সরকারের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।

দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের (মনোনয়ন-বাণিজ্য) যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। তখন নাকি আমি দুর্নীতি করেছি। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের ৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এ আয়োজন করে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কাফরুলে জাপার ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার পর জি এম কাদের এক ভিডিও বক্তব্যে নানাবিধ ব্যর্থতার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় চান। এরপরই আজ দুদক ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, পদ-বাণিজ্য ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। সন্ধ্যায় জি এম কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।

জি এম কাদের বলেন, ‘আমি এমপি (সংসদ সদস্য) থাকা অবস্থায় গমসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই বা ছিল না।’

জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্তি দিতে যে পথে যেতে হয়, আমরা সে পথেই এগিয়ে যাব। আমাদের জেলে নেওয়া হলে যাব, ফাঁসি দিলে দেবে। এরশাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা জনগণ মেনে নেয়নি, আমাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাগুলোও জনগণ মেনে নেবে না।’

সরকারের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। বর্তমান সরকারও বিগত সরকার থেকে শিক্ষা নেয়নি। বিগত সরকারের পতন থেকে বর্তমান সরকারও শিক্ষা নিচ্ছে না। এই দিনই শেষ দিন নয়, আরও দিন আছে।

কাফরুলে ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘গতকাল আমাদের ইফতার পার্টিতে সন্ত্রাসীরা হামলা করে আমাদের নেতা-কর্মীদের গুরুতর আহত করেছে। সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে গণমাধ্যমকর্মীরাও রেহাই পাননি। মারধর করে ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইউটিউবারদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ পথচারীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। আমরা এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা গতকাল কয়েকবার পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি। তাঁরা এসে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন।’

বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। নব্য ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা গতকালও বলেছি, বর্তমান সরকার দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে নৃশংসতার শেষ নেই।.

..আমি আবারও বলছি, বর্তমান সরকার ব্যর্থ হয়েছে, আপনারা সরে দাঁড়ান।’

জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মীর আব্দুস সবুরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বক্তব্য দেন। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন, আলমগীর সিকদার, জহিরুল ইসলাম, জহিরুল আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র আম দ র সদস য গতক ল ইফত র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে: ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত

ঢাকার 'মার্চ ফর গাজা' সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ ওয়াই রামাদান। 

তিনি বলেন, “এই সমাবেশ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।” একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ফিলিস্তিনের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন তিনি।

শনিবার (১২ এপ্রিল) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত বিবৃতিতে বলেন, ঢাকা তার অতুলনীয় আন্তরিকতা দিয়ে বিশ্বকে অবাক করে চলেছে। ১২ এপ্রিল বিশ্ব যা প্রত্যক্ষ করেছে তা ইতিহাসের পাতায় ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন ও সংহতির অন্যতম সেরা ঘোষণা হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে, যা সীমান্ত এবং প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।

তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের প্রাণশক্তি একটি অকাট্য সত্যকে নিশ্চিত করে। বাংলাদেশ, তার পুরুষ ও নারী, তরুণ ও বৃদ্ধ উভয়ের মাধ্যমে, ফিলিস্তিনি জনগণকে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তি, উৎসাহ এবং নৈতিক প্রতিরোধ প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশের মতো মহান জাতি খুঁজে পাওয়া বিরল।”

“এই মহৎ জাতি একটি অপরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি ঘোষণা, যা কেবল কথায় নয় বরং নীতিগতভাবে খোদাই করা হয়েছে- বাংলাদেশ ইতিহাসের সঠিক দিকে থাকা ছাড়া আর কিছুই মেনে নেবে না। ফিলিস্তিন এবং এর জনগণের ন্যায্য সংগ্রামের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া আর কিছুই গ্রহণ করবে না।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “সমগ্র ফিলিস্তিন থেকে সমগ্র বাংলাদেশের কাছে, আমরা এমন এক জনগোষ্ঠীকে আমাদের শুভেচ্ছা জানাই যাদের মহাত্ম এবং সাহসী অবস্থানকে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। ফিলিস্তিন তার বাংলাদেশের ভাইবোনদের কাছ থেকে এটাই প্রত্যাশা করে, আমাদের জনগণ তাদের পূর্ণ অধিকার, তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত তাদের সমর্থনে অনুগত এবং অটল থাকবে।”

“এই মহান জনগণের প্রতি, আমরা আমাদের স্থায়ী অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করি। ফিলিস্তিন এবং এর জনগণ আপনাদের প্রতি অনুগত থাকবে, যতক্ষণ না এটি তাদের পূর্ণ অধিকার, তাদের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধার করে। আমরা আপনাদের সম্মানজনক অবস্থান কখনও ভুলব না।”

“ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে, আমরা লাল এবং সবুজ রঙের সমুদ্রের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছি। ফিলিস্তিনের পতাকার পাশে বাংলাদেশের পতাকা উড়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক রাজু স্মৃতি ভাস্কর্যটি এই অসাধারণ দৃশ্যের পটভূমি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জাতীয় রঙ ফিলিস্তিনের সাথে মিশে আছে, সাহসের দুটি পতাকা পাশাপাশি উড়ছে। হাজার হাজার কণ্ঠস্বর, যার মধ্যে শিক্ষার্থী, মা, ইমাম, শিল্পী এবং আরও অনেকে স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য একযোগে ধ্বনি তুলেছেন।”

তিনি বলেন, “বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি গত কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনের সঙ্গে বাংলাদেশের জনগণের অবিচল সংহতির জন্য কৃতজ্ঞতায় ভরা হৃদয় নিয়ে লিখছি। মিছিল করা প্রতিটি ছাত্র, চিত্রশিল্পী, প্রার্থনাকারী, ইমাম এবং কণ্ঠস্বর তুলে ধরা প্রতিটি বাংলাদেশিকে ধন্যবাদ। গাজার শরণার্থী শিবির থেকে পশ্চিম তীরের জলপাই গাছ পর্যন্ত আপনার সংহতি অনুভূত হয়। ন্যায়বিচারের জয় হবে এই বিশ্বাসকে আপনারা বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছেন।”

“আমার হৃদয় থেকে এবং ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আপনাদের ধন্যবাদ। আপনারা কেবল সমর্থক নন। আশা, মর্যাদা এবং সংগ্রামে আমাদের ভাই ও বোন। ফিলিস্তিন-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব দীর্ঘজীবী হোক। ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের যৌথ সংগ্রাম দীর্ঘজীবী হোক।”

শনিবার ঢাকায় ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদে 'মার্চ ফর গাজা' কর্মসূচির আয়োজন করে 'প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ'। দল-মত নির্বিশেষে এই কর্মসূচিতে লাখ লাখ মানুষ অংশ নেন।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পয়লা বৈশাখে তৌহিদবাদী গণসংস্কৃতির দিকে ফিরে আসার আহ্বান হেফাজতে ইসলামের
  • খোলপেটুয়ার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেনাবাহিনীর
  • ‘শুধু সরকার ও দল নয়, বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক চায় চীন’
  • আবারও বানানো হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি`
  • ঢাকার সমাবেশ ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে: ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত
  • মডেল মেঘনাকে কারাগারে পাঠানোর নিন্দা এমএসএফের
  • নির্বাচন ও সংস্কার মুখোমুখি করা গণ–অভ্যুত্থান ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্র: রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
  • ছাত্রদল নেতা মিলনের পরিবারের খোঁজ নিলেন তারেক রহমান
  • ব্রাভোকে দেখেই ‘বিশ্বাসঘাতক’ বললেন ধোনি
  • রপ্তানির বিকল্প পথ কমল, বাড়বে চাপ