কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু ২৪৪ পরিবার পেল নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী
Published: 20th, March 2025 GMT
কক্সবাজার পৌরসভার সমুদ্র উপকূলীয় কুতুবদিয়াপাড়ায় জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের ৫৪ জন শিশুর হাতে ঈদের নতুন পোশাক তুলে দিয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। একই সঙ্গে কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়ার হতদরিদ্র আরও ১৯০ পরিবারে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ঈদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।
এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।
বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা কমিটির উপদেষ্টা উম্মে সাদিয়া হোসেন সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল, প্রথম আলো কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস, বন্ধুসভার সহসভাপতি মো.
প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ লিটার ভোজ্যতেল, ৪ প্যাকেট নুডলস, ৪ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি চিনি, আধা কেজি লবণ, ৫০ গ্রাম কিশমিশ ও ৭৫ গ্রাম দুধ। এসব খাদ্যসামগ্রী বন্ধুসভাকে সরবরাহ করে জেলা প্রশাসন।
খাদ্যসামগ্রী হাতে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নাজের আহমদ। পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়াতে মেয়ের ঘরের থাকেন তিনি। আগে শুঁটকি মহালে কাজ করতেন। এখন কাজ করার মতো শক্তি নেই।
নাজের আহমদের পৈতৃক বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক এলাকাতে। একানব্বইয়ের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী, ২ ছেলে ২ মেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরপর চার ছেলে নিয়ে তিনি কুতুবদিয়া থেকে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়ায় সরকারি খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।
নাজের আহমদ বলেন, রোজার মাসে খুব কষ্টে দিন কাটছিল। ঈদ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, প্রথম আলোর খাদ্যসহায়তা পেয়ে চিন্তা দূর হলো।
ঈদের নতুন জামা পেয়ে মহাখুশি কুতুবদিয়া পাড়ার রবিউল হাসান (১২)। তার বাবা আবুল সেলিম মাছ ধরার ট্রলারের জেলে। কয়েক মাস ধরে বেকার। মা শুঁটকি মহালে কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে না। রবিউল বলে, ‘বাবা বলেছিল এবারের ঈদে নতুন জামা কিনে দিতে পারবেন না। তাই মন খারাপ ছিল। এখন আমি খুব খুশি। নতুন জামা পরে বন্ধুদের সঙ্গে শহরে ঘুরতে পারব।’
একই কথা জানায় সমিতিপাড়ার মেয়ে তামান্না মুনি (১১)। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে তার বাবা নিখোঁজ হন। মা শুঁটকি মহালে কাজ করলেও মাসখানেক ধরে বেকার।
ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, বন্ধুসভার সদস্যরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকেন। আজকের কাজটি অনন্য এবং প্রশংসনীয় হয়েছে। উপযুক্ত মানুষের হাতে খাদ্যসহায়তা ও নতুন জামা তুলে দিতে পেরে তিনিও খুশি হয়েছেন।
পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে মনে রাখার জন্য তিনি বন্ধুসভার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার সহসভাপতি আবদুল নবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, অর্থ সম্পাদক উগগ্যা মারমা, বন্ধুসভার কক্সবাজার সরকারি কলেজ সভাপতি সুরাজ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক আয়েশা নূরী, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রুয়াজ উদ্দিন প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষে পুকুরে ১০ হাঁস ধরতে নামে ৪০ প্রতিযোগী
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিয়ে মানুষ ভিন্ন আয়োজনে মেতে ওঠে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পুকুরের পানিতে সাঁতরে হাঁস ধরা প্রতিযোগিতা উৎসবমুখর ছিল। এ প্রতিযোগিতা দেখতে পকুরের চারপাশে উৎসুক মানুষ ভিড় জমায়।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকালে উপজেলা পরিষদ পুকুরে এ আয়োজন করা হয়। ১০টি হাঁস ধরতে নামে ৪০ জন প্রতিযোগী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহেদ আরমান ও রায়পুর আর্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর মজুমদার প্রমুখ।
প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীরা পুকুরের দক্ষিণ পাশে ছিল। উত্তর পাশ থেকে হাঁসগুলো পুকুরের পানিতে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রতিযোগীরা সাঁতরে এসে হাঁসগুলো ধরতে চেষ্টা করেন। অনেক চেষ্টার পর ১০ জন প্রতিযোগী ১০টি হাঁস ধরতে সক্ষম হন।
আরো পড়ুন:
কারাবন্দিদের অন্যরকম বর্ষবরণ
বৈশাখে চিড়িয়াখানায় দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস
রায়পুর আর্ট স্কুলের প্রধান শিক্ষক শংকর মজুমদার বলেন, ‘‘পহেলা বৈশাখ বাংলা ভাষীদের জন্য ঐতিহাসিক দিন। এটি বাঙালি জাতির ঐতিহ্য। যুগ যুগ ধরে আমরা এই ঐতিহ্য ধারণ করে আসছি। সেই আলোকে নানা আয়োজন করা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ ঐতিহ্য হাঁস খেলার আয়োজন করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ আয়োজনে মানুষ আনন্দ পেয়েছে।’’
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান জানান, নববর্ষ উপলক্ষে শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এরপর উপজেলা পুকুরে হাঁস ধরা প্রতিযোগিতা হয়। এতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে এ আয়োজন করা হয়।
ঢাকা/লিটন/বকুল