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে: ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
  • মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
  • জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির ৩ নেতার পদত্যাগ
  • জাতীয় পার্টি ছাড়লেন খুলনার সাবেক এমপিসহ ৩ নেতা
  • অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের: আলী রীয়াজ
  • দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম
  • ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে: জোনায়েদ সাকি
  • কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন