বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিনির্ভর বিভিন্ন সিনেমা ও বইয়ে হরহামেশাই এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণীদের দেখা মেলে। ভিনগ্রহের এসব প্রাণী কোথায় বাস করছে, তা নিয়ে জানতেও চান অনেকে। আর তাই ভিনগ্রহে কোনো প্রাণী বাস করে কি না, তা জানতে দীর্ঘদিন ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ বিষয়ে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় রিভারসাইডের একদল বিজ্ঞানী নতুন তথ্য জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, ভিনগ্রহের প্রাণী বিভিন্ন গ্রহের গ্যাসের মধ্যে লুকিয়ে থাকতে পারে। এ বিষয়ে একটি গবেষণা ফলাফল দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারসে প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

গবেষণার তথ্যমতে, দূরবর্তী বিভিন্ন গ্রহের গ্যাসে বহির্জাগতিক প্রাণী খুঁজে পাওয়া যেতে পারে। ভিন্ন ধরনের প্রাণ বা জীবন অনুসন্ধানের জন্য এত দিন বিভিন্ন গ্যাসকে তুলনামূলকভাবে অবহেলা করা হয়েছে। বিষয়টিকে মাথায় রেখে গ্যাসের মধ্যে প্রাণ অনুসন্ধান করতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এ পরীক্ষা সহজে ও দ্রুত করা যেতে পারে।

নতুন এ গবেষণার বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় রিভারসাইডের বিজ্ঞানী এডি শোয়েটারম্যান বলেন, পৃথিবীর মতো গ্রহের বিপরীতে বায়ুমণ্ডলীয় শব্দ ও টেলিস্কোপের সীমাবদ্ধতার কারণে জৈব স্বাক্ষর শনাক্ত করা কঠিন। সেখানে হাইসিয়ান গ্রহ অনেক পরিষ্কার সংকেত দেয়। আমরা জানি না গ্যাসগুলো দেখতে কেমন হবে। আমরা আগে যা দেখেছি তার থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হতে পারে। সেখানে কোনো প্রাণী যদি আমরা খুঁজে পাই তাহলে সেগুলো অক্সিজেনবিহীন বা অ্যানেরোবিক হবে। তারা খুবই ভিন্ন ধরনের পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিচ্ছে। আমরা আসলেই ধারণা করতে পারি না তারা দেখতে কেমন।

বিভিন্ন গ্রহের চারপাশে থাকা গ্যাসকে মিথাইল হ্যালাইড বলা হয়। এসব হ্যালোজেন পরমাণুর সঙ্গে সংযুক্ত কার্বন ও হাইড্রোজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত হয়। এসব গ্যাস অবশ্য পৃথিবী থেকে সহজে শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে আবছাভাবে এসব গ্যাস দেখা যায়।  

সূত্র: ইনডিপেনডেন্ট

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সমাজে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না

সরকার যা বলে আর যা করে, তার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সবচেয়ে সুবোধ ও সুচিন্তিত সরকারের পক্ষেও সমাজে বৈষম্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। গণতন্ত্রের অভাবে যারা বিপন্ন ছিল, তাদের বিপন্নতা এখনও দূর হয়নি। তাদের মনের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ আসেনি। এসব মন্তব্য করেছেন গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। 

গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংলাপে তিনি বলেছেন, অনেকে এখন নৈতিকতার খবরদারির দায়িত্ব নিয়েছেন। এদের সংখ্যা বেশি নয়, কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর উচ্চ। এই কণ্ঠস্বর মোকাবিলা করতে উদারনৈতিক বহুত্ববাদী সমাজের পক্ষের মানুষকে দাঁড়াতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি নিরাপদে থাকব ঘরে আর আমার পক্ষে মানুষ পরিবর্তন করে দেবে কিংবা আবার ছাত্র-জনতা অভ্যুত্থান করবে– মনে করা বোকামি। প্রত্যেক নাগরিককে তার অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে হবে।’ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আয়োজিত সংলাপের সমাপনী অধিবেশনে এসব কথা বলেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টচার্য। 

‘জাতীয় এসডিজি রিপোর্ট (ভিএনআর) ২০২৫: পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রত্যাশার অন্তর্ভুক্তি’ শিরোনামের সংলাপ রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। এসডিজি বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে এ সংলাপের আয়োজন করে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম এবং গবেষণা সংস্থা সিপিডি। 

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস, ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো রেংগলি, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার প্রমুখ। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।   

ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, গত নির্বাচনগুলোতে সাড়ে ৩ কোটি যুবক ভোট দিতে পারেনি। তারা এবারের নির্বাচনে ভোট দিতে পারবে কিনা, ভোট দেওয়ার পর নিরাপদ থাকতে পারবে কিনা, সে আলোচনা খুব একটা দেখা যায় না। নির্বাচনের ইশতেহার নিয়ে আলোচনা চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। ইশতেহারে সমাজে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কল্যাণে আলাদা করে প্রতিশ্রুতি থাকতে হবে। যে দলের ইশতেহার এ রকম প্রতিশ্রুতি থাকবে না, তা গ্রহণ করা হবে না। অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও টেকসই সমাজ বিনির্মাণে রাজনৈতিক দলগুলোর এ ধরনের প্রতিশ্রুতি প্রয়োজন। 

বৈষম্য পরিস্থিতি নিয়ে ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, দেশে সবচেয়ে বড় আন্দোলন হলো বৈষম্যের বিরুদ্ধে। কিন্তু সব বৈষম্যের কথা বলা হয় না। কোনো বৈষম্যের কথা বলা হয়,  কোনো বৈষম্যকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। নারী ও পুরুষের বৈষম্যের কথায় লিঙ্গবৈচিত্র্যের কথা বলা হয় না। জাতীয়তার প্রশ্নে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী বা তাদের জাতিসত্তার স্বীকৃতির কথা হয় না। যখন নতুন করে জাতীয় সত্তার অনুসন্ধান চলছে, তখনও বহুত্ব বা বহু ধরনের মানুষ নিয়ে যে বাংলাদেশ, সে কথা তেমন করে উচ্চারিত হয় না। 

লামিয়া মোরশেদ বলেন, বিগত দিনে এসডিজি কার্যক্রমে রাজধানীর বাইরে তেমন অংশগ্রহণ ছিল না। সরকারি পর্যায়ে তা সীমাবদ্ধ ছিল। আগস্ট বিপ্লব অংশীদারিত্বমূলক উন্নয়নের এক ঐতিহাসিক সুযোগ করে দিয়েছে। অন্তর্ভুক্তি টেকসই উন্নয়নের এ সুযোগ হাতছাড়া হতে দেওয়া যাবে না। 

সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, রাজনীতি এবং স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণের মতো বড় দুই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি এবং রাজনীতি প্রয়োজন। শান্তিপূর্ণ এবং অগ্রগতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় সব পক্ষের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রয়োজন। তাঁর দেশ বাংলাদেশের সহায়তায় অতীতের মতো পাশে থাকবে। 

সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ইএসডিও) প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী শহীদ উজ জামান, একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ