নিরাপদ ঈদযাত্রায় পুলিশের নিরাপত্তা পরামর্শ
Published: 20th, March 2025 GMT
আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে উদযাপনের লক্ষ্যে নিরাপত্তাবিষয়ক বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
বৃহস্পতিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই পরামর্শ জানান।
যাত্রীদের প্রতি পুলিশের অনুরোধ
ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সময় নিয়ে ঈদের ভ্রমণ পরিকল্পনা করুন। ভ্রমণকালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় রাখুন। চালককে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালাতে তাগিদ দেবেন না। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে বাসের ছাদে কিংবা ট্রাক, পিকআপ ও অন্যান্য পণ্যবাহী যানবাহনে ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে জেব্রা ক্রসিং অথবা ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার করুন। যেখানে জেব্রা ক্রসিং বা ফুট ওভারব্রিজ নেই সেখানে যানবাহনের গতিবিধি দেখে নিরাপদে রাস্তা পার হোন। প্রয়োজনে পুলিশের সহায়তা নিন। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাবেন না। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছ থেকে খাবার/পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
বাস মালিকদের প্রতি অনুরোধ
ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে বাস মালিকদের প্রতি কিছু অনুরোধ জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, বাস মালিকদের প্রতি অনুরোধ অদক্ষ, অপেশাদার, ক্লান্ত বা অসুস্থ চালককে যাত্রীবাহী বাস ও গাড়ি চালাতে দেবেন না। চালক যেন নিয়ম মেনে গাড়ি চালায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং না করে সেজন্য চালককে নির্দেশ দিন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় বের করা যাবে না।
বাসচালকদের প্রতি অনুরোধ
ওভারস্পিডে গাড়ি চালাবেন না, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং করবেন না। ক্লান্তি, অবসাদ বা অসুস্থ অবস্থায় গাড়ি চালাবেন না। ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গাড়ির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সবসময় সঙ্গে রাখুন। বাসে অতিরিক্ত যাত্রী তুলবেন না।
আঞ্চলিক সড়ক/মহাসড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পুলিশের নির্দেশনা মেনে চলুন।
লঞ্চ-স্টিমার-স্পিডবোটের যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে নৌযানে উঠবেন না। নৌযানের ছাদে যাত্রী হয়ে ভ্রমণ করবেন না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌযানে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
যাত্রাপথে ঝড় দেখা দিলে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি না করে নিজের জায়গায় অবস্থান করুন। স্পিডবোটে ভ্রমণের ক্ষেত্রে লাইফ জ্যাকেট পরিধান করুন।
লঞ্চ-স্টিমার-স্পিডবোট মালিকদের প্রতি অনুরোধ
নির্ধারিত সংখ্যক ও নির্ধারিত গ্রেডের মাস্টার ও ড্রাইভার দিয়ে নৌযান পরিচালনা করুন। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নৌযান চলাচল বন্ধ রাখুন। নৌযানের মাস্টার ব্রিজে যাত্রী সাধারণের অবাধ চলাচল বন্ধ করার জন্য দু’পাশ অস্থায়ীভাবে বন্ধের ব্যবস্থা করুন। লঞ্চে পর্যাপ্ত বয়া রাখুন।
লঞ্চ-স্টিমার-স্পিডবোট চালকদের প্রতি অনুরোধ
আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নৌযান নিয়ে বন্দর ত্যাগ করুন। ডেকের ওপর যাত্রীদের বসার স্থানে মালামাল পরিবহন থেকে বিরত থাকুন। পর্যাপ্ত সংখ্যক বয়া/লাইফ জ্যাকেট নৌযানে রাখুন। যাত্রাপথে ঝড়ের আশঙ্কা দেখা দিলে নৌযানকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন বা তীরে ভিড়িয়ে রাখুন। নৌযানে মোবাইল ফোন ও রেডিও রাখুন এবং নিয়মিত আবহাওয়ার বুলেটিন শুনুন। প্রয়োজনে আবহাওয়া সংক্রান্ত অ্যাপ ব্যবহার করুন। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া নৌযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকুন।
সব ফায়ার পাম্প ও অগ্নিনিরোধক যন্ত্রপাতির সঠিকতা নিশ্চিত করুন। দুর্ঘটনাকবলিত নৌযান শনাক্তকরণের লক্ষ্যে নৌযানগুলোকে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট লম্বা দড়ি সংবলিত বয়া এবং লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা রাখুন।
ট্রেন যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ
ট্রেনের ছাদে, বাফারে, পাদানিতে ও ইঞ্জিনে ঝুঁকিপূর্ণ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন। ট্রেনে ভ্রমণের সময় পাথর নিক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক থাকুন। ট্রেনে ভ্রমণকালে মালামাল নিজ দায়িত্বে রাখুন। বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন।
প্রয়োজনে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের কন্ট্রোল রুম (০১৩২০০০১৩০০, ০১৩২০০০১২৯৯), হাইওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স (০১৩২০১৮২৫৯৮), রেলওয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স (০১৩২০১৭৭৫৯৮), নৌ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স (০১৩২০১৬৯৫৯৮), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব (০১৭৭৭৭২০০২৯) এবং জেলা পুলিশ সুপার ও থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন র ধ ন র পদ ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
গোয়ালে রহিয়াছে কিতাবে নাই!
চার বৎসর পূর্বে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নিকট রাজধানীর খাল হস্তান্তর করা হইলেও ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় মালিকানা বুঝাইয়া না দিবার কারণে সংস্থা দুইটি, তৎসহিত স্থানীয় বাসিন্দারাও সমস্যায় নিপতিত।
বুধবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, খালগুলির কাগজপত্র না পাইবার কারণে সেগুলির দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও অবস্থান নির্ধারণ লইয়া বিড়ম্বনায় পড়িয়াছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তাহারা যদ্রূপ খালপাড় লইয়া পরিকল্পনা করিতে পারিতেছে না, তদ্রূপ সীমানার সুরাহা না হওয়ায় খালপাড়ের জমির মালিক ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও বিপদে পড়িয়াছে। খাল এলাকায় ঘরবাড়ি বানাইতে যেইখানে সিটি করপোরেশনের অনুমোদন প্রয়োজন, সেইখানে আবেদন করিয়াও উহা মিলিতেছে না।
আমরা জানি, ঢাকার অধিকাংশ খালই দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণে রাজধানীর উল্লেখযোগ্য খালই হারাইয়া গিয়াছে। ইতোপূর্বে ঢাকা ওয়াসা দেখভাল করিবার কারণে অভিযোগ উঠিয়াছে, সংস্থাটির যোগসাজশে অনেক খাল দখল হইয়া গিয়াছে। এই কারণে খালগুলির সুরক্ষায় সিটি করপোরেশনের নিকট হস্তান্তরের দাবি উত্থাপিত হয়। উহারই আলোকে ২০২০ সালের শেষ দিবসে আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক, জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে রাজধানীর ২৬টি খাল দুই সিটি করপোরেশনের নিকট হস্তান্তর করেন। ইহার পরই অল্প সময়ের মধ্যে ‘ক্র্যাশ প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে ঢাকা শহরের প্রধান খালগুলি দখলমুক্তকরণের ঘোষণা দিয়াছিলেন দুই সিটি মেয়র। তদনুযায়ী তাহারা খাল পুনরুদ্ধার কর্মসূচিও গ্রহণ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এমনকি খাল দখলমুক্ত রাখিতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা গ্রহণ করে। সেই খালগুলির বিদ্যমান অবস্থান হইতে ১০ ফুট দূরত্বে লাল খুঁটি পুঁতিয়া দিয়া উত্তর সিটি করপোরেশন বলিয়াছিল, এই ১০ ফুট জায়গায় প্রয়োজনে ওয়াকওয়ে, সবুজায়ন বা সৌন্দর্যবর্ধন করা হইবে। কিন্তু অদ্যাবধি তাহার কোনো কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করা যায় নাই।
এই অচলাবস্থার কারণ হইল, খালের মালিকানা হস্তান্তর হইয়াছে মৌখিকভাবে; সিটি করপোরেশনগুলি দলিল বা নকশার গেজেটেড কপি বুঝিয়া পায় নাই। ঢাকা ওয়াসা কিংবা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হইতে লিখিত কাগজপত্র না পাইবার কারণে সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ খালপাড়ে ইমারত নির্মাণের অনুমতি দিতেছে না। খালপাড়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ সমকালের প্রতিবেদনেও আসিয়াছে।
ঢাকার খালের এই বাস্তবতা দুঃখজনক। খাল হস্তান্তর করিলে কাগজপত্রসহ যথাযথভাবেই হস্তান্তর করা জরুরি। মুখে মুখে হস্তান্তর করিলে স্বাভাবিকভাবেই উহাতে মালিকানা হস্তান্তর হয় না। এতদিনেও ঢাকা জেলা প্রশাসন কিংবা ঢাকা ওয়াসার তরফ হইতে কেন খালগুলির কাগজপত্র দেওয়া হয় নাই– উহা যদ্রূপ বিস্ময়কর, তদ্রূপ দুই সিটি করপোরেশনও যে সেগুলি আদায় করিতে পারিল না, উহাও হতাশাজনক। আমরা বিশ্বাস করি, প্রতিষ্ঠানগুলি পরস্পরের মধ্যে সমঝোতা করিয়া কাগজপত্র হস্তান্তরে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে।
এক সময় রাজধানীতে অর্ধশত খালের অস্তিত্ব ছিল, যাহা প্রায় অর্ধেকে নামিয়া আসিয়াছে। তদুপরি বিদ্যমান খালগুলির মালিকানার দ্বন্দ্ব উহাদের দুর্দশা আরও বাড়াইয়া তুলিবে। বাস্তবেও প্রায় প্রতিটি খালের অবস্থা এখন নাজুক। এমতাবস্থায় ত্বরিত পদক্ষেপ না লইলে উহাদের সুরক্ষা কঠিন হইবে। পাশাপাশি খাল এলাকার নাগরিকদের দুর্ভোগও দীর্ঘতর হইবে।
তজ্জন্য আমরা চাহিব, ঢাকা জেলা প্রশাসন দ্রুত খালগুলির কাগজপত্র দুই সিটি করপোরেশনকে ফিরাইয়া দিবে এবং তদনুযায়ী সিটি করপোরেশন খালগুলির সুরক্ষা নিশ্চিত করিবে। এই বিষয়ে সরকারেরও হস্তক্ষেপ করা প্রয়োজন বলিয়া আমরা মনে করি।