যুদ্ধেই জন্ম, যুদ্ধেই শহীদ শিশুটি। ১৩ মাস আগে যুদ্ধের মধ্যেই প্রথম সন্তানের জন্ম দেন আফনান আল-গানাম। তখন তাঁর পরিবার গাজা উপত্যকায় নিজেদের বাড়িতে বসবাস করত।

চলতি বসন্তে আফনান দ্বিতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়েছেন। এ সময় তাঁরা একটি দারিদ্র্যপীড়িত তাঁবুতে বাস করতেন। ১৫ মাস যুদ্ধের পর একটি নাজুক যুদ্ধবিরতি তাঁদের মনে কিছুটা প্রশান্তি এনেছিল।

কিন্তু গত মঙ্গলবার ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর (আইডিএফ) নির্বিচার বিমান হামলায় তাঁদের তাঁবুটি মাটিতে মিশে যায়। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা আফনান আল-গানাম ও তাঁদের প্রথম সন্তান মোহাম্মদ দুজনই নিহত হয়েছে।

সেদিন সাহরির সময় অকস্মাৎ ঝাঁকে ঝাঁকে যুদ্ধবিমান এসে গাজায় বোমা ফেলতে শুরু করে। এতে চার শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাঁদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। ভূখণ্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে। জিম্মিদের ছেড়ে দিতে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে বাধ্য করতে গাজায় হামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল।

আফনানের স্বামী আলা আবু হেলাল বলেন, ‘তারা আমাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে।’ দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে নাসের হাসপাতালে দাঁড়িয়ে যখন তিনি কথা বলছিলেন, তখন কাপড় দিয়ে ঢাকা ছোট্ট মোহাম্মদের মরদেহ তাঁর কোলে।

ছোট্ট সন্তানের দিকে তাকিয়ে আবু হেলাল বলেন, যুদ্ধের এক কঠিন সময়ে সে জন্ম নিয়েছে, যুদ্ধেই শহীদ হয়েছে।

কথা বলার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছিল এই ফিলিস্তিনি তরুণের। তিনি বলেন, তাদের (ইসরায়েল) লক্ষ্যবস্তু নিষ্পাপেরা। তারা খুব কমই জীবন দেখেছে।

গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় পারিবারিক বসতি দেখতে গিয়েছিলেন আবু হেলাল। ঠিক তখনই মাওসিতে তাদের তাঁবুতে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। খান ইউনিসের বিস্তৃত এলাকাজুড়ে উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর তাঁবু এই মাওসি এলাকায় অবস্থিত।

যুদ্ধের সময় রাফায় আবু হেলালের ঘরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন সেখান থেকে কোনো কিছু লুট হয়েছে কি না; তা দেখতে যান তিনি। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ বলেন, ‘আমাকে একা রেখে তারা সবাই চলে গেছে। অনাগত শিশুটিও নিহত হয়েছে।’

গেল বছরের মে মাসে আবু হেলালের পরিবারকে রাফা ছাড়তে বাধ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী। তার কিছুদিন আগে জন্ম নেয় তাঁর প্রথম সন্তান মোহাম্মদ। যুদ্ধে রাফা অঞ্চলের বেশির ভাগ বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই ফিলিস্তিনি তরুণ বলেন, ‘পরিবার ও শিশুদের নিরাপদ রাখতে আপনি পালিয়ে গেলেন। কিন্তু তারপরও তারা নিহত হলো। তাদের সবাই নিহত।’

গাজা উপত্যকার নেতজারিম করিডরের একটি অংশ আবার দখলে নেওয়ার পর ভয়াবহ হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। গাজায় এমন তীব্র হামলা চালানো হবে ‘যা আগে কেউ কখনো দেখেনি’ বলেও হুমকি দিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার উত্তর ও দক্ষিণ গাজাকে বিভক্তকারী কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটিতে সেনা মোতায়নের তথ্য নিশ্চিত করেছে ইসরায়েল প্রশাসন। নেতজারিম করিডর ইসরায়েলি সীমান্ত থেকে উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত।

করিডরটি দখলে নেওয়ার পর বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী জানায়, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ কার্যকর হলে এই অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হয়েছিল। তবে আবার সেখানে সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে যুদ্ধে প্রায় ৪ মাইল (৬ কিলোমিটার) দীর্ঘ এই করিডরকে সামরিক অঞ্চল হিসেবে ব্যবহার করেছে ইসরায়েল।

নৃশংস ইসরায়েলি হামলায় উত্তর গাজার অনেকেই পালিয়ে দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। ১৫ মাসের সংঘাত শেষে করিডর থেকে ইসরায়েলি সেনারা সরে গেলে অনেকেই উত্তর গাজায় ফিরেছিলেন।

নেতজারিম করিডর দখলের পর অঞ্চলটি থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন ইসরায়েল কাৎজ। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, মঙ্গলবারের বিমান হামলা তো কেবল ইসরায়েলি পরিকল্পনার শুরু।

কাৎজ বলেন, হামাস জিম্মিদের মুক্তি না দিলে এমন ভয়াবহ হামলা চালানো হবে, যা আগে কেউ কখনো দেখেনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল পর ব র ত হয় ছ প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

সীমান্তে ভারতের ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আজ মঙ্গলবার নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর দেশটির আকাশসীমা লঙ্ঘনের কারণে ভারতের একটি কোয়াডকপ্টার (ড্রোন) গুলি করে ভূপাতিত করেছে। ভিম্বার জেলার মানাওয়ার সেক্টরে ওই কোয়াডকপ্টার ভূপাতিত করা হয়েছে বলে পাকিস্তানের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন।

পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের দাবি, কোয়াডকপ্টারটি সীমান্তের ওপার থেকে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করছিল। তখনই পাকিস্তানি সেনারা দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সেটিকে গুলি করে নামিয়ে আনে।

নিরাপত্তা কর্মকর্তারা দাবি করেন, যথা সময়ে নেওয়া পদক্ষেপের ফলে ভারতের গুপ্তচরচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। এটি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির প্রমাণ।

কর্মকর্তারা বলেন, সীমান্তে যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ সতর্ক ও প্রস্তুত রয়েছে।

পেহেলগামে ২২ এপ্রিল সংঘটিত প্রাণঘাতী হামলার পর দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনা নতুন মাত্রা পেয়েছে। ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। ২০০০ সালের পর কাশ্মীর অঞ্চলে এটিকেই সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

২৩ এপ্রিল, ভারত একতরফাভাবে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। বিশ্বব্যাংকের তত্ত্বাবধানে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত এই পানি বণ্টন চুক্তি দুই দেশের বহু সংঘাতের মধ্যেও কার্যকর ছিল।

ভারতের পদক্ষেপের জবাবে পরদিন পাকিস্তান পাল্টা পদক্ষেপ নেয়। তারা ১৯৭২ সালের শিমলা চুক্তি স্থগিত করার হুঁশিয়ারি দেয় এবং ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করার ঘোষণা দেয়।

ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, পেহেলগামে হামলায় আন্তসীমান্ত সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। অবশ্য এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ উপস্থাপন করেনি ভারত। অন্যদিকে, হামলায় যেকোনো ধরনের জড়িত থাকার অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ হামলার প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটনে একটি স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ