৯ বছরেও কুমিল্লায় তনু ‘হত্যার’ রহস্যের জট খুলেনি
Published: 20th, March 2025 GMT
দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা এবং তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনেও বহুল আলোচিত সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট খুলেনি। তনু ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী। ২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরই মধ্যে মামলার তদন্তে কেটে গেছে ৯ বছর। তবে দুই দফায় করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনেও তার মৃত্যুর কারণ ‘উল্লেখ’ করা হয়নি। তাই মামলার তদন্তে মৃত্যুর রহস্য বের না হওয়া এবং বিচার না পাওয়ার শঙ্কায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তনুর পরিবার।
তবে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই কর্মকর্তা বলেছেন গুরুত্ব দিয়ে মামলার তদন্ত চলছে।
তনুর পরিবারের অভিযোগ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধারের পর মরদেহের প্রথম দফায় ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ বের না হওয়ায় ৩০ মার্চ কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয় দফায় ময়নাতদন্ত করা হয়। এতেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। তনুকে ধর্ষণের পর হত্যা করার বিষয়টি আলোচিত হলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে তা না করায় এ নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠে। তনুর বাবা ইয়ার হোসেন সমকালকে বলেন, আমার মেয়েটা সুস্থ ছিলেন। তাহলে সে মরলো কিভাবে? ঘটনার রাতে তাকে জঙ্গলে কে নিয়ে গেল? শুরুতে তনুর পরিধেয় বস্ত্র ও কিছু সন্দেহভাজন লোকের ডিএনএ সংগ্রহ করার কথা বলা হলেও এর ফলাফল কি এসেছে তা আজও আমরা জানতে পারিনি।
তিনি বলেন, সিআইডির তৎকালীন পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ মামলাটির তদন্তে বিশেষ তদারকি করতে কুমিল্লা এসপি অফিসে আসেন। সিআইডির সদর দপ্তরেও গিয়েও আমরা একাধিকার সাক্ষ্য দিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল পেলাম না। সিআইডি মামলাটি ফেলে রেখে পিবিআইয়ে দেয়। তারাও (পিবিআই) আগের অবস্থায় ফেলে রেখে আবার নতুন কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে। জানি না মেয়ে হত্যার বিচার পাবো কিনা।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলেন, এ মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে কুমিল্লা সিআইডি থেকে মামলার ডকেট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকায় হস্তান্তর হয়। সর্বশেষ গত বছরের ৫ আগস্টের পর তদন্তের দায়িত্ব পান পিবিআই ঢাকা কার্যালয়ের পরিদর্শক মো.
মেয়ের স্মৃতি চারণ করে তনুর মা আনোয়ারা বলেন, রোজার সময় মেয়ে (তনু) ইফতারি তৈরি ও সেহেরীর আয়োজন করত। রাত-দিন শুধু মেয়েটার কথা মনে হয়। চোখের পানি ফেলে যাচ্ছি, দেশে সব হত্যার বিচার হয়, আমরার তনুর বিচার পাইলাম না। আমার তনুকে কারা মেরেছে আল্লাহ দেখেছে, এ জগতে বিচার না পাইলে পরকালে তো পাবো।
তনুর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন রোবেল বলেন, বর্তমানে ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ইলেকট্রিশিয়ান পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করছি। বাবা ইয়ার হোসেন একই অফিস থেকে গত জানুয়ারি মাসে অবসরে যান।
রুবেল বলেন, নতুন তদন্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পেয়ে একবার বাবাকে কল করেছিলেন। পরে আর যোগাযোগ নেই। আপুর মৃত্যুবার্ষিকীতে সেনানিবাসের বাসায় মিলাদের আয়োজন করা হবে। এতিমখানায় কিছু খাবার দেওয়া হবে।
মামলার নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা প্রধান কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. তরিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পাই। এখনো ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়নি। তনুর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। রমজানের শেষ দিকে কিংবা ঈদের পর ঘটনাস্থলে যাবো। এ জন্য কিছু আইনি প্রক্রিয়া আছে।
তদন্তের অগ্রগতি কিংবা ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে, এ মুহুর্তে এর বেশি কিছু বলা যাচ্ছে না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প ব আই ময়ন তদন ত কর মকর ত তদন ত কর তদন ত ক ন তদন ত তদন ত র প ব আই মরদ হ স আইড
এছাড়াও পড়ুন:
হবিগঞ্জে ২০০ বছরের পুকুর দখল, নিরব পরিবেশ অধিদপ্তর
হবিগঞ্জ জেলা শহরে ২০০ বছরের পুরোনো গোপীনাথ পুকুরের একটি অংশ মাটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তর গত ১৯ জানুয়ারি ব্যাখ্যা চেয়ে চার ব্যক্তিকে নোটিশ দেয়। সাতদিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা থাকলেও কি জবাব মিলেছে, দুই মাস পরও তা জানাতে নারাজ কর্মকর্তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুকুরের যে জায়গায় মাটি ভরাট করা হয়েছিল, তা আগের মতোই রয়েছে। মাটি ফেলার জায়গাটি জাল ও বাঁশের বেড়া দিয়ে আটকে রেখেছেন প্রভাবশালীরা। তাদের ভয়ে স্থানীয় লোকজন প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না।
নোটিশ পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- গোপীনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল কালাম, আবদুস সালাম, অমূল্য চন্দ্র দাস এবং চৌধুরী বাজার এলাকার বাসিন্দা শংকর পাল।
আরো পড়ুন:
জুলাই বিপ্লবে শহীদ জসিমের মেয়েকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, আটক ১
রাঙামাটিতে ‘ধর্ষণচেষ্টার’ মামলায় গ্রেপ্তার ১
এলাকাবাসী জানান, হবিগঞ্জ শহরের গোপীনাথপুর এলাকায় ১ একর ৫৩ শতক আয়তনের একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটি চার পাড়ে বসবাসরত ৪০ থেকে ৫০টি পরিবারের মালিকানাধীন। এই পুকুরের চারপাশ ঘেঁষে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের বসবাস।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়েকজন বাসিন্দা দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব পাড়ে মাটি ফেলে দখল করে নিয়েছেন পুকুরের একাংশ। এতে পুকুরপাড়ের বাসিন্দারা বাধা দেন। সেই বাধা উপেক্ষা করে রাতের আঁধারে মাটি ফেলা হয় পুকুরে।
এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুর দখলের প্রমাণ পান এবং চার ব্যক্তিকে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সাতদিনের সময় বেঁধে দিয়ে ১৯ জানুয়ারি নোটিশ দেন। এরপর দুইমাস অতিবাহিত হলেও পুকুর দখল মুক্ত করতে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে কয়েকজন জানান, স্থানীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর পরিবেশ অধিদপ্তরের কয়েকজন লোক ঘটনাস্থলে আসেন। তারা পরবর্তীতে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন কিনা তা তারা জানতে পারেননি। পরিবেশ অধিদপ্তর এভাবে নিরব থাকলে ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি দখলদারদের কবলে চলে যাবে।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গাপীনাথপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল কালাম বলেন, “পুকুরের একটি অংশ মাটি ভরাট করে দখলের অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমি পুকুর দখল করিনি।” অভিযুক্ত অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, “ওই চার ব্যক্তি নোটিশের জবাব দিয়েছেন। সেটি সিলেটে বিভাগীয় কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। জবাবে কি উল্লেখ রয়েছে তা বলতে পারব না। এর বেশি তথ্য প্রয়োজন পড়লে সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে যোগাযোগ করুণ।”
নোটিশ দিয়েছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের তৎকালীন উপ-পরিচালক আক্তারুজ্জামান টুকু। এরপর তিনি হবিগঞ্জ থেকে বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যান।
বর্তমান উপ-পরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী বলেন, “কি জবাব দিয়েছে, তা এখনই বলতে পারব না। এ ঘটনায় শিগগির কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করব।”
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ারের সরকারি মোবাইলে ফোন করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।
ঢাকা/মামুন/মাসুদ