অন্য রকম এক আবহে ২৫ মার্চ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের খেলায় মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ–ভারত। ম্যাচটি ঘিরে আলোচনায় বাংলাদেশের হামজা চৌধুরী। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফুটবলার এই প্রথম বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবেন। হামজা নিয়ে আলোচনা আছে ভারত দলেও।
গতকাল মালদ্বীপের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে ৩–০ গোলের জয়ের পর হামজাকে নিয়ে কথা বলেছেন ভারত কোচ মানোলো মার্কুয়েজ। কথা বলেছেন প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশ দল নিয়েও।
বাংলাদেশের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মাঠে নামার আগে মালদ্বীপ ম্যাচটা ছিল ভারতের জন্য নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ। সুযোগটা ভারত কাজে লাগিয়েছে রাহুল ভেকে, লিস্টন কোলাচো এবং অবসর ভেঙে ফেরা সুনীল চেত্রীর গোলে।
আরও পড়ুনহামজা চৌধুরী কে, কেমন খেলেন, বাংলাদেশ দল কতটা উপকৃত হবে১১ ঘণ্টা আগেএর ফলে টানা ১২ ম্যাচ এবং ৪৮৯ দিনের জয়খরা কাটিয়েছে ভারত। জয়ের পর ভারত কোচ বলেছেন, ‘যখন আপনি জিতবেন, সেটা আপনাকে আনন্দ দেবে। আপনি ভালো বা খারাপ খেলতে পারেন কিন্তু অনেকগুলো ম্যাচের পর জয় পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।’
ভারতের কোচ মানোলো মার্কুয়েজ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না শেখ মুজিবসহ চার শতাধিক নেতার
মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদসহ সত্তরের নির্বাচনে বিজয়ী চার শতাধিক রাজনীতিবিদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি থাকছে না। তাদের পরিচয় হতে যাচ্ছে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।
বিদ্যমান জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন সংশোধনের চূড়ান্ত খসড়ায় এ প্রস্তাব করা হয়েছে। জামুকার ৯৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১০ মার্চ এ-সংক্রান্ত রেজুলেশনে (খসড়াসহ অন্যান্য বিষয়) স্বাক্ষর করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।
আইন সংশোধনের খসড়া অনুযায়ী, শুধু মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতিবিদই নন, আরও চার শ্রেণির স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। এই চার শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধারা হলেন– প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছেন এবং বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। দ্বিতীয়ত, যারা মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূতসহ অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তৃতীয়ত, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। এবং চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।
মন্ত্রণালয়-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খসড়া কার্যকর হলে বিদ্যমান মুক্তিযোদ্ধার চূড়ান্ত তালিকার অন্তত ১০ হাজার বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় বদলে যাবে। তাদের পরিচয় হবে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী।
খসড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক সমকালকে বলেন, “রাজনীতিবিদরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে থাকবেন না। বীর মুক্তিযোদ্ধা কেবল তারাই থাকবেন, যারা রণাঙ্গনে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। অন্য সবার পরিচয় হবে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’। এখানে কারও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে না। সবার সুযোগ-সুবিধা একই থাকবে।”
উপদেষ্টা আরও বলেন, বিষয়টি অনেকেই বুঝতে ভুল করছেন। মুক্তিযুদ্ধে যিনি যেভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি সেভাবেই স্বীকৃতি পাবেন।
মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর সংজ্ঞায় প্রথমদিকে বীরাঙ্গনা এবং সীমান্তবর্তী ভারতের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের চিকিৎসক ও নার্সদের নাম থাকলেও চূড়ান্ত খসড়ায় সেটি না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘তাদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি বহাল থাকবে।’
উপদেষ্টা জানান, খসড়াটি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছে। শিগগিরই উপদেষ্টা পরিষদের সভায় অধ্যাদেশটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সমকালকে বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের সত্যটা জানি। কোনো আইন বদল করে কারও অবদান বদলে দেওয়া যাবে না। এটি করার প্রয়োজন নেই। এগুলো অপ্রয়োজনীয় কাজ, অপচয়মূলক কাজ।’ তাঁর মতে, যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত, তাদের পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলা ঠিক না। কেউ যদি ভুয়া (অমুক্তিযোদ্ধা) হয়, তাকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার না করে বরং দেশের অর্থনীতির দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের তাকানো উচিত।
মানবাধিকার নেত্রী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুলতানা কামাল সমকালকে বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি জনযুদ্ধ। এই যুদ্ধ শুধু একটি কনভেনশনাল সামরিক যুদ্ধ ছিল না। একই সঙ্গে এর অন্যতম মূল অংশ ছিল রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক।
সেই সময়কার সাড়ে সাত কোটি মানুষের অধিকাংশই কোনো না কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অনুযায়ী সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে দেশকে শত্রুমুক্ত করতে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় ভুলত্রুটি সংশোধন অবশ্যই কাম্য। তবে ঢালাওভাবে মুক্তিযুদ্ধকালীন এমএনএ বা এমপিএ, গণপরিষদ সদস্যসহ সবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় বাতিল করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।’
মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতিবিদ
১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৭২’ জারি করেন। ওই বছরের ২৩ মার্চ গণপরিষদ আদেশ জারি করা হয়। এই আদেশবলে ১৯৭০ সালের ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচিত ৪৬৯-এর (জাতীয় পরিষদে ১৬৯, আর প্রাদেশিক পরিষদে ৩০০) মধ্যে ৪০৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হয় গণপরিষদ। ৪০৩ জনের মধ্যে ৪০০ সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের, একজন ছিলেন ন্যাপের আর দু’জন নির্দলীয়। স্বাধীনতার পর প্রণীত বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তাদের মধ্যে ১ হাজার ৩৬১ জনকে ‘লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা’ শ্রেণিতে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাসহ গণপরিষদের সদস্যও আছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বর্তমানে ৩৬টি শ্রেণি রয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া কার্যকর হলে গণপরিষদ সদস্যদের নিয়ে প্রণীত লাল মুক্তিবার্তা স্মরণীয় যারা বরণীয় যারা, বিসিএস ধারণাগত খেতাবপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিশ্বজনমত গঠনকারী প্রবাসী সংগঠক, মুজিবনগর, স্বাধীন বাংলা বেতার শিল্পী, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের গেজেটভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় বদলে যাবে। এর বাইরে বেসামরিক গেজেটে থাকা প্রায় দুই লাখ মুক্তিযোদ্ধার মধ্য থেকেও কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধার পরিচয় নিয়ে সংকট দেখা দেবে।
খসড়াটি অধ্যাদেশ হিসেবে প্রকাশের পর বেসামরিক গেজেটের তালিকা থেকে রণাঙ্গনে অংশ না নেওয়া অন্য শ্রেণির মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই শুরু করবে মন্ত্রণালয়।
তালিকার পর তালিকা
স্বাধীনতার পর ১৯৮৬ সালে প্রথম জাতীয় কমিটির তালিকার ভিত্তিতে এক লাখ দুই হাজার ৪৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধার নাম পাঁচটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়। তবে এটির গেজেট হয়নি। ১৯৮৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল ৭০ হাজার ৮৯২। পরে ১৯৯৪ সালে বিএনপির আমলে করা তৃতীয় তালিকায় ৮৬ হাজার মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হন।
১৯৯৮ থেকে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে প্রকাশিত চতুর্থ তালিকায় ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪৫২ জনের নাম মুক্তিবার্তায় প্রকাশিত হয়। ২০০৬ সালে বিএনপি সরকারের আমলে গেজেটে প্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৯৮ হাজার ৮৮৯-এ। ২০২৩ সালে বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ষষ্ঠ দফার চূড়ান্ত (সমন্বিত) তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৮ হাজার ৮৫১-তে। এর মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ১০ হাজার ৯৯৬ জন।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর গত ১৪ আগস্ট নতুন করে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাই করে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তখন তালিকা থেকে অমুক্তিযোদ্ধা যাচাইয়ের কথা বলা হলেও পরে বিদ্যমান আইন সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা
১৯৭২ সালে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট গঠনের সময় প্রণীত মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘মুক্তিযোদ্ধা বলতে যে কোনো ব্যক্তি, যিনি মুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত মুক্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।’
২০১৬ সালের ৬ নভেম্বের এক গেজেটের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞা করা হলে এর পরিধি বিস্তৃত হয়। পরে তা জাতীয় সংসদেও পাস করে তৎকালীন সরকার। সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, তারাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’
সংজ্ঞায় রণাঙ্গনের সশস্ত্র বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল, স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী, মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রবাসে পেশাজীবী সংগঠক, ভারতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নেওয়া ব্যক্তি, মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য, পাকিস্তান বাহিনীর দ্বারা নির্যাতিত নারী (বীরাঙ্গনা), মুক্তিযুদ্ধে চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক-নার্সসহ সংশ্লিষ্টদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে এবার সেই মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা সংশোধনের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়।
এ-সংক্রান্ত খসড়ায় পরিবর্তিত বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা অর্থ যাহারা ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামেগঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন, এই রূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তিবাহিনী ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট ( ইপিআর), নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স এবং আনসার সদস্য, তাহারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন।’
খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞাও পরিবর্তন করা হয়েছে। সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘‘‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষায় হানাদার ও পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’’
অথচ বিদ্যমান আইনের সংজ্ঞায় বলা রয়েছে, “‘মুক্তিযুদ্ধ’ অর্থ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়া দখলদার ও হানাদার পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম ও মুসলিম লীগ এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, মুজাহিদ বাহিনী ও পিস কমিটির বিরুদ্ধে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ।”
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম সমকালকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য নানা মহল সচেষ্ট। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে প্রশ্ন তোলা সেটারই ধারাবাহিকতা। তাদের মনে রাখা উচিত, কয়েক দশকের আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। এটি ছিল পরিকল্পিত সংগ্রাম। রাজনীতিবিদরাই জনগণকে পথ দেখিয়েছেন। তাদের নেতৃত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে জনগণ অবহিত। তাই এ নিয়ে বিতর্ক করা সমীচীন নয়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীরবিক্রম সমকালকে বলেন, ‘বিষয়টি আরও ভালোভাবে বোঝা দরকার।’ তিনি এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করবেন বলেও জানিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব সমকালকে বলেন, ‘আশা করব, বৃদ্ধ বয়সে মুক্তিযোদ্ধারা যেন আর নতুন করে হয়রানি না হন। মুক্তিযুদ্ধ জাতির ইতিহাসে মীমাংসিত সত্য। তাই এ বিষয়টি নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টির অবকাশ নেই।’