শেফিল্ড শিল্ডে গত মঙ্গলবার লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ড্র করে কুইন্সল্যান্ড। এ ম্যাচ খেলার মতো ফিটনেস নেই বলে নিজের রাজ্য দল কুইন্সল্যান্ডকে জানিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়া দলের ওপেনার উসমান খাজা। কিন্তু না খেললেও খাজাকে দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ান গ্রাঁ প্রিঁতে দেখতে। রাজ্য দলের ম্যাচ না খেলে খাজার ফর্মুলা ওয়ান দেখতে যাওয়া বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

আরও পড়ুনফাফ ডু প্লেসিকে অধিনায়ক করল নামিবিয়া, তবে…১ ঘণ্টা আগে

ফিটনেস সমস্যার কারণ হিসেবে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট থেকে সেরে ওঠার পথে থাকার কথা জানিয়েছিলেন খাজা। কিন্তু কুইন্সল্যান্ড দলের জেনারেল ম্যানেজার জো ডস বলেন, খাজার ওপর তিনি ‘হতাশ’ হয়েছেন এবং দলের মেডিকেল স্টাফদের বিশ্বাস, গত সপ্তাহে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ড্র ম্যাচটি খেলার মতো ফিট ছিলেন খাজা।

৩৮ বছর বয়সী খাজা চলতি বছরের শেষ দিকে শুরু হতে যাওয়া অ্যাশেজ সিরিজে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলবেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টাইমস’ জানিয়েছে, কুইন্সল্যান্ডের টিম ম্যানেজমেন্ট ও সতীর্থদের সঙ্গে ঝামেলার কারণে খাজা ২৬ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া শেফিল্ড শিল্ডের ফাইনালে খেলবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। ফাইনালে সাউথ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে কুইন্সল্যান্ড।

কুইন্সল্যান্ডের জেনারেল ম্যানেজার ডস বলেছেন, ‘আমাদের মেডিকেল স্টাফ সব সময়ই বলে এসেছে, সে খেলার মতো অবস্থায় আছে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার স্টাফদের কাছ থেকেও একই কথা শুনেছি। যত দূর জানি, তার হ্যামস্ট্রিংয়ে কোনো সমস্যা নেই।’

আরও পড়ুনঅবশেষে সাকিবের মুক্তি৮ ঘণ্টা আগে

ডস এরপর আরও বলেছেন, ‘মেডিকেল স্টাফদের ওপর আমি খেপেছি। তার সর্বশেষ ম্যাচ না খেলার কোনো কারণই ছিল না। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তার কুইন্সল্যান্ডের হয়ে ম্যাচ না খেলার বিষয়টি হতাশার। আমার এখানে বেশ কয়েকজন আছে, যারা সবাই খেলতে চায়। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সে না খেলায় আমরা সবাই হতাশ।’ ডস যোগ করেন, ‘আশা করি, আগামী সপ্তাহের (শেফিল্ড শিল্ড ফাইনাল) ম্যাচটি খেলার বিষয়ে সে সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমরাও শুক্রবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

তবে অস্ট্রেলিয়ার কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার পর এ মৌসুমে ঘরোয়া ক্রিকেটে আর খেলবেন না—তাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠায় ‘মনঃক্ষুণ্ন’ হয়েছেন খাজা। যদিও দুই সপ্তাহ আগে তাসমানিয়ার বিপক্ষে খেলে দলকে ফাইনালে ওঠাতে সাহায্য করেছেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। এ বিষয়ে খাজা ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পায়নি টাইমস।

গত রোববার মেলবোর্ন পার্কে খাজার ফর্মুলা ওয়ান দেখতে যাওয়াকে কুইন্সল্যান্ডের অনেকেই ভালোভাবে নেননি। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক উইকেটকিপার ও কুইন্সল্যান্ডের পরিচালক ইয়ান হিলি তাদের একজন। এসইএন রেডিওকে হিলি বলেছেন, ‘উসমান খাজা শেফিল্ড শিল্ডে শেষ রাউন্ড না খেলায় বোর্ডের স্তম্ভিত হওয়া উচিত। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে বলছি, আপনাদের চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় আপনাদেরই দীর্ঘদিনের প্রতিযোগিতায় খেলছেন না। আমাদের ক্রিকেট নৈতিকতা, দক্ষতা ও টিকচিহ্নের ওপর নির্মাণ করা উচিত—অনুপস্থিতি দিয়ে নয়।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে হাওরপারে চুন-সুরকির ১৫০ বছরের মসজিদ

গ্রামের পশ্চিমে বিস্তৃত কাউয়াদিঘি হাওর। সেই হাওরের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে গ্রামটি। বর্ষায় হাওরের পানিতে গ্রামের খাল-নালা, পথঘাট ডুবে যাওয়াই নিয়ম। এখন শুকনো মৌসুম, হাওরে পানি নেই। যত দূর চোখ যায় ধু ধু ফাঁকা দিগন্ত, বোরো ফসলের সবুজ। ফসলের দিকে তাকালে কারও মনে হতে পারে, কেউ হয়তো সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে মাঠে। নিভৃত এই গ্রামটির ভেতরে সবার চোখের আড়ালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মাণ করা চুন-সুরকির একটি মসজিদ আছে, যার বয়স ১৫০ বছর পেরিয়ে গেছে।

এই মসজিদের অবস্থান মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের রক্তা গ্রামে। মসজিদটিকে স্থানীয় মানুষ চেনে তিন গম্বুজ রক্তা জামে মসজিদ নামে। মসজিদটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কয়েক বছর আগে নতুন করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো মসজিদে হাত দেওয়া হয়নি, পুরোনো মসজিদটিকে অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে।

রক্তা গ্রামে একটি পুরোনো মসজিদ আছে, যার বয়স শত বছরের ওপরে—এমন তথ্য পেয়ে ১৮ মার্চ সেখানে যাওয়া। মৌলভীবাজারের রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক থেকে পশ্চিমে কাউয়াদিঘি হাওরের দিকে একটি গ্রামীণ পাকা সড়ক গেছে, সেই সড়ক ধরেই রক্তা গ্রামে পৌঁছা গেল। সড়কের দুই পাশে ধানখেত, কাঁচাপাকা নতুন-পুরোনো বাড়ি। পাকা সড়ক যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে ভ্রাম্যমাণ হাটের মতো পসরা নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ধারণা করা যায়, ভ্রাম্যমাণের মতো মনে হলেও তাঁরা আসলে নিয়মিতই এখানে পণ্য সাজিয়ে বসেন। বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি শাকসবজি, ফল সাজানো আছে। সেখান থেকে উত্তর দিকে মসজিদ পর্যন্ত কয়েক শ ফুট ইট বিছানো সড়ক, সেই সড়কটি এখন এবড়োখেবড়ো, গর্তে পূর্ণ।

এখানে একটি মসজিদ আছে, এটা যে কারও চোখে পড়বে। কিন্তু আগে থেকে না জানা থাকলে এই নতুন দালানের আড়ালে কালের যাত্রায় ১৫০ বছর পার করা একটি মসজিদ আছে, তা কেউ অনুমান করতে পারবেন না। নতুন ভবনটিই আগে চোখে পড়ে। পুরোনো মসজিদকে যুক্ত করেই পূর্ব দিকে নতুন দালান নির্মাণ করা হয়েছে। চুন-সুরকিতে তৈরি তিন গম্বুজ মসজিদটিকে আপাতত সাদামাটা মনে হলেও মসজিদ তৈরিতে প্রাচীন স্থাপত্যকলা অনুসরণ করা হয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা চারদিক। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি জানালা আছে। মসজিদের ছাদে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তিনটি করে স্তম্ভ। আছে তিনটি গম্বুজ। এই গম্বুজ তিনটি মসজিদের পরিচিতি তৈরি করেছে। পরিচিতজন এটাকে ‘তিন গম্বুজ মসজিদ’ নামেই চিনে থাকেন। মসজিদের পূর্ব দিকে পাকা ঘাটওয়ালা একটি পুকুর আছে। মসজিদটির উত্তর পাশেই আছে রক্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মসজিদ নির্মাতার পরিবার ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার ছিল। মুসল্লির সংখ্যা বেশি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রামে জনসংখ্যা বেড়েছে, মুসল্লির সংখ্যাও বেড়েছে। জুমার নামাজ, ঈদের জামাতে গ্রামের মানুষের স্থান সংকুলান হয় না। তখন মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে চিন্তা ছিল পুরোনো মসজিদসহ সেই স্থানটিকে উন্মুক্ত রেখে নতুন করে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু খালি জায়গা না থাকায় পুরোনো মসজিদকে সংযুক্ত রেখেই নতুন করে পূর্ব দিকে ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নতুন ভবনের ভিত্তিটি পাঁচতলার করা হয়েছে। সম্প্রসারিত ভবনের স্থানে আগে টিনের একচালা ছিল। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও ঈদের জামাত দুবারে পড়তে হয়।

ভবনটির কাছাকাছি গেলে পুরোনো মসজিদের অবস্থান পরিষ্কার বোঝা যায়। মসজিদের ভেতরের দিকেও পুরোনো মসজিদের আদল অবিকল রাখা হয়েছে। তিন ফুটের মতো চুন-সুরকির প্রশস্ত দেয়াল। গরমের সময় পুরোনো ভবনের ভেতরটা শীতল থাকছে। শীতের সময়েও বেশি ঠান্ডা হয় না। একটা প্রাকৃতিক আবহাওয়া বিরাজ করে। নতুন ভবনের ছাদ থেকে দেখলে পুরোনো ভবনের নির্মাণশৈলী ভালোভাবে চোখে পড়ে, গম্বুজগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।

মসজিদ নির্মাতার উত্তরসূরি আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দাদার বাবা হাজি সুজন মাহমুদ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময় কাউয়াদিঘি হাওরে তাঁর দাদার জলমহালের ব্যবসা ছিল। পুরোনো মসজিদ ভবন এখনো ঠিকঠাক আছে, তবে কত দিন থাকবে, এ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের বয়স ১৫৩ বছর। রক্তা গ্রামের মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়েন। মেইন মসজিদ সংস্কার করা হয়নি। নতুন ভবন নির্মাণের সময় পুরোনো মসজিদকে অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংস্কারের প্রয়োজন পড়লে যাতে পুরোনো ডিজাইন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। এই মসজিদ শুধু রক্তা গ্রামই নয়, এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন একটি মসজিদ। এটি এখন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ