সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়েছে, বললেন জি এম কাদের
Published: 20th, March 2025 GMT
সরকারের অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলায় তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের (মনোনয়ন-বাণিজ্য) যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তখন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ছিলেন। জাতীয় পার্টির রাজনীতি ও নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন তিনি। তখন নাকি আমি দুর্নীতি করেছি। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাকরাইলে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল শেষে জি এম কাদের সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। দলের প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের ৯৬তম জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা এ আয়োজন করে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর কাফরুলে জাপার ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার পর জি এম কাদের এক ভিডিও বক্তব্যে নানাবিধ ব্যর্থতার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিদায় চান। এরপরই আজ দুদক ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন, পদ-বাণিজ্য ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়। সন্ধ্যায় জি এম কাদের এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, ‘আমি এমপি (সংসদ সদস্য) থাকা অবস্থায় গমসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ার যে বিধান রয়েছে, তা সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই বা ছিল না।’
জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। জাতীয় পার্টির ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এসেছে। জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে। ফ্যাসিবাদ থেকে দেশকে মুক্তি দিতে যে পথে যেতে হয়, আমরা সে পথেই এগিয়ে যাব। আমাদের জেলে নেওয়া হলে যাব, ফাঁসি দিলে দেবে। এরশাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা জনগণ মেনে নেয়নি, আমাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলাগুলোও জনগণ মেনে নেবে না।’
সরকারের উদ্দেশে জি এম কাদের বলেন, ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না। বর্তমান সরকারও বিগত সরকার থেকে শিক্ষা নেয়নি। বিগত সরকারের পতন থেকে বর্তমান সরকারও শিক্ষা নিচ্ছে না। এই দিনই শেষ দিন নয়, আরও দিন আছে।
কাফরুলে ইফতার অনুষ্ঠানে হামলার নিন্দা জানিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘গতকাল আমাদের ইফতার পার্টিতে সন্ত্রাসীরা হামলা করে আমাদের নেতা-কর্মীদের গুরুতর আহত করেছে। সন্ত্রাসী হামলার হাত থেকে গণমাধ্যমকর্মীরাও রেহাই পাননি। মারধর করে ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়েছে। ইউটিউবারদের মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। সাধারণ পথচারীরাও হামলার শিকার হয়েছেন। আমরা এই সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। একই সঙ্গে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।’
পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে জি এম কাদের বলেন, ‘আমরা গতকাল কয়েকবার পুলিশের কাছে সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের প্রতি। তাঁরা এসে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। একই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের তাড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়েছেন।’
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে প্রত্যাশা ছিল, তা ধূলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে। নব্য ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এর বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। আমরা গতকালও বলেছি, বর্তমান সরকার দেশের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। দেশে নৃশংসতার শেষ নেই।.
জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক মীর আব্দুস সবুরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় দলের মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বক্তব্য দেন। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, লিয়াকত হোসেন, আলমগীর সিকদার, জহিরুল ইসলাম, জহিরুল আলমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র আম দ র সদস য গতক ল ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে: আমির খসরু
ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন। সবাই তো ধরে নিয়েছে নির্বাচন ডিসেম্বরে পরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অনেকের মতো ডিসেম্বর অনেক দেরি, তারপর ডিসেম্বর শেষ সময় ধরে নিয়েছে। ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে। এখন দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আজ বৃহস্পতিবার বিএনপির সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। দেশে-বিদেশে একটা বিষয় নিয়ে সবার মধ্যে কাজ করছে যে, কবে নির্বাচন হবে। কবে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। বর্তমানে দেশে একটা সরকার আছে। কিন্তু গণতন্ত্রতো এখনও ফিরে আসেনি। জনগণ সমর্থিত সরকার ব্যতীত কোনো প্রশাসন তাকে সমর্থন দিতে চায় না, সেটা তো আমরা এখন লক্ষ্য করছি।
বৈঠকে আমির খসরু ছাড়াও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খসরু বলেন, জনগণের সমর্থিত একটা সরকার ও সংসদ থাকবে যেটা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা হলে দেশের অনেকগুলো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। সেজন্য এই বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলোচনায়।
নির্বাচনের সময় নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে আমির খসরু বলেন, সবাই তো ধরে নিয়েছে; নির্বাচন ডিসেম্বরে পরে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। অনেকের মতো ডিসেম্বর অনেক দেরি, তারপর ডিসেম্বর শেষ সময় ধরে নিয়েছে। ডিসেম্বরে মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে। এখন দেশে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, সংস্কারের ব্যাপারে সবগুলো বিষয় নিয়ে যে ঐক্যমত কমিশন হয়েছিল সেইগুলা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে যেসব বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্যমত হবে সেইগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবো। আর যেসব বিষয়ে দ্বিমত তৈরি হবে সেগুলো নিয়ে আগামী নির্বাচনে সবাই জনগণের কাছে নিয়ে যাবে। এরপর সংসদে আলোচনা, তর্ক বির্তক হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রপ্তানির বড় জায়গা বলে উল্লেখ করে সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সেখানে আগামী দিনে কি হবে, বিএনপির পরিকল্পনা কি- এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।