সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে: আলী রীয়াজ
Published: 20th, March 2025 GMT
বিভিন্নভাবে সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ। তিনি বলেছেন, সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা বাইরে থেকে হচ্ছে, ভেতর থেকেও হচ্ছে।
‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে আলী রীয়াজ এ কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আজ বৃহস্পতিবার এই বৈঠকের আয়োজন করে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
এই গোলটেবিল আলোচনায় বক্তাদের কথায় উঠে আসে, দেশের শাসনব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো স্বৈরাচার তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। তাই প্রাতিষ্ঠানিক, কাঠামোগত সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে সংস্কারের সঙ্গে নির্বাচনের কোনো বিরোধ নেই। এটা একসঙ্গেই চলতে পারে। কিছু জরুরি সংস্কার করে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। কেউ কেউ বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলো স্বাধীনতার এত বছরে প্রয়োজনীয় সংস্কার করেনি। তাই সংস্কার না করে কোনোভাবেই নির্বাচন দেওয়া যাবে না।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, বিভিন্নভাবে সংস্কারপ্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। বাইরে থেকে হচ্ছে, ভেতর থেকেও হচ্ছে। যারা মনে করে, বর্তমান কাঠামো অব্যাহত রাখা দরকার। বিশেষ করে যারা পরাজিত শক্তি, তারা এটা মনে করে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
আলী রীয়াজ আরও বলেন, নাগরিকদের অংশগ্রহণ, চাপ ও অন্তর্ভুক্তি ছাড়া কোনোভাবেই সংস্কারপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর পর নাগরিকদেরও মতামত নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘যে অভাবনীয় রক্তপাতের মধ্য দিয়ে এ জায়গায় এসেছি, সেখান থেকে খালি হাতে ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
আলী রীয়াজ বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই দুর্বল ও ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানগুলোকে গত ১৬ বছরের ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন ধ্বংস করে দিয়েছে। সংস্কারের প্রশ্ন উঠেছে সে কারণেই। বিচার বিভাগ কার্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন দরকার। জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করা না গেলে নির্বাচন হলেও আগের পরিস্থিতি হবে। তাই কাঠামোগত সংস্কারের আর কোনো বিকল্প নেই। বর্তমান কাঠামোগত ব্যবস্থায় স্বৈরতন্ত্রের মোকাবিলা করা যাবে না।
সংবিধান সংস্কারের প্রস্তাবিত সুপারিশে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিয়ে বহুত্ববাদ ও রাষ্ট্রধর্ম রাখার মধ্যে স্ববিরোধিতা আছে, বিভিন্ন কমিশনের সুপারিশে মতপার্থক্য আছে; এ নিয়ে এক বক্তার প্রশ্নের উত্তরে আলী রীয়াজ বলেন, সব কমিশন স্বাধীন সুপারিশ করেছে। রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে এটি চূড়ান্ত হবে। আর বিদ্যমান সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা থাকলেও বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে। বহুত্ববাদ সবার প্রতিনিধিত্ব করবে। বিভিন্ন সময় প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলেও রাষ্ট্রধর্ম বাতিল করেনি। এর একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা আছে। সংবিধান সংস্কার কমিশনের সদস্যরা সব বিষয়ে ঐকমত্য হলেও রাষ্ট্রধর্ম রাখার বিষয়ে সবাই একমত হননি।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের মূলত তিনটি দায়িত্ব। স্বৈরাচার যাতে আর ফিরতে না পারে, তাই গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার করা। যারা অন্যায় করেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, তাদের বিচার করা। আর নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এ তিনটা একটা আরেকটার প্রতিবন্ধকতা নয়, একসঙ্গে সমান্তরালে চলতে পারে। নির্বাচনের জন্য কিছু সংস্কার এখনই করতে হবে। কিছু নির্বাচনের পরে করলেও হবে। নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও দায়বদ্ধ করতে হবে। নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকার দরকার।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী বলেন, ৯০ শতাংশের বেশি মানুষ সংস্কার চায়। রাজনৈতিক দলগুলোও চায়। তারা প্রস্তাব দিচ্ছে। এটা জাতীয় দাবি। স্বৈরাচার জন্ম নেয় ভঙ্গুর প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। প্রতিষ্ঠান ছাড়া গণতন্ত্র হবে না। এগুলো ঠিক করতে হবে। না হলে সংকটে থাকা রাষ্ট্র আরও গভীর সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের অনেক দোষ আছে, কিন্তু রাজনৈতিক দল ছাড়া দেশ চালানো যাবে না। দলে সংস্কার করতে হবে। তবে নির্বাচনের দিকে না গিয়ে সংস্কারের দিকে গেলে, তা হবে বিরাজনীতিকরণ। যৌক্তিক কিছু সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, বিচার বিভাগ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে, সেগুলো সংস্কারে কমিশনের সুপারিশে এসেছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। নাগরিকদের মতামত পেলে এটি আরও সমৃদ্ধ হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার বলেন, ২০০৭-০৮ সালের পর সংস্কার শব্দটা গালিতে পরিণত হয়েছিল, এখন আর সেটা মনে করা হচ্ছে না। অনেক কমিশন করা হয়েছে, সহস্র সুপারিশ এসেছে। তবে সাংবিধানিক সংস্কারটাই আসলে মূল সংস্কার। পাকিস্তান সরকারের সময়কার নির্বাচনে বিজয়ী সদস্যদের নিয়ে গণপরিষদ গঠন করে ১৯৭২ সালে সংবিধান করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের উপযোগী হয়নি। এরপর সংবিধান সংশোধন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থে হয়েছে।
সাংবাদিক আবু সাঈদ খান বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান নিয়ে ওই সময় কোনো বিতর্ক হয়নি, শুধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন এম এন লারমা। সংবিধানে সব জাতিগোষ্ঠীকে রাখা দরকার। সংবিধানে পরে কালাকানুন ঢুকে গেছে, এটার সংশোধন দরকার, পুনর্লিখন নয়। তিনি বলেন, লাখো শহীদের বিনিময়ে পাওয়া সংবিধান কলমের খোঁচায় কেউ বদলে দিতে পারে না। সংস্কার প্রস্তাবে ধর্মনিরপেক্ষতা তুলে দিয়ে রাষ্ট্রধর্ম রেখে দেওয়া যৌক্তিক হয়নি। ধর্মনিরপেক্ষতা আওয়ামী লীগের বিষয় নয়। এটা সবার আন্দোলন ছিল। প্রজাতন্ত্রের জায়গায় নাগরিকতন্ত্র নিয়ে আসাটাও অযৌক্তিক।
রাজনৈতিক দলকে সংস্কারে বাধ্য করতে হবে
গোলটেবিলে অংশ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিক প্রতিনিধিরা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো অতীতে সংস্কার করেনি। এ কারণেই আন্দোলন হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন রদ করে গণভোটের ব্যবস্থা করা হোক, জনগণ সিদ্ধান্ত দেবে। রাজনৈতিক দল কখনো ঐকমত্যে আসবে না, তবু সংস্কার করতে হবে। নির্বাচন হলে একদল গেছে আরেক দল আসবে, কোনো কিছু বদলাবে না। তাই দলগুলোকে বাধ্য করতে হবে সংস্কার মানতে।
২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করা শিক্ষার্থী জাহিদ হাসান বলেন, সংস্কার করেই এ সরকার গদি ছাড়ার কথা বলুক। জীবনের বিনিময়ে এ সরকার এসেছে। তবে একটি সুপারিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২১ বছরে একজনের লেখাপড়া শেষ হয় না, তিনি কীভাবে সংসদ সদস্য হয়ে দেশ চালাবেন!
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারে রাজনৈতিক ঐকমত্য ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা। সিরডাপ মিলনায়তন, ঢাকা, ২০ মার্চ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ষ ট রধর ম স স ক র কর ব যবস থ র মন র ন র জন দরক র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচন বিলম্বিত হয় এমন সংস্কারকে ‘না’ বলবে বিএনপি
পাঁচটি সংস্কার কমিশনের দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর যে মতামত চেয়েছে, বিএনপি তা এখনো দেয়নি। দলটি ‘রাষ্ট্র সংস্কার করবে নির্বাচিত সংসদ’—এমন নীতিগত অবস্থানের ভিত্তিতে জবাব প্রস্তুত করছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের মৌলিক সংস্কারে খুব আপত্তি থাকবে না বিএনপির। তবে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারে হাত দিলে নির্বাচন বিলম্বিত করতে পারে, তাই এ ধরনের সংস্কারপ্রক্রিয়ায় একমত হবে না দলটি।
সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন ও বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশের বিষয়ে মতামত চেয়ে ৬ মার্চ ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে চিঠি ও ‘স্প্রেডশিট’ পাঠিয়েছিল ঐকমত্য কমিশন। ওই স্প্রেডশিটে বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাবের ওপর ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’—এই তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে দলগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছিল। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫টি দল তাদের মতামত জানিয়েছে। বাকিরা সময় চেয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জানাবে বলে ঐকমত্য কমিশনকে জানিয়েছে।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শুরু বৃহস্পতিবার১৬ ঘণ্টা আগেজাতীয় ঐকমত্য কমিশনে দলীয় মতামত জমা দিয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করে তা প্রকাশ করবে। সেখানে সংস্কারের বিষয়ে দলের অবস্থান বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ঘোষিত রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা প্রস্তাবের আলোকে পাঁচ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে মতামত তৈরি করছে বিএনপি। একই সঙ্গে সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বা প্রস্তাবগুলোর ওপর বিএনপি এবং বিগত যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় অভিন্ন মতামত তুলে ধরার চেষ্টা চলছে। এ লক্ষ্যে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছে বিএনপি। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি একটা বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের নেতৃত্বের বার্তাও দিতে চায়। ইতিমধ্যে যুগপৎ আন্দোলনের তিনটি শরিক দল ঐকমত্য কমিশনে মতামত জমা দিয়েছে। বিএনপিসহ বাকি মিত্র দলগুলো আগামী সপ্তাহে মতামত জমা দিতে পারে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে মতামতের বিষয়ে দলীয় অবস্থান চূড়ান্ত করতে বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদের নেতারা গত কয়েক দিনে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। গত রোববার দলের স্থায়ী কমিটির সভা হয়েছে। তাতে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় ঐকমত্য কমিশনের পাঠানো সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনসহ পাঁচ সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে দলীয় প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
আরও পড়ুননির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল বাড়াল ‘সংক্ষিপ্ত’ ও ‘বৃহৎ সংস্কার’ ১৭ মার্চ ২০২৫ওই সূত্র জানিয়েছে, সংবিধান সংস্কারের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে একমত প্রকাশ করবে বিএনপি। তবে এ ক্ষেত্রে দলের নীতিনির্ধারণী নেতারা মনে করেন, সংবিধান সংস্কারের এখতিয়ার নির্বাচিত সংসদের। নির্বাচিত সংসদই সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার আনবে। এর বাইরে নির্বাচন ও প্রশাসনিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোর ওপর জোর দেবে বিএনপি। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিএনপির নেতারা। দলটির নেতারা মনে করেন, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা পোক্ত করতে সংবিধানকে ইচ্ছেমতো কাটাছেঁড়া করেছে। নির্বাচনব্যবস্থাকে পুরোপুরি দলীয়করণ করেছে। তাই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রয়োজন। এ জন্য জরুরি ভিত্তিতে সংবিধান ও নির্বাচনব্যবস্থায় যে ধরনের সংস্কার প্রয়োজন, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দিয়ে মতামত তুলে ধরবে বিএনপি।
আরও পড়ুননির্বাচন বিলম্বিত করার টালবাহানা জনগণ মেনে নেবে না: নজরুল ইসলাম খান১৬ মার্চ ২০২৫মতামত চূড়ান্ত করার জন্য সমমনা ও মিত্র দলগুলোর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলছেন বিএনপির নেতারা।
যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল গণসংহতি আন্দোলন দু-এক দিনের মধ্যে ঐকমত্য কমিশনে দলীয় মতামত জানাবে। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রথম আলোকে জানান, যেসব বিষয়ে ব্যাখ্যা আছে, সেগুলো তাঁরা নোট আকারে দেবেন।
তবে জোনায়েদ সাকি মনে করেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন যেসব বিষয়ে সর্বসম্মত হবে, সেটা ‘জাতীয় সনদ’ হিসেবে গৃহীত হবে। আর যেগুলোতে বিরোধ থেকে যাবে, সেগুলো অধিকতর জনমত সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা হিসেবে থাকবে।
আরও পড়ুনওদের হাতের কোনো সংস্কার আমরা সহজে মেনে নেব না: মির্জা আব্বাস১৬ মার্চ ২০২৫বিএনপির কিছু অবস্থানসংশ্লিষ্ট নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতিমধ্যে বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে ‘সেকেন্ড রিপাবলিক’ ও ‘গণপরিষদ নির্বাচন’ নাকচ করে দিয়েছে। সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির নির্বাচন ও প্রাদেশিক সরকারের ফর্মুলায় সম্মত নয় বিএনপি। তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদকালে একসঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে নয় দলটি। এমনকি জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরুদ্ধে। সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ন্যূনতম বয়স কমিয়ে ২১ বছর করার বিষয়েও বিএনপির আপত্তি থাকবে। একই ব্যক্তি পরপর দুবার প্রধানমন্ত্রী হবেন না, এমন প্রস্তাব দেবে বিএনপি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রস্তাবও থাকবে। আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে কিংবা আইনসভা ভেঙে গেলে পরবর্তী নির্বাচিত সরকার শপথ না নেওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালন করবে, এই বিধানে অসম্মতি জানাবে বিএনপি। তবে নির্বাচনকালীন ৯০ দিনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকার থাকার বিষয়ে দলটি ঐকমত্যের কথা জানাবে। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ, দায়িত্ব ও ক্ষমতা এবং স্বার্থের দ্বন্দ্ব স্পষ্টীকরণ ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়ন করার বিষয়ে মতামত দেবে বিএনপি।
আরও পড়ুনসংস্কার নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত দিয়েছে আরও ৪ দল১৬ মার্চ ২০২৫বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া স্প্রেডশিটে বিস্তারিত সবকিছু উঠে আসেনি। তাই আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে স্প্রেডশিটের পাশাপাশি বিস্তারিত প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করব। যাতে কোনো রকমের বিভ্রান্তির সুযোগ না থাকে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দেওয়া সংস্কার প্রস্তাবগুলোর ওপর বিএনপির দলীয় মতামত প্রস্তুত করা হয়েছে। শিগগির সেগুলো কমিশনে জমা দেওয়া হবে। এখন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে পরামর্শ ও আলোচনার পরেই তা জমা দেওয়া হবে।
তবে বিএনপি নেতা সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কোনো কোনো সদস্যের বক্তব্যে কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। আমরা আশা করব, কমিশনের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ণ হয়, এমন কোনো বক্তব্যের ব্যাপারে ওনারা যেন সজাগ থাকেন।’
আরও পড়ুনসংস্কার দ্রুত শেষ করে নির্বাচন করার কথা জাতিসংঘ মহাসচিবকে বলেছে বিএনপি১৫ মার্চ ২০২৫