ইসরায়েলের ক্ষমতায় টিকে থাকতে গাজায় নতুন করে নৃশংসতা চালাচ্ছেন নেতানিয়াহু
Published: 20th, March 2025 GMT
ইসরায়েলি বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় ৪০০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে শতাধিক শিশুও রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এ হিসাব দিয়েছেন।
নারী-পুরুষ ও শিশুরা জীবন দিয়ে এমন একটি যুদ্ধের মূল্য চোকাচ্ছেন, যা গাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য নয়, বরং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য চালানো হচ্ছে।
ইসরায়েল গত মঙ্গলবার থেকে গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমাবর্ষণ শুরু করেছে। এমন একসময় হামলা শুরু করা হলো, যখন গাজা উপত্যকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ অমানবিক পরিস্থিতিতে পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখছেন। তাঁরা খাবার আর সুপেয় পানির তীব্র সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সাধারণ ইসরায়েলিরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ এই হামলাকে সমর্থন করছেন। অন্ধভাবে বিশ্বাস করছেন, এ হামলা ইসরায়েলি জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনবে। হামাসের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া যাবে। অন্যদিকে আরও কিছু মানুষ, বিশেষ করে জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা সতর্ক করে দিয়েছেন, গাজায় ইসরায়েলের বাহিনীর নির্বিচার হামলা জিম্মি থাকা প্রিয়জনদের বিপদে ফেলবে।
নেতানিয়াহু ও তাঁর সরকার বারবার দাবি করলেও এই যুদ্ধ কখনো জিম্মি উদ্ধারের জন্য ছিল না।
ইসরায়েল শুধু যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে অনাগ্রহ দেখায়নি, বরং গাজায় একতরফা যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। যুদ্ধবিরতিতে অবশিষ্ট সব জিম্মির মুক্তির বিষয়ে নিশ্চয়তার কথা ছিল। তাঁদের মুক্তি দিতে হামাসের দেওয়া প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন নেতানিয়াহু।
যদি নেতানিয়াহু সরকার জিম্মিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকে সত্যিকার অর্থে অগ্রাধিকার দিত, তাহলে অনেক আগেই একটি চুক্তিতে পৌঁছানো যেত। এর ফলে যুদ্ধ থেমে যেত। আর যুদ্ধ থামলে নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক জোট ভেঙে পড়বে। তাই নিরাপত্তার অজুহাতে পরিচালিত যুদ্ধকে রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগাজায় এক দিনে নিহত ৭০ ফিলিস্তিনি, ‘সর্বশেষ সতর্কতা’ জারি ইসরায়েলের১ ঘণ্টা আগেরাজনৈতিক সংকটগাজা উপত্যকায় নেতানিয়াহুর নতুন করে বোমা হামলা এটাই ইঙ্গিত দেয় যে নিজের শাসনব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে নেতানিয়াহু যেকোনো সীমা পর্যন্ত যেতে পারেন।
এটা মোটেও কাকতালীয় নয় যে গুরুত্বপূর্ণ এক ভোটাভুটির (ইসরায়েলের পার্লামেন্টে) আগে মঙ্গলবার গাজায় নতুন করে নির্বিচার হামলা শুরু করলেন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের সেনাবাহিনীতে নিজেদের সম্প্রদায় থেকে নিয়োগ দেওয়া বাদ রাখতে আইন পাস করা না হলে নেতানিয়াহু সরকারকে উৎখাতের হুমকি দিয়েছেন অতি কট্টরপন্থী আইনপ্রণেতারা। ইসরায়েলের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেনগাভির সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছেন।
জেরুজালেমে একটি বিশাল আর পরিকল্পিত বিক্ষোভের আগেই গাজায় নতুন করে যুদ্ধ শুরু করা হয়েছে। এ পরিস্থিতি ইসরায়েলের রাজনৈতিক সংকটের গভীরতার প্রতি ইঙ্গিত করে। সেই সঙ্গে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর দেশটির ভূখণ্ডে হামাসের হামলা ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য রাষ্ট্রীয় তদন্ত কমিশন গড়তে সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে চাপ ক্রমে বাড়ছে।
আরও পড়ুন‘মা, আমি ক্লান্ত, মরে যেতে চাই’: ইসরায়েলি আগ্রাসনে মানসিক বিপর্যয়ে শিশুরা৪ ঘণ্টা আগেনেতানিয়াহু প্রোক্রাস্টেসের (গ্রিক পুরাণের এক নিষ্ঠুর চরিত্র) মতো কাজ করছেন। তিনি সবকিছু পুড়িয়ে ফেলতে চান। নিরীহ মানুষের জীবন, ইসরায়েলিদের সামাজিক সংহতি, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা—এসব কিছু বিনষ্ট করতে চান শুধু আরও কয়েকটা দিন ক্ষমতায় থাকার জন্য।
নেতানিয়াহু বরাবর ঠিক এভাবেই কাজ করেন। সমস্যার বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজার পরিবর্তে, তিনি বাস্তবতাকে তাঁর রাজনৈতিক চাহিদার কাছে নত হতে বাধ্য করেন।
আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধের ইতি টানার পরিবর্তে নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও জিম্মিদের বর্বরতা আর ধ্বংসের একটি কৃত্রিম কাঠামোয় আটকে রেখেছেন। নিজের ব্যর্থতার মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে তিনি রাজনৈতিক, সামরিক বা জনসাধারণের পক্ষ থেকে আসা যেকোনো সমালোচনা প্রতিহত করতে চান।
রাজনীতিতে টিকে থাকতে নেতানিয়াহু গাজায় বেসামরিক মানুষের ওপর বোমা হামলা থেকে শুরু করে অধিকৃত পশ্চিম তীরে শরণার্থীশিবির ধ্বংস করা, হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা—সবকিছুর অনুমোদন দেবেন।
ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নেতানিয়াহু সরকারি তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান শিন বেতের প্রধানকে বরখাস্ত করতে চান। তিনি এমন একটি ফৌজদারি বিচার এড়াতে পুরো বিচারব্যবস্থার ওপর আঘাত হানতে চান, যেটা তাঁকে কারাগারেও পাঠাতে পারে।
আরও পড়ুনগাজায় হামলা চালিয়ে চার শতাধিক মানুষ হত্যার পর নেতানিয়াহু বললেন, ‘এটা কেবল শুরু’১৯ মার্চ ২০২৫প্রতিশোধের চক্রইসরায়েলি সমাজের বড় একটি অংশ আর প্রশ্ন করছে না। কেউ কেউ অন্ধভাবে সীমাহীন মিথ্যা বিশ্বাস করছেন, আরও বোমাবর্ষণ এবং নতুন করে শত শত বেসামরিক মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে যেকোনো উপায়ে জিম্মিদের মুক্ত করা যাবে। প্রতিশোধের এই নিষ্ঠুর আর ব্যর্থ চক্র ইসরায়েলকে নৈতিক ও সামরিক পতনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
এটা শুধু ফিলিস্তিনিদের জীবন নিয়ে উদাসীনতার প্রতিফলন নয়, একই সঙ্গে এটা ইসরায়েলি জিম্মিদের জীবনের প্রতিও একইভাবে উদাসীনতা দেখানো। অথচ ইসরায়েলের বেশির ভাগ মানুষ ব্যাখ্যা দাবি করেন না বা জিজ্ঞাসাও করেন না, কেন সরকার জিম্মিদের ঘরে ফিরিয়ে আনার সুযোগ হাতছাড়া করেছে।
রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমও এতে জড়িত। এই কারসাজি প্রকাশ করার পরিবর্তে সাংবাদিক আর ভাষ্যকারেরা নেতানিয়াহুকে সহযোগিতা করছেন। এর ফলে নেতানিয়াহু সহজেই নিজের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে পারছেন।
আরও পড়ুনযুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ ১৮ মার্চ ২০২৫নেতানিয়াহু ইসরায়েলি জাতির সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার জন্য ইতিহাসের পাতায় চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তিনি এমন একজন মানুষ, যিনি বারবার তাঁর দেশের নাগরিকদের পরিত্যাগ করেছেন, প্রতিটি কূটনৈতিক উদ্যোগকে ধ্বংস করেছেন, সেই সঙ্গে এমন একটি দখলকে স্থায়ী রূপ দিয়েছেন, যা সব মন্দের মূল।
নেতানিয়াহুর এমন ভূমিকা বারবার যুদ্ধাপরাধ ঘটাচ্ছে। এখনো তিনি সেটা চালিয়ে যাচ্ছেন। নেতানিয়াহু নিরীহ মানুষের জীবন, ইসরায়েলিদের সামাজিক সংহতি, মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা—এ সবকিছুই বিনষ্ট করতে চান। আর এর পেছনে উদ্দেশ্য, ক্ষমতায় টিকে থাকা।
আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩০, বেশির ভাগ নারী ও শিশু১৮ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র র জন ত ক ইসর য় ল র ত ন কর র জন য র পর ব র জ বন ব স কর ব রব র ক ষমত করছ ন ইসর য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গুলশানে ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর গুলশানে পুলিশ প্লাজা সংলগ্ন শুটিং ক্লাবের সামনে সুমন মিয়া (৩০) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত সুমন মহাখালী টিভি গেট এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবসা করতেন। অনেকেই তাঁকে ‘টেলি সুমন’ নামে ডাকেন। তাঁর বাড়ি রংপুরে মিঠাপুকুর উপজেলায়।
সুমনের স্ত্রীর বড় ভাই বাদশা মিয়া রুবেল জানান, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে মিরপুর ভাসানটেক এলাকায় থাকতেন সুমন। মহাখালী টিভি গেট এলাকায় ‘প্রিয়জন’ নামে তাঁর ইন্টারনেটের ব্যবসা রয়েছে। আগে মহাখালী টিভি গেট এলাকায় থাকতেন তিনি। সুমন বনানী থানা যুবদলের কর্মী ছিলেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, গুলশানের পুলিশ প্লাজার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পাঁচ থেকে ছয় দুর্বৃত্ত সুমনের বুকে, পেটে ও মাথায় গুলি করে চলে যায়। পরে তাঁকে উদ্ধার করে রাত ১১টার দিকে ঢামেক হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে স্বজনের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
সুমনের স্বজন বাদশার দাবি, টিভি গেট এলাকায় ‘একে-৪৭ গ্রুপের’ রুবেল নামে এক ব্যক্তি ডিসের ব্যবসা করেন। তার সঙ্গেই সুমনের ব্যবসা নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধ ছিল। তিনি মাঝেমধ্যে সুমনকে হত্যার হুমকি দিতেন। ওই গ্রুপের লোকজন তাঁকে গুলি করে থাকতে পারে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, গুলির পরই সুমন ঘটনাস্থলে মারা যান। গুলি করা একজনের পরনে সাদা শার্ট ও কালো প্যান্ট ছিল। সিসিটিভির ফুটেজ দেখে তার পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির মুখপাত্র উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, গুলশানে গুলির ঘটনা শুনেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় একজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পুলিশের আরেক কর্মকর্তা বলেন, হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ শুরু করেছে।