সিগারেটের সর্বনিম্ন খূচরা মূল্য ৯ টাকা করার দাবি তরুণদের
Published: 20th, March 2025 GMT
শিশু-কিশোর ও তরুণদের ধূমপানে নিরুৎসাহিত করতে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি শলাকার সিগারেটের সর্বনিম্ন খূচরা মূল্য ৯ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন তরুণরা।
তারা জানায়, দাবি অনুযায়ী দাম বাড়ালে তরুণেরা সিগারেট সেবনে নিরুৎসাহিত হবে। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ৯ লাখ তরুণের তামাকজনিত অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের বাড়তি রাজস্ব আদায় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা যা আগের বছরের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি।
বৃহস্পতিবার সকালে (২০ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবে আহছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি জানান তারা। আহছানিয়া মিশন ইয়ুথ ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিয়িং -এর সমন্বয়ক মারজানা মুনতাহার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সদস্য তাসনিম হাসান আবির ও তাহমিনা খাতুন।
তরুণরা জানান, নিম্ন এবং মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তারা যেকোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ালে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। তাই, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়ে প্রতি ১০ শলাকার নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে খুচরা মূল্য ৯০ টাকা, উচ্চ স্তরে খুচরা মূল্য ১৪০ টাকা, প্রিমিয়াম স্তরের খূচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ এবং বিড়ির প্রতি শলাকার দাম অন্তত ১ টাকা করার দাবি জানান তরুণরা।
সুপারিশ অনুযায়ী তামাক পণ্যের বিদ্যমান কর কাঠামো সংস্কার করা গেলে সিগারেটের ব্যবহার ১৫.
সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্তিত ছিলেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। তিনি বলেন, “আগামী প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে এবং নতুন তামাকসেবী সংখ্যা কমাতে হলে কর ব্যবস্থাকে সহজ করে মূল্যস্ফীতি ও আয়বৃদ্ধির তুলনায় বেশি হারে তামাকপণ্যে করারোপ করতে হবে।”
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তামাক ব্যবহারকারি দেশ। প্রতি বছর তামাকপণ্য বিক্রি থেকে যে রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত স্বাস্থ্য ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশ। প্রস্তাবনা অনুসারে কর বাড়ালে সিগারেট বিক্রি থেকে রাজস্ব আসতে পারে ৬৮ হাজার কোটি টাকা যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৩ শতাংশ বেশি।
ঢাকা/হাসান/এসবি
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কুঁড়ি এসেছে চা বাগানে পাতা সংগ্রহ শুরু
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানসহ দেশের ১৬৮টি বাগানে চলতি মার্চ মাস থেকে স্বল্প পরিসরে নতুন চা পাতা সংগ্রহ শুরু হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশে ১০ কোটি ৩০ লাখ কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকৃতি সদয় হলে চা বাগানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাগান-সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, গত বছর চায়ের নিলাম বাজারে ভালো দাম না পাওয়া ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন না হওয়ায় অধিকাংশ বাগান মালিক লোকসানের মুখে পড়েন। এ কারণে অনেক চা বাগান বন্ধ হবার পথে। কোনো কোনো চা বাগানে অনিয়মিত হয়ে পড়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-মজুরি। এ নিয়ে বাগান-সংশ্লিষ্টরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বাগান কর্মকর্তাদের ভাষ্য, চায়ের নিলামে ভালো দাম ও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন না হলে চাশিল্প টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
মার্চের শুরুতে কিছু বৃষ্টি হওয়াতে ছাঁটাই করা চা গাছে নতুন কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে জানিয়ে মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের শ্রমিক নেতা স্বরজিত পাশি জানান, ফাল্গুন মাসে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় ছাঁটাই করা চা গাছে কুঁড়ি এসেছে। চা বাগান এখন সবুজ থেকে সবুজে ভরে যাবে। চা বাগান সবুজ দেখলে বাগানের শ্রমিকদের মন আনন্দে নেচে ওঠে। কারণ বাগান বেশি সবুজ পাতা এলে শ্রমিকরা বেশি চা পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। পাতা বেশি সংগ্রহ হলে মালিক ও শ্রমিকরা বেশি লাভবান হতে পারেন। বাগানের শ্রমিকরা তাদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বনপূজা করে চা পাতা তোলা শুরু করেছে।
চা বাগান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চায়ের জন্য বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতির পাশাপাশি প্রকৃতির ওপরও নির্ভর করতে হয়। চায়ের জন্য মূলত প্রয়োজন পরিমিত বৃষ্টিপাত ও সূর্যের আলো। বর্ষায় অতি বৃষ্টিপাত চায়ের জন্য ক্ষতিকর। আবার প্রচণ্ড তাপদাহও ক্ষতিকর। যে কারণে এর জন্য কিছুটা প্রকৃতির ওপর নির্ভর করতেই হয়। এবার মৌসুমের শুরু থেকেই তারা নতুন কুঁড়ি পেয়েছেন।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন চা বাগানে দেখা যায়, দলবেঁধে নারী শ্রমিকরা এখন প্রতিদিন চা পাতা সংগ্রহ করছেন। নতুন মৌসুমে বাগান থেকে চা পাতা তোলার আগে বাগান কর্তৃপক্ষ ও পঞ্চায়েত নেতাদের উপস্থিতিতে শ্রমিকরা পূজা-অর্চনা, গীতাপাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা করেন। এরপর নাচে-গানে আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন শ্রমিকরা।
বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ইসমাইল হোসেন বলেন, দেশের ১৬৮টি চা বাগানে ২০২৪ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৯৩ মিলিয়ন কেজি চা; যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম ছিল। চলতি অর্থবছর ১০৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নোয়াপাড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক সোহাগ মাহমুদ বলেন, ভালো দর না পেলে বর্তমানে চা বাগান টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ সব কিছুর দাম বেড়েছে কিন্তু সে হারে চায়ের দাম বাড়ছে না। এ কারণে অনেক চা বাগান এখন রুগণ্ বাগান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। টাকার অভাবে সকল ব্যয়ভার বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ব্যাংকে দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ঋণ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই নতুন বছর মালিকদের জন্য কঠিন অবস্থা যাবে। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা।
ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) পরিচালক মো. মহসীন মিয়া মধু বলেন, বাগানগুলোতে চা পাতা তোলা শুরু হয়েছে। তবে লোকসান কাটিয়ে বাগান লাভ করতে হলে শ্রমিক, মালিক ও সরকার পক্ষ মিলে আন্তরিকভাবে কাজ করতে হবে।
এনটিসির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী এমদাদুল হক বলেন, ‘অনেক আশা নিয়ে আমরা বাগানে নতুন চা পাতা তোলা শুরু করেছি। গত বছর সুখবর ছিল না, নানা সংকটের মধ্যে কেটেছে। এ বছর নতুনভাবে ব্যাংক থেকে টাকা না পাওয়া গেলে আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যেতে পারে। তাই এসব পরিস্থিতি মাথায় রেখে শ্রমিকদের নিয়ে আমরা নতুন বছরে চা পাতা তোলা শুরু করেছি। চায়ের ভালো দর পেলে পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।’