চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের একটি বাড়িতে তারাবিহর নামাজ চলার সময় ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এই সময় বাড়ির পুরুষ সদস্যরা মসজিদে ছিলেন। সশস্ত্র ব্যক্তিরা ঘরে ঢুকে বাড়ির নারীদের জিম্মি করে সোনা ও নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায়। গতকাল বুধবার রাত আটটায় উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের মিঠানলা গ্রামে জাহেদ চৌধুরীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশ বলছে, এটি ডাকাতি নয়, চুরির ঘটনা।

ডাকাতির শিকার হওয়া পরিবারটির সদস্য জাহেদ চৌধুরী জানান, ‘গতকাল রাত আটটার দিকে তারাবিহর নামাজ পড়তে আমি ও আমার ছোট ভাই বাড়ির পাশের মসজিদে যাই। ঘরে আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রী ছিলেন। এ সময় ৮ থেকে ১০ জনের মুখোশধারী লোক বাড়ির ছাদের সিঁড়িঘর দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা দেশীয় অস্ত্রের মুখে আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে জিম্মি করে তাঁদের হাত-মুখ বেঁধে ঘরের তিনটি কক্ষের আলমারি ও অন্যান্য আসবাব ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ঘরে থাকা নগদ ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা ও আড়াই ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়।

ডাকাতির ঘটনার পর ওই পরিবারের দুই নারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁদের হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান পরিবারটির জ্যেষ্ঠ সন্তান জাহেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় অসুস্থ হয়ে পড়া আমার মা ও ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে মিরসরাই উপজেলা সদরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে বাড়িতে পাঠালেও মা এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় লোকজনের কাছে জেনে রাত ১১টায় পুলিশ এসে খোঁজখবর নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করব।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিকুর রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি ডাকাতি নয়, চুরির ঘটনা।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস য র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

মৌলভীবাজারে হাওরপারে চুন-সুরকির ১৫০ বছরের মসজিদ

গ্রামের পশ্চিমে বিস্তৃত কাউয়াদিঘি হাওর। সেই হাওরের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে গ্রামটি। বর্ষায় হাওরের পানিতে গ্রামের খাল-নালা, পথঘাট ডুবে যাওয়াই নিয়ম। এখন শুকনো মৌসুম, হাওরে পানি নেই। যত দূর চোখ যায় ধু ধু ফাঁকা দিগন্ত, বোরো ফসলের সবুজ। ফসলের দিকে তাকালে কারও মনে হতে পারে, কেউ হয়তো সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে মাঠে। নিভৃত এই গ্রামটির ভেতরে সবার চোখের আড়ালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মাণ করা চুন-সুরকির একটি মসজিদ আছে, যার বয়স ১৫০ বছর পেরিয়ে গেছে।

এই মসজিদের অবস্থান মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের রক্তা গ্রামে। মসজিদটিকে স্থানীয় মানুষ চেনে তিন গম্বুজ রক্তা জামে মসজিদ নামে। মসজিদটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কয়েক বছর আগে নতুন করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো মসজিদে হাত দেওয়া হয়নি, পুরোনো মসজিদটিকে অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে।

রক্তা গ্রামে একটি পুরোনো মসজিদ আছে, যার বয়স শত বছরের ওপরে—এমন তথ্য পেয়ে ১৮ মার্চ সেখানে যাওয়া। মৌলভীবাজারের রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক থেকে পশ্চিমে কাউয়াদিঘি হাওরের দিকে একটি গ্রামীণ পাকা সড়ক গেছে, সেই সড়ক ধরেই রক্তা গ্রামে পৌঁছা গেল। সড়কের দুই পাশে ধানখেত, কাঁচাপাকা নতুন-পুরোনো বাড়ি। পাকা সড়ক যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে ভ্রাম্যমাণ হাটের মতো পসরা নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ধারণা করা যায়, ভ্রাম্যমাণের মতো মনে হলেও তাঁরা আসলে নিয়মিতই এখানে পণ্য সাজিয়ে বসেন। বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি শাকসবজি, ফল সাজানো আছে। সেখান থেকে উত্তর দিকে মসজিদ পর্যন্ত কয়েক শ ফুট ইট বিছানো সড়ক, সেই সড়কটি এখন এবড়োখেবড়ো, গর্তে পূর্ণ।

এখানে একটি মসজিদ আছে, এটা যে কারও চোখে পড়বে। কিন্তু আগে থেকে না জানা থাকলে এই নতুন দালানের আড়ালে কালের যাত্রায় ১৫০ বছর পার করা একটি মসজিদ আছে, তা কেউ অনুমান করতে পারবেন না। নতুন ভবনটিই আগে চোখে পড়ে। পুরোনো মসজিদকে যুক্ত করেই পূর্ব দিকে নতুন দালান নির্মাণ করা হয়েছে। চুন-সুরকিতে তৈরি তিন গম্বুজ মসজিদটিকে আপাতত সাদামাটা মনে হলেও মসজিদ তৈরিতে প্রাচীন স্থাপত্যকলা অনুসরণ করা হয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা চারদিক। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি জানালা আছে। মসজিদের ছাদে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তিনটি করে স্তম্ভ। আছে তিনটি গম্বুজ। এই গম্বুজ তিনটি মসজিদের পরিচিতি তৈরি করেছে। পরিচিতজন এটাকে ‘তিন গম্বুজ মসজিদ’ নামেই চিনে থাকেন। মসজিদের পূর্ব দিকে পাকা ঘাটওয়ালা একটি পুকুর আছে। মসজিদটির উত্তর পাশেই আছে রক্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

মসজিদ নির্মাতার পরিবার ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার ছিল। মুসল্লির সংখ্যা বেশি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রামে জনসংখ্যা বেড়েছে, মুসল্লির সংখ্যাও বেড়েছে। জুমার নামাজ, ঈদের জামাতে গ্রামের মানুষের স্থান সংকুলান হয় না। তখন মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে চিন্তা ছিল পুরোনো মসজিদসহ সেই স্থানটিকে উন্মুক্ত রেখে নতুন করে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু খালি জায়গা না থাকায় পুরোনো মসজিদকে সংযুক্ত রেখেই নতুন করে পূর্ব দিকে ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নতুন ভবনের ভিত্তিটি পাঁচতলার করা হয়েছে। সম্প্রসারিত ভবনের স্থানে আগে টিনের একচালা ছিল। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও ঈদের জামাত দুবারে পড়তে হয়।

ভবনটির কাছাকাছি গেলে পুরোনো মসজিদের অবস্থান পরিষ্কার বোঝা যায়। মসজিদের ভেতরের দিকেও পুরোনো মসজিদের আদল অবিকল রাখা হয়েছে। তিন ফুটের মতো চুন-সুরকির প্রশস্ত দেয়াল। গরমের সময় পুরোনো ভবনের ভেতরটা শীতল থাকছে। শীতের সময়েও বেশি ঠান্ডা হয় না। একটা প্রাকৃতিক আবহাওয়া বিরাজ করে। নতুন ভবনের ছাদ থেকে দেখলে পুরোনো ভবনের নির্মাণশৈলী ভালোভাবে চোখে পড়ে, গম্বুজগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।

মসজিদ নির্মাতার উত্তরসূরি আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দাদার বাবা হাজি সুজন মাহমুদ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময় কাউয়াদিঘি হাওরে তাঁর দাদার জলমহালের ব্যবসা ছিল। পুরোনো মসজিদ ভবন এখনো ঠিকঠাক আছে, তবে কত দিন থাকবে, এ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের বয়স ১৫৩ বছর। রক্তা গ্রামের মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়েন। মেইন মসজিদ সংস্কার করা হয়নি। নতুন ভবন নির্মাণের সময় পুরোনো মসজিদকে অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংস্কারের প্রয়োজন পড়লে যাতে পুরোনো ডিজাইন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। এই মসজিদ শুধু রক্তা গ্রামই নয়, এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন একটি মসজিদ। এটি এখন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ