ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশে এখনও ডলার সংকট রয়েছে। ব্যাংক ঋণের সুদের হারও বেশি। খেলাপি ঋণও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা নানা দিক থেকে চাপের মধ্যে রয়েছেন। আর্থিক খাতের সংকট তো রয়েছেই। নতুন কোনো বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে এলডিসি উত্তরণ নিয়ে কথাবার্তা চলছে। সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। অথচ আমাদের সামগ্রিক প্রস্তুতি দুর্বল।

এমন পরিস্থিতি নতুন অর্থ বছরের জন্য বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড.

সালেহউদ্দিন আহমেদ। এজন্য আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এসব বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়ার সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। 

রীতি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে শীর্ষ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বাজেট পূর্ব এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন অর্থ উপদেষ্টা। 

বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা একটা ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব বাজেট দেওয়ার চেষ্ট করছি। যেন বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ে আমরা সে রকম উদ্যোগ নেব। কিছু কিছু জায়গায় অনলাইন প্রক্রিয়ার ঘাটতি আছে। আমরা সেসব জায়গাতেও এড্রেস করার চেষ্টা করছি। সামগ্রিকভাবে বাজেটটাকে আমরা ব্যবসা বান্ধব করার কথাই ভাবছি। 

আগামী অর্থবছরের বাজেট হবে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব। যাতে দেশের জিডিপি ও কর্মসংস্থান বাড়ানো যায় এমনটা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। 

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসেছি। আমরা চাই ব্যবসা বান্ধব বাজেট। ব্যবসা উপযোগী কর নীতি। যাতে সব ধরনের বিনিয়োগ বাড়ানো যায়। জিডিপি ও কর্মসংস্থান যাতে বাড়ে। এ ব্যাপারে ব্যবসায়ীরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবের মাধ্যমে সুপারিশ দিয়েছে। করের ব্যাপারে মতামত তুলে ধরেছে। কিছু কিছু খাতে সুবিধা কম আছে। সর্বশেষ যে বিষয়ে ব্যবসায়ীরা দাবি জানিয়েছে তা হলো কর কাঠামোর প্রক্রিয়া যেন অনলাইনে করা হয়। এছাড়া পেমেন্ট নিয়ে যে জটিলতা তা সমাধান চেয়েছে।    

বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্টাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আজ যে আলোচনা তা হলো প্রাক-বাজেট। কিন্তু যা দেখলাম তা হলো আয়কর বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সম্পর্কিত ইস্যুর উপর শুনতে চেয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। অন্য ইস্যুগুলো তিনি শুনতে চাচ্ছিলেন না। ব্যাংকিংসহ অন্য খাতের বিষয়ে আলোচনা হয়নি। তবে উপদেষ্টার কার্যক্রম খুবই ইতিবাচক মনে হয়েছে। তিনি চান দেশটা এগিয়ে যাক। কিছু কিছু জায়গায় কর যাতে আহরণ করতে পারে এনবিআর। এনবিআরের কর আদায় যাতে বাড়ে তার জন্য কঠিন ভূমিকা নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি বলেন, সার্বিকভাবে আমাদের জন্য যেটা চিন্তার বিষয় শিল্পে কিভাবে সক্ষমতা বাড়ানো যায়। এ বিষয় নিয়ে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের কথা বলা হয়নি। তিনি এসব জায়গায় আলোচনা করতে চাচ্ছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক সংক্রান্ত বিষয় ও আর্থিক সহায়তার বিষয়গুলো লিখিত আকারে চেয়েছেন উপদেষ্টা।  

বিসিআই সভাপতি বলেন, এনবিআর গ্রোস মুনাফার ভিত্তিতে কিভাবে কর অ্যাসেসমেন্ট করে। এই কর ও শুল্ক কাঠামোতে আমাদের আন্তর্জাতিক চর্চা অনুসরণ করা উচিত। সেটা কিছু কিছু বিষয়ে একমত হয়েছে এনবিআর। বাংলাদেশের কর হিসাব যেভাবে করা হয় তা প্রক্রিয়া সঠিক নয়। দেশের পোশাক খাত ১ শতাংশ দিচ্ছে। যদিও এটা চূড়ান্ত হিসাব নিষ্পত্তি নয়। লোকসান হলেও ওই ১ শতাংশ দিচ্ছেন। দ্বৈতকরের কিছু বিষয় রয়ে গেছে। সে জায়গাগুলো এনবিআর সেটেল্ট করবে। 

তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র শিল্পকে আরও প্রতিযোগী করার জন্য এসএমই খাতের ভ্যাট আরও কমানো উচিত। ক্ষুদ্র শিল্পকে আটবছর মেয়াদী কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার উচিত আমরা মনে করি। এসব প্রস্তাব আমরা করেছি। 

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদা হাতেম বলেন, কর পদ্ধতি নিয়ে অনেক দিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। এটার এবার একটা পরিবর্তন হবে। এনবিআরের চেয়ারম্যান এমন আশ্বাস দিয়েছেন। এই পরিবর্তন হচ্ছে-যেমন এখন ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) নিচ্ছে। এটা চূড়ান্ত হিসাব নয়। আবার এই অর্থ পুরোপুরি সমন্বয় হচ্ছে না বা ফেরত দিচ্ছে না। এক কোটি টাকা এআইটি নিলেও ওই ব্যবসায়ী যখন ২০ লাখ টাকা করের রিটার্ন দাখিল করছে। তখন অগ্রিম আয়কর কেটে রাখলেও তা ফেরত দিচ্ছে না। এতে করের হার কত দাঁড়াচ্ছে তা সুনির্দিষ্ট নয়। এটা পরিবর্তন প্রয়োজন। যে আইন দ্বারা এটা করা হয়েছে ওই আইনটি সঠিক নয়। 

তিনি বলেন, আয় করব কর দেব। কিন্তু এখন যা হচ্ছে মোট বিক্রির উপর কর নেওয়া হচ্ছে। বাস্তবে এটা যৌক্তিক নয়। কর এর বোঝা আর না বাড়িয়ে করজাল সম্প্রসারণ করতে হবে।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি তাসকিন আহমেদ বলেন, আসছে বাজেটে কর ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে হবে। কর্পোরেট কর অনলাইন করতে হবে। ইউনিফায়েড সিঙ্গেল ডিজিট ভ্যাট করতে হবে। গত ৩ বছর ধরে অর্থনীতি চাপের মধ্যে থাকায় ভালো ব্যবসায়ীরা ডিফল্ট হয়ে যাচ্ছে! এর থেকে পরিত্রাণ এর জন্য ন্যূনতম ৬ মাস এর মোরাটোরিয়াম পিরিয়ড দিতে হবে ও সহজ শর্তে ঋণ রেস্ট্রাক্টারিং করার নির্দেশনা বাংলাদেশ ব্যাংককে দিতে হবে। 

এতে অন্যান্য চেম্বার অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসনাত/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস য় র র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

১৯ দিনে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

ঈদের আগে বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাতে শুরু করেছেন প্রবাসীরা। ফলে চলতি রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ মাসের প্রথম ১৯ দিনেই ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে দেশে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা আশা করছেন। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে। ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটিও কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবাসী আয় বেশি এসেছে। যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় আসে ১৬৬ কোটি ডলার। পরের চার দিনে এসেছে ৫৯ কোটি ডলার।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৭৪ কোটি ডলার, যা এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনে ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। তার মানে দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। আর পরের চার দিনে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার করে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

দেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ