জয়পুরহাটে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য সরকারের বিশেষ খাদ্যসহায়তা কর্মসূচি ভিজিএফের কার্ড বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। জয়পুরহাট পৌরসভার মোট বরাদ্দের অধিকাংশ কার্ড বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁরা সুবিধাভোগীদের তালিকা পৌরসভায় জমা দিলে সেই অনুযায়ী কার্ড সরবরাহ করা হয়। বিষয়টি জানাজানির পর অনেকে সমালোচনা করেন।

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সুবিধাভোগীদের মধ্যে কার্ড বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। রাজনৈতিক নেতারা এ ব্যাপারে সহায়তা করেছেন। সুষ্ঠুভাবে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে। অভিযুক্ত নেতাদের ভাষ্য, তাঁরা কার্ড ভাগাভাগি করেননি। তবে সুবিধাভোগীদের মধ্যে কার্ড বিতরণ তদারক করেছেন।

পৌরসভায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে জয়পুরহাট পৌরসভায় এবার ৪৬ দশমিক ২১ টন ভিজিএফের চাল বরাদ্দ দেয় ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়। বরাদ্দের বিপরীতে পৌরসভার ৪ হাজার ৬২১ জন সুবিধাভোগী ১০ কেজি করে চাল বরাদ্দ পান। সাধারণত পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধিরা সুবিধাভোগীদের কার্ড বিতরণ তদারক করেন। কিন্তু ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সরকার সারা দেশের পৌরসভাগুলোতে মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণ করে সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক ও পৌরসভা পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেয়। পৌরসভা পরিচালনা কমিটির সদস্যরা ভিজিএফের কার্ড বিতরণও তদারক করেন।

পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, সুবিধাভোগীদের তালিকা করার সময় পৌরসভায় গিয়ে ভিজিএফ কার্ডের ভাগ চান বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। সুবিধাভোগীদের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে চাল বিতরণের স্বার্থে তাঁদের দাবি মেনে নেয় পৌর কর্তৃপক্ষ। মোট ৪ হাজার ৬২১টি কার্ডের মধ্যে ২ হাজার ৮৮০টি কার্ড তাঁদের মধ্যে ভাগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ১ হাজার ৬০০টি, জেলা বিএনপির আরেকটি পক্ষের নেতা আবদুল ওয়াহাব ৪৫০টি, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হাসিবুল আলম ৪৫০টি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক হাসিবুল হক ৩৮০টি কার্ড পান। সে অনুযায়ী নেতারা সুবিধাভোগীদের পৃথক তালিকা পৌরসভায় জমা দিলে সেভাবে কার্ড সরবরাহ করা হয়। পরে সেই কার্ড দলীয় লোকজন দিয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এরপর ১৬ থেকে ১৮ মার্চ সুবিধাভোগীদের মধ্যে চাল বিতরণ করে কর্তৃপক্ষ।

পৌরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সহায়ক কমিটির সদস্য ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, ‘আমি ভিজিএফের কোনো তালিকা করিনি। দলীয় লোকজন তালিকা করে পৌরসভায় দিয়েছেন। আমার কাছে কয়েকজনের নাম চাওয়া হয়েছিল। আমি ২০ থেকে ২৫ জনের জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে তাঁদের তালিকা দিয়েছি। প্রস্তুত করা তালিকায় স্বাক্ষর করেছি।’

জয়পুরহাট পৌরসভা সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পবিত্র ঈদে পৌরসভায় বরাদ্দ দেওয়া ভিজিএফ কার্ড বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তাঁরা কার্ড বিতরণে তদারকির মাধ্যমে সহযোগিতা করেছেন। গত তিন দিনে সুষ্ঠুভাবে ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে। কেউ কেউ কার্ড বিতরণ নিয়ে অহেতুক অপপ্রচার করছেন।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেনকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ভিজিএফের কার্ডের বিষয়ে মুঠোফোনে কোনো কথা বলব না। সরাসরি দেখা হলে কথা বলব।’ বিএনপি নেতা আবদুল ওয়াহাব বলেন, ‘৪৫০টি কার্ড যেন প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পান, সেটি তদারক করেছি। ভাগাভাগির বিষয়টি সঠিক নয়।’

জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হাসিবুল আলম বলেন, জামায়াত একটি গঠনতান্ত্রিক ও সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক দল। ভিজিএফের কার্ড বিতরণে চাপ প্রয়োগের কোনো প্রশ্নই ওঠে না। পৌরসভায় যে ৪৫০টি ভিজিএফ কার্ডের কথা বলা হয়েছে, তা ওয়ার্ডভিত্তিক অসহায় ও দুস্থ মানুষদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে তদারকি করেছে জামায়াত।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল হক বলেন, ‘আমরা কার্ড ভাগাভাগি করে নিয়েছি, এমন তথ্য বিভ্রান্তিমূলক। এটা নিয়ে একটি মহল আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা ৩৮০টি ভিজিএফ কার্ড যেন প্রকৃত সুবিধাভোগীরা পায়, তার তদারক করেছি।’

শান্তিনগর মহল্লার বাসিন্দা শিরিন আক্তার বলেন, ‘আমি ভিজিএফের চাল বিতরণের কথা জানতে পারিনি। শুনেছি, দলীয়ভাবে আগেই সুবিধাভোগী নির্বাচন করে তাঁদের কার্ড বিলি করা হয়েছে। আমার কাছে কেউ আসেনি।’

জয়পুরহাট পৌরসভার প্রশাসক ও জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মোহা.

সবুর আলী বলেন, ‘আমরা কাউকে ভিজিএফের কার্ড ভাগ করে দিইনি। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্যরা পৌরসভার দুজন সহায়তাকারীর সহযোগিতায় তালিকা প্রস্তুত করেছেন। যেহেতু ওয়ার্ডগুলোতে নির্বাচিত কাউন্সিলর নেই। এ কারণে হয়তো রাজনৈতিক ব্যক্তিরা কার্ড বিতরণে তদারক করেছেন।’ ভিজিএফ কার্ড ভাগাভাগি করা নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ জ এফ র ক র ড ভ জ এফ র চ ল ব র ক র ড ব তরণ ভ জ এফ ক র ড চ ল ব তরণ প রসভ য় প রসভ র কর ছ ন বর দ দ সদস য ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্ড ভাগাভাগি বৈষম্যবিরোধী জামায়াত ও বিএনপির

জয়পুরহাটে দুস্থদের ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) বিশেষ সহায়তার কার্ড ভাগাভাগি করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বিরুদ্ধে। কার্ড বিতরণের আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও জানানো হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। 

জয়পুরহাট পৌরসভায় এবার ভিজিএফ বরাদ্দ এসেছে ৪৬ দশমিক ২১ টন চাল। এ চাল ৪ হাজার ৬২১টি কার্ডের বিপরীতে জনপ্রতি ১০ কেজি হিসেবে বিতরণের সিদ্ধান্ত হয়। কার্ড বিতরণের কাজটি সরকারের কর্মকর্তারা তদারক করে থাকেন। তালিকাও করেন তারা। এবার এ কাজে বাদ সাধেন বিএনপি-জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা। পৌর পরিষদে উপস্থিত হয়ে এই তিন সংগঠনের নেতারা তাদের মধ্যে কার্ড বণ্টনের দাবি জানান। চাপের মুখে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ দাবি মেনে নেন। পরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ১ হাজার ৬০০টি, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ওহাব ৪৫০টি, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হাসিবুল আলম লিটন ৪৫০টি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক হাসিবুল হক সানজিদ ৩৮০টি ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন।

পৌরসভা কর্তৃপক্ষ জানায়, কার্ড বিতরণে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রুহুল আমিন এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডে মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক লায়লুন নাজমা বেগম দায়িত্বে রয়েছেন। ভিজিএফের চাল বিতরণের কথা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ তাদের মৌখিকভাবে জানালেও এ-সংক্রান্ত কোনো সভা হয়নি। দুস্থদের কোনো তালিকাও তাদের দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মকর্তাদের কয়েকজন জানান, বিএনপি, জামায়াত এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা পৌর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দলীয় কোটার ভিত্তিতে কার্ডগুলো হাতিয়ে নিয়েছেন।

সমাজসেবা কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান জানান, বিএনপি, জামায়াত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে কার্ডের তালিকা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন ও যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ ওহাব জানান, তারা দুই হাজার কার্ড পেয়েছেন। সেগুলো দুস্থদের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করেছেন। জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি হাসিবুল আলম লিটন জানান, তাদের ৪৫০টি কার্ড দেওয়া হয়েছে। কার্ডগুলো পৌর জামায়াতের দায়িত্বশীলদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা সেগুলো বিতরণ করেছেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক হাসিবুল হক সানজিদ জানান, তারা ৩৮০টি কার্ড পেয়েছেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, ভিজিএফের তালিকা প্রস্তুতের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে দলীয়ভাবে তালিকা করার সুযোগ নেই। ঘটনাটি তদন্ত করা হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কার্ড ভাগাভাগি বৈষম্যবিরোধী জামায়াত ও বিএনপির