দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা এবং তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনেও বহুল আলোচিত সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট খুলেনি। তনু ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে মামলার তদন্তে কেটে গেছে ৯ বছর। তবে দুই দফায় করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও তার মৃত্যুর কারণ ‘উল্লেখ’ করা হয়নি। তাই মামলার তদন্তে মৃত্যুর রহস্য বের না হওয়া এবং বিচার না পাওয়ার শঙ্কায়  ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর পরিবার।

তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই কর্মকর্তা বলেছেন গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত চলছে।

তনুর পরিবারের অভিযোগ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধারের পর মরদেহের প্রথম দফায় ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ বের না হওয়ায় ৩০ মার্চ কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। এতেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করার বিষয়টি আলোচিত হলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তা না করায় এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, আমার মেয়েটা সুস্থ ছিলেন। তাহলে সে মরলো কিভাবে? ঘটনার রাতে তাকে জঙ্গলে কে নিয়ে গেল? শুরুতে তনুর পরিধেয় বস্ত্র ও কিছু সন্দেহভাজন লোকের ডিএনএ সংগ্রহ করার কথা বলা হলেও এর ফলাফল কি এসেছে তা আজও আমরা জানতে পারিনি। 

তিনি বলেন, সিআইডির তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ মামলাটির তদন্তে বিশেষ তদারকি করতে কুমিল্লা এসপি অফিসে আসেন। সিআইডির সদর দপ্তরেও গিয়েও আমরা একাধিকার সাক্ষ্য দিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল পেলাম না। সিআইডি মামলাটি ফেলে রেখে পিবিআইয়ে দেয়। তারাও (পিবিআই) আগের অবস্থায় ফেলে রেখে আবার নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। জানি না মেয়ে হত্যার বিচার পাবো কিনা। 

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কুমিল্লা সিআইডি থেকে মামলার ডকেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকায় হস্তান্তর হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্টের পর তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআই ঢাকা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো.

তরিকুল ইসলাম। তিনি গত ৬ মাসেও ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেননি। 

মেয়ের স্মৃতি চারণ করে তনুর মা আনোয়ারা বলেন, রোজার সময় মেয়ে (তনু) ইফতারি তৈরি ও সেহেরীর আয়োজন করত। রাত-দিন শুধু মেয়েটার কথা মনে হয়। চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি, দেশে সব হত্যার বিচার হয়, আমরার তনুর বিচার পাইলাম না। আমার তনুকে কারা মেরেছে আল্লাহ দেখেছে, এ জগতে বিচার না পাইলে পরকালে তো পাবো। 

তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রোবেল বলেন, বর্তমানে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ইলেকট্রিশিয়ান পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছি। বাবা ইয়ার হোসেন একই অফিস থেকে গত জানুয়ারি মাসে অবসরে যান। 

রুবেল বলেন, নতুন তদন্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়ে একবার বাবাকে কল করেছিলেন। পরে আর যোগাযোগ নেই। আপুর মৃত্যুবার্ষিকীতে সেনানিবাসের বাসায় মিলাদের আয়োজন করা হবে। এতিমখানায় কিছু খাবার দেওয়া হবে।   

মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাই। এখনো ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়নি। তনুর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। রমজানের শেষ দিকে কিংবা ঈদের পর ঘটনাস্থলে যাবো। এ জন্য কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে।

তদন্তের অগ্রগতি কিংবা ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, এ মুহুর্তে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প ব আই ময়ন তদন ত কর মকর ত তদন ত কর তদন ত ক ন তদন ত তদন ত র প ব আই মরদ হ স আইড

এছাড়াও পড়ুন:

যেসব গণমাধ্যম সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন দেবে না, তাদের আর দরকার নেই: প্রেস সচিব

যেসব গণমাধ্যম সাংবাদিকদের সম্মানজনক বেতন, ভাতা দেবে না সেসব গণমাধ্যম আর দরকার নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম এ মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার ঢাকায় কর্মরত পেশাদার সাংবাদিকদের সংগঠন ঢাকা সাব-এডিটরস কাউন্সিলের (ডিএসইসি) ইফতার মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রেস সচিব বলেন, ‘একজন রিপোর্টার বা সাব–এডিটরকে ৩০, ৪০ বা ৫০ হাজার টাকা বেতন দিতে না পারলে ওই সব গণমাধ্যম বন্ধ করে দিতে হবে।’

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ইফতার মাহফিলে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন, রাজনৈতিক ব্যক্তি, ডিএসইসির সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া সংগঠনের প্রায় পাঁচ শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

শফিকুল আলম নিজেকে সাব–এডিটর দাবি করে বলেন, ‘আমার জীবনে প্রথম সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতাই হচ্ছে সহসম্পাদক বা সাব–এডিটর হিসেবে। সাব-এডিটররা সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত। সাব-এডিটররা বেতনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার।’

ইফতার মাহফিলে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, পিআইবি ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভুঁইয়া, ডিইউজে সভাপতি শহীদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম, দেশ রূপান্তরের সম্পাদক কামাল উদ্দিন সবুজ, দৈনিক উত্তর দক্ষিণের সম্পাদক শেখ ফারুক আহমাদ, পপুলার লাইফ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিএম ইউসুফ আলী।

অনুষ্ঠানে সভাপতি ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মুক্তাদির অনিক ও সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক জাওহার ইকবাল খান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ