ধামরাইয়ে ‘রাজনৈতিক বিরোধে’ বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
Published: 20th, March 2025 GMT
ঢাকার ধামরাই উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় এক নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবুল কাশেমের (৫৫) বাড়ি উপজেলার গাংগুটিয়া ইউনিয়নের জালসা এলাকায়। তিনি গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক বিরোধের জেরে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা স্বজন ও পুলিশের।
নিহত কাশেমের ছোট ভাই খলিলুর রহমান জানান, আজ বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কিছুটা দূরে সড়কে পৌঁছানোর পর ফাঁকা জায়গায় কাশেমকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে সন্ত্রাসীরা। পরে সাভারের বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে রাজনৈতিক বিরোধের কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। কারা কুপিয়েছে বা কতজন ছিল, সেটি এখনো জানতে পারিনি।’
এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেরাজুর রেহান প্রথম আলোকে বলেন, আবুল কাশেমকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর ডান পায়ে ও পিঠে গভীর ক্ষতচিহ্ন আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
গাংগুটিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় বিএনপির একটি অংশের সঙ্গে প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে কাশেমের বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরেই এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত কাশেমের ছেলে কামরুল হাসান দাবি করেন, দলীয় কোন্দল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন মিলে তাঁর বাবাকে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘তারা চাপাতি দিয়ে বাবাকে আঘাত করে। সন্দেহ করছি আব্দুল বাসেত, আব্দুল জলিল, বিল্টু, বাবলু, সায়েমসহ সাত থেকে আটজন জড়িত ছিল। তাঁরা ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদের রাজনীতি করেন।’
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা ইয়াসিন ফেরদৌস প্রথম আলোকে বলেন, সন্ত্রাস, নৈরাজ্যের রাজনীতির কোনো সুযোগ বিএনপিতে নেই। কাউকে হত্যা তো পরের কথা, অন্যায়ভাবে কিছু বলার সুযোগ নেই। বিএনপি নেতা আবুল কাশেমকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে। তিনি বলেন, ‘অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আমার সমর্থকেরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলা যুক্তিসংগত হবে না। তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে।’
ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
তারেক রহমান সব মামলায় খালাস, দেশে ফেরার গুঞ্জন
সব মামলা থেকেই খালাস পেয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান তিনি। এর মধ্য দিয়ে তাঁর দেশে ফেরার পথ উন্মুক্ত হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত তারেক রহমান ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন।
বিচারিক আদালতে সব মামলা থেকে খালাস পাওয়ার পর তিনি কবে দেশে ফিরছেন– এ নিয়েও নানা মহলে গুঞ্জন চলছে। দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দেশে ফেরার বিষয়ে তারেক রহমানই সিদ্ধান্ত জানাবেন। তিনি দেশে ফিরতে উন্মুখ হয়ে আছেন।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্য যান গত ৭ জানুয়ারি। লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক জন প্যাট্টিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধায়নে খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন।
খালেদা জিয়ার দেশে ফেরার বিষয়ে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক বলেন, ‘তিনি আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ আছেন, এপ্রিলের মাঝামাঝিতে দেশে ফিরতে পারেন। তবে ফ্লাইট যদি নির্ধারিত সময়ে না পাওয়া যায়, তাহলে দুয়েক দিন এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে তিনি দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন।’
গত বুধবার খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় নোয়াখালী জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউকে আয়োজিত এক ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের এম এ মালেক বলেন, ‘আমরা খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিলাম লন্ডনে ঈদ করে দেশে যেতে। তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন। এপ্রিলের মাঝামাঝি দেশে ফেরার বিষয়টি মাথায় রেখে চিকিৎসকরা তাঁকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশে ফেরার কিছুদিন পর তারেক রহমানও দেশে ফিরবেন। তবে সেটা এখনও নিশ্চিত হয়নি। একসঙ্গে দুজন অবশ্যই যাবেন না, এটা আমি বিশ্বাস করি।’
জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন সমকালকে বলেন, ‘বিচারিক আদালতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা বিচারাধীন নেই। সব মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন বা নিষ্পত্তি হয়েছে। শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন, নিজেই সেটা দেশবাসীকে জানাবেন।’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় তারেকের প্রত্যাবর্তন এখন দলটির নেতাকর্মীর কাছে বহুল প্রত্যাশিত। এ সময়টাতেই সংস্কার উদ্যোগের মাধ্যমে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘তারেক রহমান যে কোনো সময় ফিরে আসতে পারেন। তাঁর নিরাপত্তার বিষয়সহ সবকিছু বিবেচনা করে তিনি দেশে ফিরবেন। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী তাঁর দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছেন। আগামী দিনে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে তারেক রহমানের ভূমিকা যে গুরুত্বপূর্ণ হবে, সেটি নিঃসন্দেহে বলা যায়।’
সাব্বির হত্যা মামলায় তারেকসহ ৮ জন খালাস
এদিকে বসুন্ধরা গ্রুপের ইঞ্জিনিয়ার সাব্বির হত্যায় দায়মুক্তির জন্য ঘুষ নেওয়ার অপরাধে করা মামলায় গতকাল তারেক রহমানসহ আটজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার বিশেষ জজ ৩-এর বিচারক আবু তাহের এ রায় দেন। মামলার অন্য আসামিরা হলেন— সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, তারেক রহমানের সাবেক পিএস মিয়া নুর উদ্দিন অপু, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান ও সাদাত সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আবু সুফিয়ান ও ব্যবসায়ী কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল। এর মাধ্যমে বিচারিক আদালতে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা।
তারেক রহমানের পক্ষে আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘এটি একটি হোপলেস মামলা। অন্যায়ভাবে এ মামলায় তারেক রহমানসহ অন্যদের আসামি করা হয়েছিল। তখনকার সময় কারও অন্যায় ইচ্ছা-অভিলাষ পূরণের জন্য এ মামলা হয়েছে। প্রসিকিউশন এ মামলা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এক-এগারোর মঈন ইউ আহমেদের সময় রাজনীতিবিদদের বিভাজিত করার চেষ্টা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ মামলার মাধ্যমে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে সব মামলা শেষ হয়েছে। তাঁর আর কোনো মামলা নেই।’
বিএনপির আইনজীবী বোরহান উদ্দিন জানান, আসামিদের বিপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। তাঁর বিরুদ্ধে দেশে আর কোনো মামলা নেই। ফলে তাঁর দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই।
২০০৬ সালের ৪ জুলাই বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক সাব্বির খুনের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়। ওই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক আবুল কাসেম রাজধানীর রমনা থানায় দুর্নীতির মামলা করেন। মামলায় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করা হয়। তবে ২০০৮ সালের ২৩ এপ্রিল তারেকসহ আট আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক।