মার্কিন নভোচারী সুনিতা উইলিয়াম ও বুচ উইলমোর। ৮ দিনের অভিযানে মহাকাশে গিয়েছিলেন তারা। তবে মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ৯ মাস সেখানে অবস্থান করতে বাধ্য হন তারা। গত মঙ্গলবার পৃথিবীতে ফিরেছেন। এই দীর্ঘ সময় সেখানে কীভাবে জীবনধারণ করেছেন তারা আর পৃথিবীতে ফেরার পর শারীরিক কেমন পরিবর্তন ঘটতে পারে তাদের- বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন কিছু তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানব শরীর সাধারণত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে কাজ করে অভ্যস্ত। ফলে মহাকাশে ভরহীন অবস্থায় সময় কাটানো শেষে পৃথিবীতে ফেরার পর নভোচারীর শরীর পুরোপুরি সেরে উঠতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে।

মানবদেহ নিয়ে গবেষণা করেন সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডামিয়ান বেইলি। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মানুষকে যেসব পরিবেশের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তার মধ্যে মহাকাশের পরিবেশ সবচেয়ে কঠিন। এই চরম অবস্থা সামলানোর ক্ষেত্রে মানুষ অভ্যস্ত নয়। মহাকাশে প্রবেশ করলে মানুষের শরীরে পরিবর্তন আসে। প্রাথমিকভাবে সে অনুভূতিকে অসাধারণ মনে হয়।

২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক মহাকাশকেন্দ্রে গিয়েছিলেন নভোচারী টিম পিক। তিনি বলেন, এটা ছুটির দিনের মতো। হৃৎপিণ্ড ঢিলেঢালাভাবে কাজ করলেই হবে। পেশি ও হাড়গুলো বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করতে হয় না। অসাধারণ শূন্য-মাধ্যাকর্ষণের পরিবেশে মহাকাশকেন্দ্রের চারপাশে আপনি ভেসে বেড়াবেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহাকাশে মানুষের হৃৎপিণ্ড ও রক্তনালিগুলোর তেমন একটা কাজ থাকে না। অলস অবস্থায় থাকতে থাকতে এগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। পুরোনো হাড় ভেঙে নতুন হাড় গঠনে ভূমিকা রাখা কোষগুলোর মধ্যে ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। তবে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে গিয়ে এগুলোর ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটে। হাড়গুলো দুর্বল ও বেশি ভঙ্গুর হয়ে যায়। প্রতি মাসে তাঁদের হাড় ও পেশির প্রায় ১ শতাংশ শুকিয়ে যায়। এতে বার্ধক্য ত্বরান্বিত হয়। পৃথিবীতে ফিরে আসার পর তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, ক্যাপসুল থেকে বের হয়ে এসে স্ট্রেচারে ওঠার মতো কাজ নভোচারীরা একা একা করতে পারেননি। তাদের অন্যের কাছ থেকে সহযোগিতা নিতে হয়েছে। আর এসব কারণে নভোচারীদের অনেক ভালো রকমের শারীরিক অবস্থা নিয়ে মহাকাশে যেতে হয়। এখন সুনিতা ও বুচকে তাদের শরীরের হারিয়ে যাওয়া কার্যক্ষমতা ফিরে পেতে জোরেশোরে শরীরচর্চা করতে হবে।

মহাকাশে যাওয়া প্রথম ব্রিটিশ নভোচারী হেলেন শারমান বলেন, তাদের পেশির ভর তৈরি করতে সম্ভবত কয়েক মাস সময় লাগবে। হাড়ের ভর ঠিক করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। তবে তা পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় নাও ফিরতে পারে। শুধু পেশি আর হাড়ই নয়, মহাকাশে পুরো শরীরেই বদল আসতে পারে। মানুষের শরীরে থাকা ভালো ব্যাকটেরিয়ার ধরন বদলে যায়। শরীরের তরল পদার্থগুলোর ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে। পৃথিবীর মতো পায়ের দিকে না নেমে মহাকাশে তরল পদার্থ বুক ও মুখের দিকে ওপরে উঠে যায়। মহাকাশ থেকে ফেরার পর মানুষের শরীরে প্রথম যে পরিবর্তনটি চোখে পড়ে তা হলো, মুখ ফুলে যাওয়া।

তিনি আরও বলেন, মহাকাশে মস্তিষ্কে পরিবর্তন আসতে পারে। অপটিক নার্ভ, রেটিনাসহ চোখে বিভিন্ন রকমের পরিবর্তন আসতে পারে। এমনকি চোখের আকারও বদলে যেতে পারে। মহাকাশযাত্রার ক্ষেত্রে নিউরো–অকুলার সিন্ড্রোম নামক জটিলতা দেখা দিতে পারে। এতে চোখে ঝাপসা দেখাসহ অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হতে পারে। এছাড়া মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার পর শরীর খাপ খাওয়াতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।

টিম পিকস বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে ঝিমুনি ভাব, শরীরের ভারসাম্য আনা এবং স্বাভাবিকভাবে হাঁটার শক্তি ফিরে পেতে দুই-তিন দিন সময় লেগে যেতে পারে। মহাকাশ থেকে পৃথিবীতে ফেরার প্রথম দুই-তিনটা দিনকে অত্যন্ত সাজাপূর্ণ বলে মনে হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ র র পর ক জ কর অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে নাশকতার মামলায় সাংবাদিক কারাগারে

নাশকতা মামলায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি আবেদুজ্জামান আমিরীকে গ্রেপ্তার করেছে যৌথ বাহিনী। গত বুধবার সন্ধ্যায় পটিয়া থানার মোড় এলাকা থেকে সাংবাদিক আবেদ আমিরীকে তুলে নিয়ে যায় র‍্যাবের একটি দল। পরে রাত ১১টার দিকে তাঁকে চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর থানায় হস্তান্তর করা হয়। সেখানে তাঁকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে পাঠানো হলে তিনি জামিন আবেদন করেন। পরে বিচারক আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালে স্থানীয় এক বিরোধের ঘটনায় গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনা মিশিয়ে ওই বছরের ২০ আগস্ট একটি মামলা করেন হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দাম। ওই মামলায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। ৩১ আসামির মধ্যে পটিয়া এলাকার দু’জনকেও মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এর একজন সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরী। 

আবেদ আমিরীর সহকর্মীরা অভিযোগ করেন, গত ৪ আগস্ট আবেদ আমিরী চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ভাঙচুর করেছেন বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে। অথচ তিনি ওই দিন হালিশহরেই যাননি, সারাদিন ছিলেন পটিয়াতে। তারা বলেন, আমিরীকে হালিশহর থানায় করা মামলাটির বাদী চেনেনও না। বাদী নিজেও বলেছেন, ৪ আগস্টের ভাঙচুরের ঘটনায় আমিরী জড়িত নন। তাঁর স্বজন বলছেন, পটিয়ারই কেউ ষড়যন্ত্র করে আমিরীর নাম হালিশহরের মামলায় ঢুকিয়েছে।

মামলার বাদী হালিশহরের মুন্সীপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সাজ্জাদ আহমেদ সাদ্দামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীকে চেনেন না বলে জানান।

এদিকে সাংবাদিক আবেদকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। তারা অবিলম্বে সাংবাদিক আবেদুজ্জামান আমিরীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।

এ ব্যাপারে হালিশহর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি হিসেবে যৌথ বাহিনী আবেদ আমেরীকে গ্রেপ্তার করেছে। 


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ