ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে: আমীর খসরু
Published: 20th, March 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন। আর সবাই মনে করছেন সেই নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে হলে দেশ সঠিক পথে থাকবে।
আমীর খসরু বলেন, ‘সবাই ধরে নিয়েছে ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে অনেকে বলছে ডিসেম্বর অনেক দেরিতে। তারপরও ডিসেম্বর “কাট অব টাইম” হিসেবে ধরে নিয়েছে সবাই। সবার ধারণা, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলে আমরা সঠিক পথে থাকব।’
রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিএনপির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে বৈঠকে আমীর খসরু ছাড়াও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন।
আমীর খসরু বলেন, ‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আমরা ১৭ বছর সংগ্রাম করেছি। সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার একমাত্র মাধ্যম নির্বাচন।’
নির্বাচন কবে হবে, সে প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা আমীর খসরু বলেন, নির্বাচন নিয়ে দেশে এবং দেশের বাইরে সবাই ভাবছে যে নির্বাচন কবে হবে। কবে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসবে। দেশে একটি সরকার আছে, কিন্তু এখনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসেনি। সেটা না এলে, জনগণ সমর্থিত একটা সরকার ছাড়া কোনো প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় সেটা দাঁড় করাতে পারবে না। জনগণের সমর্থিত সরকার, সংসদ—যা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে, সেটা দ্রুত করতে পারলে অনেকগুলো সমস্যা সমাধান হবে।
ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক, সামাজিক, বৈদেশিক সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। রাজনীতির ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই নির্বাচন এবং সংস্কার কমিশনগুলোর ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।
আমীর খসরু বলেন, ‘সংস্কারের যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে, সে বিষয়গুলো এগিয়ে নিয়ে যাব। যে বিষয়গুলোতে ঐকমত্য হবে না, সেটা সাংবিধানিক হোক, নির্বাচনী হোক বা অন্য যেকোনো বিষয় হোক—সেটা আগামী নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের অধিকার আছে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার। তারা জনগণের কাছে উপস্থাপন করবে, জনগণের মতামত নিয়ে এসে সংসদে আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে, তারপর সংসদে পাস হবে। বৈঠকে আলোচনাটা এভাবেই হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ড স ম বর র ব এনপ র জনগণ র
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে: আলী রীয়াজ
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, সংস্কার প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা দেশের বাইরে থেকেও হচ্ছে, ভেতর থেকেও হচ্ছে। যারা মনে করে, বর্তমান কাঠামো অব্যাহত রাখা দরকার। বিশেষ করে যারা পরাজিত শক্তি, তারা এটা মনে করে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
রাজধানীর তোপখানা রোডের সিরডাপ মিলনায়তনে বৃহস্পতিবার ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, ‘দেশের শাসন ব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো স্বৈরাচার তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার জরুরি। তবে সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো বিরোধ নেই। এটা একসঙ্গে চলতে পারে। কিছু জরুরি সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার এত বছরে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেনি। তাই সংস্কার না করে কোনোভাবেই নির্বাচন দেওয়া যাবে না।’
সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবিত সুপারিশে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ তুলে দিয়ে বহুত্ববাদ ও রাষ্ট্রধর্ম রাখার মধ্যে স্ববিরোধিতা এবং বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশে মতপার্থক্য আছে– এ নিয়ে এক বক্তার প্রশ্নের উত্তর দেন আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, ‘সব কমিশন স্বাধীন সুপারিশ করেছে। রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত হবে। আর বিদ্যমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। বহুত্ববাদ সবার প্রতিনিধিত্ব করবে। বিভিন্ন সময় প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলেও রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করেনি। এর একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা আছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা সব বিষয়ে ঐকমত্য হলেও রাষ্ট্রধর্ম রাখার বিষয়ে সবাই একমত হননি।’
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটি ম্যান্ডেট রয়েছে। পতিত স্বৈরাচার যাতে ফিরে না আসতে পারে তার জন্য রাষ্ট্র সংস্কার করা, যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার এবং নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর। এগুলো একটার সঙ্গে একটা সম্পৃক্ত, একসঙ্গেই চলতে পারে। বিশেষ করে সংস্কার ও নির্বাচন একে অপরের পরিপূরক। যারা বলেন, সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন অথবা নির্বাচন বাদ দিয়ে সংস্কার করতে হবে– দুটিই ঠিক নয়।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘বিচার বিভাগ নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। এটা স্বাধীন কিংবা সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, সেই জায়গায় সংশয় আছে। এটা দূর করতে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে অনেকগুলো প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সুজন বা অন্যান্য নাগরিক সংগঠনগুলো উদ্যোগ নিলে সংস্কার সার্বিকভাবে সফল হবে।’
সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, ‘সংস্কার প্রস্তাবের কতগুলো বিষয়ে একমত পোষণ করি। কিন্তু কতগুলো নিয়ে বিতর্ক জুড়ে দেওয়া হয়েছে, এটা কাম্য নয়। প্রজাতন্ত্রের জায়গায় নাগরিকতন্ত্রকে নিয়ে আসার বিরোধিতা করি। ১৬ ডিসেম্বর লাখ লাখ লোকের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই জায়গায় কলমের এক খোঁচায় প্রজাতন্ত্র পরিবর্তন করার প্রয়োজন নেই।’
তিনি বলেন, ‘যৌক্তিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের অজর্নগুলো ধরে রাখতে হবে। এটা ঠিক বাহাত্তরের সংবিধানে অনেক ভুল রয়েছে, সেগুলো সংশোধন করা যেতে পারে। কিন্তু বাতিল করে নতুন করে লেখার কথা বলা অযৌক্তিক। ধর্মকে বিযুক্ত রেখেই রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।’
সাবেক সচিব ও লেখক-গবেষক একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, ‘রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে প্রতিটি জায়গায় সৎ ও দক্ষ লোককে নিয়োগ দিতে হবে। না হলে কাজটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে না।’
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘শেখ হাসিনার প্রায় ১৫ বছরের শাসনে সমস্ত প্রতিষ্ঠান ভঙ্গুর হয়ে গেছে। সেগুলোকে মেরামত করে নতুনভাবে তৈরি করতে হবে। সেজন্যই সংস্কার প্রয়োজন। সংস্কারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপরও চাপ ধরে রাখতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ‘৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা সংস্কারের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে পারছি। এ ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সংস্কার নিয়ে আশাবাদের জায়গা আছে। সরকার আশাবাদের জায়গাটা জোরালো আর হতাশার জায়গা সংকুচিত করার চেষ্টা করছে।’
বৈঠকে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। আরও বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আসিফ মোহাম্মদ শাহান, ভয়েস ফর রিফর্মের সহসমন্বয়কারী ও প্রকাশক-গবেষক মাহরুখ মহিউদ্দীন, সুজনের ঢাকা মহানগর সভাপতি জোবায়েরুল ইসলাম নাহিদ প্রমুখ।