গতানুগতিক সাংবাদিকতার বাইরে গিয়ে প্রবাসীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাংলাদেশি সাংবাদিকরা কাজ করছেন। প্রবাসীদের নানা সমস্যা ও সমাধান, সফলতা, হাসি-কান্না, বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বাংলাদেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ করছেন। এছাড়া যখনই প্রবাসীরা কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যায় পড়ছেন দূতাবাস ও কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধানের পথ বের করতে সহযোগিতা করছেন আমিরাতে বসবাসরত প্রবাসী সাংবাদিকরা।

বুধবার (১৯ মার্চ) সংযুক্ত আরব আমিরাতের পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইয়ের ইফতার ও দোয়া মাহফিলে অতিথিরা এসব কথা বলেন।

সংগঠনের সভাপতি মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (প্রেস) আরিফুর রহমান।

আরো পড়ুন:

সিনিয়র সাংবাদিক আলী হাবিব আর নেই

গাজীপুরে সাংবাদিকদের সম্মানে জামায়াতের ইফতার 

বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএই বিএনপির আহ্বায়ক জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার সালাউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার এসোসিয়েশনের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার সালাম খান, বাংলাদেশ সমিতি শারজার সাবেক সভাপতি শরাফত আলী, জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক মোস্তাফা মাহমুদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব ক্যাপ্টেন সৈয়দ আবু আহাদ, বাংলাদেশ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি সিরাজুল হক, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এস এম মোদাচ্ছের শাহ।

ইফতার ও দোয়া মাহফিলে বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল শাহীনের সঞ্চালনায় ও অর্থ সম্পাদক শাহজাহান আহমদের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক ইশতিয়াক আসিফ।

উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সমিতি শারজার সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার করিমুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মাহে আলম, অর্থ সম্পাদক আব্দুল কালাম আজাদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রাজা মল্লিক, বদিউল আলম, কমিউনিটি ব্যক্তিত্ব হাবিবুর রহমান চুন্নু, নবাব সিরাজ, নজরুল ইসলাম লিটন তালুকদার, মোস্তাফিজুর রহমান।

ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়ে বিভিন্ন পেশার প্রবাসীরা, প্রেসক্লাবের মাধ্যমে দেশ ও আমিরাতের মাঝে সেতুবন্ধন প্রত্যাশা করেন। প্রবাসীদের দাবি দাওয়ার ব্যাপারে প্রেসক্লাবের সংবাদ পরিবেশনের ধারাবাহিকতার প্রশংসা করেন।

ইফতার মাহফিলে সাংবাদিক, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী, ওলামায়ে কেরামসহ সর্বস্তরের প্রবাসীদের উপস্থিতি হওয়ায় বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ইউএইর সভাপতি মামুনুর রশীদ সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখার আহ্বান জানান।

ইফতার মাহফিলে প্রেসক্লাবের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সম্পাদক মুহাম্মদ ইসমাইল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নওশের আলম সুমন, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক মুহাম্মদ ইরফানুল ইসলাম, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক এস এম শাফায়াত উল্লাহ, নির্বাহী সদস্য সৈয়দ খোরশেদ আলম, মেহেদি রুবেল, আরিফ শিকদার বাপ্পি, সদস্য শামসুল হক, মোশাররফ হোসেন, আশিকুর ইসলাম, আবু শাহদাত সায়েম, আব্দুল কারিম, আরাফাত, রানা।

সর্বশেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স প রব স দ র আম র ত

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই

নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।

কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।

গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।

হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।

হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’

‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’

রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।

এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ