বেশ কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নজর কাড়ছে একটি পোস্টার। সেই পোস্টারে দেখা যায়, পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে নায়ক ও নায়িকা। নায়কের ডান হাত ও নায়িকার বাঁ হাত নায়কের পকেটে। সিনেমাটি ৭ মার্চ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমার নাম ‘হোয়েন লাইফ গিভস ইউ মুনজেরিনস’। এই সিনেমার নায়ক–নায়িকার জায়গায় দেখা গেল আয়মান সাদিক ও মুনজেরিন শহীদকে! চিনেছেন তাঁদের?

‘হোয়েন লাইফ গিভস ইউ টানজারিনস।’ সিনেমার পোস্টার.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিপণ দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা

ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা প্রথমে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। ছেলেকে জীবিত ফেরত দিতে টাকা দিতে রাজি হন বাবা। পরে ৫, ১০, ১৫ ও তিন দিন পর ২৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। জমিজমা বেচে চাহিদামতো টাকা দেন বাবা। কিন্তু ২৫ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদরে।
নিহত মিলন হোসেন (২৩) দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁওয়ের চাপাপাড়ার পাঞ্জাব আলীর ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছন থেকে নিখোঁজ হন তিনি।  রাত ১টায় ভুক্তভোগী পরিবারকে মোবাইল ফোনে অপহরণের বিষয়টি জানানো হয়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিন লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। পরদিন দুপুরে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। তবে পরে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। পরদিন টাকা বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়। তিন দিন পরে ১৫ লাখ টাকা চায় চক্রটি। সবশেষে ২৫ লাখ টাকা চায়। ৯ মার্চ রাতে ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেন ছেলের বাবা। এর পরও ছেলেকে না পেয়ে গত বুধবার তিনি থানায় অপহরণ মামলা করেন। গত বুধবার রাতে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলো সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে সেজান আলী (২৮) ও মাদারগঞ্জ পাইকপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ হোসেন (২৫)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল সাহ্‌রির সময় সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকায় সেজান আলীর বাড়ির পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে গতকাল তেলীপাড়ার আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে রত্না আক্তার ইভাকেও (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।

এদিকে, ভোরে বিক্ষুব্ধ জনতা অপহরণকারী সন্দেহে সেজানের বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের বাধা দেয় বিক্ষুব্ধরা। আরেক সন্দেহভাজন অপহরণকারী মুরাদ হোসেনের বাড়িঘর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়া গতকাল বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয়রা। জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন ডিসি। পরে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের সামনে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী রাস্তা অবরোধ করেন। এতে যানজট তৈরি হয়।

নিহতের চাচাতো ভাই হামিদুর রহমান জানান, সেজান ও মিলন মহব্বতপুর কারিগরি বিদ্যালয়ে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। তারা সহপাঠী ছিলেন। ঘটনার পরিকল্পনাকারী সেজান। কোনো গণমাধ্যমে কাজ না করলেও এলাকায় সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। সেজান কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলনকে অপহরণ করান। অপহরণ করার পর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সাংবাদিক হিসেবে বাড়িতেও যান। টাকা না দিলে বা পুলিশকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা জোগাড় করে পরিবার। ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী চলন্ত ট্রেনে সেই টাকা অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেন বাবা। মিলনের মোবাইল চালু রেখে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল অপহরণকারীরা। টাকা নেওয়ার পর থেকে মোবাইল বন্ধ।
শিবগঞ্জ মহেশপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেজানের পরিবারটি অনৈতিক ব্যবসায় জড়িত ছিল। বাড়ির জায়গাটুকুও তাদের নয়; পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোয়ার্টার ছিল। সেটি তারা দখল করে রেখেছিল।’

সূত্র জানায়, হত্যার পর মিলনের একটি চোখ নষ্ট করাসহ গোপনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। মুক্তিপণ আদায় করার পর অপহরণকারীদের চিনে ফেলেন মিলন। এ কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি ইশরাত ফারজানা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মতো আমারও দাবি অপরাধীর ফাঁসি হোক। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে আমিও রাস্তায় নামব। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।’

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ