বাংলাদেশি পর্যটক নেই, কলকাতায় পরিবহনের অফিস এখন কাপড়ের দোকান
Published: 20th, March 2025 GMT
কলকাতার নিউ মার্কেটের ‘সেন্টমার্টিন পরিবহন’ এর কাউন্টার এখন কাপড়ের দোকান। শুধুমাত্র সেন্টমার্টিন পরিবহন নয়, কলকাতার নিউমার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটন না থাকায় একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হোটেল, রেস্টুরেন্টে। বাংলাদেশি পর্যটক না থাকায় নিউ মার্কেটে সন্ধ্যা হলেই এখন ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়ার পর ভিসা পরিষেবা বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। এমন অবস্থায় ৫ আগস্টের পরও প্রথম কয়েক মাস বাংলাদেশি পর্যটকরা কলকাতায় গেলেও এখন পর্যটকের সংখ্যাও একেবারে নেই বললেই চলে। একসময় ‘মিনি-বাংলাদেশ’ বলে খ্যাত কলকাতার এই নিউমার্কেট বাংলাদেশি পর্যটক শূন্য হলে তার প্রভাব পড়ে স্থানীয় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও।
কিছুদিন আগে কলকাতা থেকে নিয়মিত বাংলাদেশে যাত্রীবাহী বাস পরিসেবা দিত ‘সেন্টমার্টিন পরিবহন’। কলকাতা থেকে ঢাকাসহ বাংলাদেশের শহরগুলোতে চলাচলকারী অন্য নামী পরিবহন সংস্থাগুলোর মতো দুই দেশের যাত্রীদের কাছে ভরসাযোগ্য হয়ে উঠেছিল এই পরিবহন। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাসের ব্যবসা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিকপক্ষ।
আরো পড়ুন:
বড় স্বপ্ন, হামজা জয়গানে বাংলাদেশের শিলং যাত্রা
কোটি টাকার ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান আটক
মাসিক এক লাখ ৪০ হাজার রুপিতে ইজারায় নেওয়া ছিল পরিবহনের অফিসের টাকা পরিশোধ করতে এর কাউন্টার এখন পরিণত হয়েছে কাপড়ের দোকানে। বাংলাদেশিরা না থাকায় সেই কাপড়ের দোকানেও নেই আশানুরূপ বিক্রি। পরিবহন সংস্থা থেকে পোশাকের দোকানের মালিক হয়ে ওঠা মোহাম্মদ সরোজ খান জানান, ‘যাত্রী নেই, বাংলাদেশিরা আসছে না। তাই দোকানও পরিবর্তন করেছি। প্রতি মাসে এক লাখ ৪০ হাজার রুপি ভাড়া দিতে হয়। বাস যদি না চলে সেখানে পরিবহনের ব্যবসা রেখে লাভ কি? বর্তমানে টুরিস্ট ভিসা নেই, মেডিকেল ভিসা নিয়েও খুব কম যাত্রী এপারে আসছেন। ফলে ব্যাবসা বদল করা ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। কারণ পেট তো চালাতে হবে।’
মঙ্গলবার তিনি জানান, পরিবহন ব্যবসা যখন রমরমা ছিল তখন দিনে ১৫-২০টা গাড়ি যাতায়াত করত। আর এখন ৩-৪টা গাড়ি চলছে। ফলে আমাকে ব্যবসা পরিবর্তন করতে হয়েছে।
কিন্তু ব্যবসা পরিবর্তন করেও কি সফলতা এসেছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, কোনরকমে চলছে। স্থানীয় ক্রেতা রয়েছে। প্রতিদিন মাত্র ৭-৮টা পোশাক বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশিরা আসলে নিউমার্কেট জমে উঠবে, বাংলাদেশি না থাকলে পুরো ফ্লপ। নিউমার্কেট, পার্ক স্ট্রিটসহ প্রায় দুই কিলোমিটার জায়গা মূলত বাংলাদেশিদের ওপরেই নির্ভরশীল। স্থানীয় ক্রেতারা দুই একজন আসছেন, কিনছেন। ব্যাস এটুকুই!”
সেন্টমার্টিনের দেখানো পথেই হাঁটতে চলেছে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ইতোমধ্যেই নিউ মার্কেটের কলিন স্ট্রিটে অবস্থিত ঢাকা মেজবান রেস্টুরেন্ট, চিটাগং রেস্টুরেন্ট, চট্টগ্রাম মেজবান রেস্টুরেন্ট, সালাহউদ্দিন গেস্ট হাউস, তৈয়ব রেস্টুরেন্ট-প্রতিটিই বন্ধ। কোনো হোটেলের তালা বন্ধ মূল ফটকে রশি টাঙিয়ে শুকাচ্ছে লুঙ্গি বা অন্তর্বাস আবার কারোর গেটের তালায় জমেছে মোটা ধুলোর স্তর।
‘ঢাকা মেজবান’ বন্ধ রেস্টুরেন্টের সামনেই ঠেলা গাড়িতে কলা, তরমুজসহ মৌসুমী ফল বিক্রি করছেন মোহাম্মদ হালিম। তিনি জানান, গত প্রায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা মেজবান রেস্টুরেন্ট। ভারতে আসার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে না ফলে বাংলাদেশ থেকে কোন পর্যটক না যাওয়াই রেস্টুরেন্টটি বন্ধ হওয়ার মূলত কারণ মনে করেন তিনি। ওই এলাকাতেই ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৮-১০টি হোটেল বন্ধ রয়েছে বলেও জানান তিনি। এমনকি পর্যটকের অভাবে নিজের ফলের ব্যবসাও ঠিকঠাক চলছে না বলে অভিযোগ তার।
চিটাগং রেস্টুরেন্ট এর কর্ণধার আবুজার কামাল জানান, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই নিউমার্কেটে যত হোটেল বা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা আছে, ঠেলাগাড়ি, রিকশাওয়ালা, সিএনজি আছে, তাদের সবারই ব্যবসা বন্ধ, প্রায় শূন্য হয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমার হোটেলে এখানে প্রায় ২০ জন কাজ করতো, সবার চাকরি চলে গেছে। কবে ঠিক হবে, টা জানা নেই। নিউমার্কেট চত্বরে প্রায় ২০টা ভাতের হোটেল এবং ২৫ টা গেস্ট হাউস বন্ধ হয়ে গেছে,”।
তিনি বলেন, “যাদের আগে থেকে ভিসা নেওয়া ছিল, তারা কলকাতায় এসেছিলেন কিন্তু জানুয়ারি মাস থেকে বাংলাদেশি পর্যটক আসা প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।” এমন অবস্থায় বিকল্প রোজগারের চিন্তা ভাবনা করছেন ওই হোটেল ব্যবসায়ী।
কলকাতার মার্কুইস স্ট্রিট-ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ওয়েলফেয়ার সোসাইটির যুগ্ম সচিব মনতোষ সরকার জানান, ১৫ রোজার পর বহু পর্যটক বিশেষ করে বাংলাদেশিরা এই নিউমার্কেট এলাকায় আসতো, এখানে কেনাকাটা করতো। কিন্তু এবারে সেই চিত্রটা ভিন্ন। ভিসা জটিলতার কারণে কোন পর্যটকই আসতে পারছেন না। ফলে হোটেল, পরিবহনসহ বাংলাদেশি পর্যটকদের সাথে সম্পৃক্তযুক্ত ব্যবসায়ীরা খুবই খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। দিনদিন পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেও দাবি তার।
কলকাতা/সুচরিতা/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন টম র ট ন কলক ত র পর বহন ব যবস অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
শত বছরের ‘দারোগা মসজিদ’
সড়কের সঙ্গে লাগানো শানবাঁধানো পুকুর ঘাট। পাশে বিশাল চওড়া ফটক। ফটকের ওপর কারুকাজে নির্মিত চারটি মিনার। মাঝখানে একটি ফিরোজা রঙের গম্বুজ। মিনার-গম্বুজের সুউচ্চ ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে ১৪টি ছোট-বড় মিনার ও তিনটি গম্বুজবিশিষ্ট প্রাচীন মসজিদ চোখে পড়বে। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার রূপকানিয়া এলাকার এই মসজিদের নাম হেদায়েত আলী চৌধুরী মসজিদ। এলাকাবাসীর কাছে ‘দারোগা মসজিদ’ হিসেবে পরিচিত।
প্রায় ১১৫ বছর আগে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। চারপাশে কারুকাজ করা সীমানাদেয়াল। দক্ষিণ পাশে একটি মাদ্রাসা ও মধ্য রূপকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। উত্তর পাশে মসজিদের সীমানাদেয়াল ঘেঁষে স্থানীয় মানুষের কবরস্থান। ২০০৬ সালে ফটক ও মসজিদের মাঝামাঝি খালি জায়গা সংস্কার করে নামাজ আদায়ের জন্য মূল মসজিদের সঙ্গে একীভূত করা হয়েছে।
যে কারও দৃষ্টি কাড়ে মসজিদের প্রধান ফটকটি