দরিভাল জুনিয়র ব্রাজিল জাতীয় দলের ডাগ আউটে দাঁড়িয়ে যেভাবে আশা দিয়েছিলেন তার প্রতিফলন পরে পাওয়া যায়নি। দলটি দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে পাঁচে আছে। শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬.৪৫ মিনিটে ঘরের মাঠে জয় লক্ষ্য ধরে কলম্বিয়ার বিপক্ষে নামবে সেলেসাওরা। 

নেইমার ১৭ মাস পর জাতীয় দলে ফিরলেও ইনজুরি নিয়ে পুনরায় মাঠের বাইরে চলে গেছেন। এর বাইরে ব্রাজিল কোচ দরিভাল মোটামুটি সেরা দলটাই পাচ্ছেন। কেবল এদের মিলিতাও ও দানিলো ইনজুরিতে আছেন। এর মধ্যে মিলিতাওয়ের জায়গা পূরণে গ্যাব্রিয়েল মাঘালহায়েস ভালো মতোই প্রস্তুত। তার সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ মার্কুইনোস।  

ব্রাজিল ম্যানেজমেন্টের চিন্তায় ৩৩ বছর বয়সী দানিলোর বিকল্প তৈরির চিন্তা আছে। ভ্যান্ডারসনের জন্য জায়গা পাকা করার ভালো সুযোগ কলম্বিয়া ও আর্জেন্টিনা ম্যাচ। সর্বশেষ ম্যাচে মোনাকোর তরুণ রাইট ব্যাক ভালো ফুটবলও খেলেছেন। তবে লেফট ব্যাকে ব্রাজিলের সমস্যা রয়েই যাচ্ছে। গিহার্মে অ্যারেনা এখনো ঠিক মন জয় করতে পারেননি। আবনার এবং ওয়েনডেলও প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। 

ব্রাজিলের মাঝমাঠের ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন ব্রুনো গিমারেজ। সম্প্রতি কারাবাও কাপ জিতেছেন নিউক্যাসল অধিনায়ক। তার সঙ্গে জেরসনের ডিফেন্সিভ মিডফিল্ড সামলানোর দায়িত্ব পড়তে পারে। যদিও জোয়েলিনটন একাদশে ঢোকার লড়াইয়ে থাকবেন। 

চার অ্যাটাকার নিয়ে একাদশ সাজাতে পারেন ব্রাজিল কোচ দরিভাল। লেফট ব্যাকে ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে রেখে রাইট ব্যাকে ফেরানো হতে পারে রাফিনিয়াকে। যদিও সর্বশেষ ম্যাচে নাম্বার টেনের ভূমিকায় ছিলেন তিনি। রদ্রিগো গোয়েসকে এবার দেওয়া হতে পারে ওই দায়িত্ব। স্ট্রাইকার পজিশনে খেলানো হতে পারে উলভসের ম্যাথিউস কুনিয়াকে। ক্যারিয়ার সেরা ছন্দে আছেন তিনি। 

ব্রাজিলের সম্ভাব্য একাদশ: অ্যালিসন, ভ্যান্ডারসন, মার্কুইনোস, গ্যাব্রিয়েল মাঘালহায়েস, গিহার্মে অ্যারানা, জেরসন, ব্রুনো গিমারেজ, রদ্রিগো, ভিনিসিয়াস, রাফিনিয়া,, ম্যাথিউস কুনিয়া।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ বক প ব ছ ই

এছাড়াও পড়ুন:

সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই

নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।

নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।

কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।

গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।

হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।

হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।

হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’

‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’

রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।

হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।

এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ