কেন্দ্রীয় নেতা মিনু, বুলবুল, মিলনকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেন মহানগর বিএনপির ৩ নেতা
Published: 20th, March 2025 GMT
কেন্দ্রীয় শীর্ষ তিন নেতা- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু, কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এবং বিএনপির ত্রাণ ও পূনর্বাসনবিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলনকে সতর্কীকরণ চিঠি দিয়েছে রাজশাহী মহানগর বিএনপি।
সোমবার দিবাগত রাতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ এবং বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে তিন নেতাকে সতর্ক করা হয়। চিঠি পেয়ে বিএনপির এই শীর্ষ তিন নেতা বলেছেন, ‘মহানগর বিএনপির তিন নেতার রাজনৈতিক জ্ঞান ও শিষ্টাচারের অভাব রয়েছে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞারও অভাব রয়েছে। দলীয় চেয়ারপারসনের রোগমুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো, বিএনপিকে সুসংগঠিত করা এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে জনমত সৃষ্টি করতে তারা রাজপথে জনগণকে নিয়ে কাজ করছেন। এই চিঠি পাঠিয়ে তারা দলীয় চেয়ারপারসনকেই অপমান করেছেন।’
বিএনপির এই শীর্ষ তিন নেতাকে পাঠানো আলাদা চিঠিতে মহানগর বিএনপি উল্লেখ করেছে, মিজানুর রহমান মিনু, মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলন বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে রাজশাহী মহানগর বিএনপিকে অগ্রাহ্য করে মহানগর বিএনপির অধিনস্থ বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডে বিএনপির দলীয় ব্যানার ব্যবহার করে কর্মসূচি পালন করছেন। তবে ওইসব ইউনিট নেতাদের না জানিয়ে তারা নিজ খেয়াল খুশিমত বিভিন্নজনকে সাংগঠনিক পদ পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন, যা গঠনতন্ত্র পরিপন্থি ও সংগঠনের চরম বিধিলঙ্ঘন।
চিঠিতে বলা হয়, এমন কর্মকাণ্ডে দলের ঐক্য বিনষ্টসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, যা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমতাবস্থায় সংগঠনের ঐক্য ও শৃঙ্খলার স্বার্থে এমন কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে সতর্কীকরণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা বলেন, ‘সংগঠনের শৃঙ্খলা ফেরাতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রাখছেন না। মহানগরে কমিটি আছে। তারা কমিটির মাধ্যমে অনুষ্ঠান করতে পারেন। এটা না করে আমাদের আগের কমিটি দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। এজন্য বিশৃঙ্খলা হতে পারে। ঐক্য বিনষ্ট হতে পারে।’
কেন্দ্রীয় নেতাদের মহানগর নেতারা কিভাবে চিঠি দেয়- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা কেন্দ্র, মহানগর হোক, যেকেউ হোক, তারেক রহমান আসলেও- আমাদের না বলে প্রোগ্রাম করবে? আমাদের জানাতে হবে। কারণ, আমরা প্রোগ্রাম আয়োজন করবো।’
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মামুন অর রশিদ বলেন, ‘যারা কমিটিতে নেই, তাদের কর্মসূচিতে তারা তিনজন যেন অংশ না নেন- এজন্য অনুরোধ করেছি।’
চিঠিতে সতর্কীকরণ লেখা থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চিঠিতে যাই লেখা থাকুক, আপনি লেখেন, অনুরোধ করেছি।’
এ বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান ছাড়া এটা কেউ করতে পারে না। এটা অবশ্যই তাদের বেয়াদবি। আমরা দলীয় চেয়ারপারসনের রোগমুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফেরানো, বর্তমান সরকার একেক সময় একেক কথা বলে জনগনকে শঙ্কায় ফেলছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পুরোই বিপর্যয়ে, দ্রুত নির্বাচন এবং বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে প্রতিদিনই ইফতার, দলীয় কর্মসূচিসহ রাজপথে আছি। এসব প্রোগ্রামে সবাইকেই ডাকা হয়। আয়োজকরাই ডাকে। তারা এ ধরণের চিঠি দিয়ে দলের চেয়ারপারসনকেই অপমান করেছেন। দলীয় গঠনতন্ত্র সম্পর্কে যারা জ্ঞানশূন্য; তারা এসবই করতে পারেন।’
বিএনপির ত্রাণ ও পূনর্বাসনবিষয়ক সহ-সম্পাদক শফিকুল হক মিলন বলেন, ‘ওরা না বুঝেই চিঠি দিয়েছে। ওরা বুঝে না। এদের পলিটিক্যাল জ্ঞান খুবই কম। জ্ঞান গরিমার অভাব। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও শিষ্টাচারের অভাবে এটা করেছে। আমাদের যার যার নির্বাচনী এলাকায় আমরা নিয়মিত প্রোগ্রাম করছি।’
এ বিষয়ে বিএনপির বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক সাবেক মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুরে ‘পাওনা টাকা চাইতে গেলে’ চোর অপবাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রিকে নির্যাতন
জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নে চুরির অপবাদ দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রেখে এক রাজমিস্ত্রিকে ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি নজরে আসে।
নির্যাতনের শিকার যুবকের নাম মো. মামুন (৩০)। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের গণেশপুর এলাকার আবদুল হাকিমের ছেলে। তিনি পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। গত বুধবার রাতে শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে তাঁকে বেদম পেটানো হয়। গুরুতর আহত মামুনকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। তাঁরা হলেন মো. ইলিয়াস (২৫) ও মো. মিজানুর রহমান। তাঁদের দুজনের বাড়ি শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকায়।
নির্যাতনের ২ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়েছে। এতে দেখা গেছে, পাকা ঘরের মধ্যে একটি বিছানার ওপর খালি গায়ের এক যুবক। প্রথমে তিন ব্যক্তি তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন। এ সময় যুবকটি হাত দিয়ে লাঠির আঘাত ফেরানোর চেষ্টা করছিলেন। তখন হাতেই লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছিল। তাঁর পায়ের তলায় পেটানো হচ্ছিল। তারপর যুবকটিকে বিছানায় শুইয়ে পেটানো হয়। এরপর আরও দুজন পেটানোতে অংশ নেন। একপর্যায়ে যুবকটি বিছানা থেকে নিচে পড়ে যান। এরপর পাঁচজন এক সঙ্গে মেঝেতে ফেলে তাঁকে পেটাচ্ছিলেন। আশপাশে আরও কয়েকজন লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনের মধ্যে কেউ একজন এটি মুঠোফোনে ধারণ করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রি মো. মামুন ওই এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে নির্মাণকাজ করেন। হাসমতের কাছে কাজের টাকা পেতেন মামুন। বুধবার সন্ধ্যার দিকে তাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে ওই বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়। টাকা নিয়ে প্রথমে দুজনের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে হাসমত, তাঁর স্বজন এবং প্রতিবেশীরা রাজমিস্ত্রি মামুনকে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করতে থাকেন। পরে তাঁকে একটি ঘরের ভেতরে নিয়ে ব্যাপক পেটানো হয়।
নির্যাতনের শিকার মামুনের প্রতিবেশী তাহের আলী বলেন, ‘নাতিকে চোর অপবাদ দিয়ে বাড়িতে আটকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করা হয়েছে। শুধু পেটানো হয়নি। দুই ঠ্যাংয়ের মধ্যে রড ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দুটি ঠ্যাংয়ে শুধু রড ও লাঠির আঘাত। অনেকগুলো মানুষ একসঙ্গে তাকে পিটিয়েছে। পিটানোর সময় নাতিটা বারবার বলছিল, সে চুরি করেনি, কাজের পাওনা টাকা চাইতে আসছে, কিন্তু কেউ শোনেনি। আসলে হাসমত তালুকদারের কাছে টাকা চাওয়ার অপরাধে ইচ্ছা করেই তাকে চোরের অপবাদ দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। পিটানোর ভিডিওটি দেখলেই যে কারও চোখের পানি চলে আসবে। এ ঘটনার সঙ্গে প্রত্যেক ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’
রাজমিস্ত্রি মো. মামুন পাওনা টাকা ফেরত চাইতে গেলে চোর অপবাদ দিয়ে তাঁকে কয়েকজন পেটান। জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর পূর্ব পাড়া এলাকার হাসমত তালুকদারের বাড়িতে