বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় খুব কাছ থেকে গুলি করে রাজু আহমেদ নামে এক কিশোরকে খুনের ঘটনায় সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে কক্সবাজার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় তিনি আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

পুলিশ জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাড়ি এলাকায় রাজু আহমেদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই ঘটনার ভিডিও দেখে ওমর ফারুককে শনাক্ত করা হয়। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে খুব কাছ থেকে রাজুকে গুলি করে হত্যা করেন। এই প্রথম কোনো সরাসরি ‘ঘাতককে’ গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ৭ থেকে ৮ জন ব্যক্তি একটি বাড়ির গেটের কাছে অবস্থান করছেন। গেটের কাছের সড়কে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে দুজনকে দেখা যায়। তাঁদের মধ্যে একজন পুলিশের পোশাকে এবং অন্যজন ছিলেন আনসারের পোশাকে। আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তি হঠাৎ আগ্নেয়াস্ত্র হাতে ওই গেটে অবস্থান করা ব্যক্তিদের কাছাকাছি ছুটে আসেন। এ সময় সেখানে থাকা মানুষজন ভয়ে গুটিসুটি মেরে দেয়ালের সঙ্গে লেগে যান। আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তিটি দেয়ালের কাছে থাকা এক ব্যক্তির একবারে কাছে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে একের পর এক গুলি করতে থাকেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সড়কে থাকা পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিও আগ্নেয়াস্ত্র হাতে এসে গুলি শুরু করেন।

পুলিশের ভাষ্য, আনসারের পোশাক পরা ব্যক্তিটি হলেন ওমর ফারুক। তিনি একের পর এক গুলি করে রাজু আহমেদকে হত্যা করেছেন। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ওমর ফারুক আর চাকরিতে যোগ দেননি।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

ইলিয়াস খান প্রথম আলোকে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার ভোরে শহরের খুরুশকুল এলাকা থেকে সাবেক আনসার সদস্য ওমর ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে কক্সবাজার আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজু আহমেদের বাড়ি মাগুরার সদর উপজেলায়। তাঁর বাবা কালাম মোল্লা পেশায় একজন দিনমজুর। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট রাজু এইচএসসি পাস করার পর ঢাকায় একটি কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে তিনি সেখানে যুক্ত হন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আনস র র প শ ক গ র প ত র কর র প শ ক পর ওমর ফ র ক আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

১৯ দিনে প্রবাসী আয় দুই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

ঈদের আগে বৈধ পথে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি পরিমাণ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠাতে শুরু করেছেন প্রবাসীরা। ফলে চলতি রমজান মাসে প্রবাসী আয়ে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। এ মাসের প্রথম ১৯ দিনেই ব্যাংকিং চ্যানেল তথা বৈধ পথে দেশে ২২৫ কোটি মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। এর মধ্যে ১৯ মার্চ এক দিনেই এসেছে ১৩ কোটি ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি মাসের শেষে প্রবাসী আয় ৩০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ব্যাংকাররা আশা করছেন। প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলারের যে সংকট চলছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে। ডলারের দাম নিয়ে যে অস্থিরতা ছিল, সেটিও কমে এসেছে। ব্যাংকগুলো এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া সর্বোচ্চ ১২৩ টাকার মধ্যেই প্রবাসী আয় কিনছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে প্রবাসী আয় বেশি এসেছে। যেমন ব্যাংকের মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয় আসে ১৬৬ কোটি ডলার। পরের চার দিনে এসেছে ৫৯ কোটি ডলার।

২০২৪ সালের জুলাই থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ৭৪ কোটি ডলার, যা এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরে একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

সাধারণত দুই ঈদের আগে প্রবাসী আয় বছরের অন্য যেকোনো মাসের চেয়ে বেশি আসে। গত বছর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে পাঁচ দিনে ৪৫ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। তার মানে দিনে গড়ে ৯ কোটি ডলার এসেছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গড়ে ১১ কোটি এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে গড়ে ১২ কোটি ডলার করে এসেছে। আর পরের চার দিনে গড়ে প্রায় ১৫ কোটি ডলার করে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

দেশে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে টানা সাত মাস ধরে প্রতি মাসে ২০০ কোটি ডলারের বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২৫২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। এ বছরের জানুয়ারিতে গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রবাসী আয় ৩ শতাংশ বেশি আসে।

সব মিলিয়ে চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে প্রবাসীরা দেশে ১ হাজার ৮৪৯ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ বেশি। আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার।

প্রবাসী আয় হলো দেশে ডলার জোগানের একমাত্র দায়বিহীন উৎস। কারণ, এই আয়ের বিপরীতে কোনো বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয় না, অথবা কোনো দায়ও পরিশোধ করতে হয় না। রপ্তানি আয়ের বিপরীতে দেশে ডলার এলেও তার জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে আবার বিদেশি মুদ্রা খরচ করতে হয়। অন্যদিকে বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতেও ডলারের প্রয়োজন হয়। ফলে প্রবাসী আয় বাড়লে দেশে ডলারের মজুত দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ