যশোরে চার বছরে শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্তকে নিয়ে তুলকালাম
Published: 20th, March 2025 GMT
যশোরে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে চার বছরের এক মেয়েকে ধর্ষণ চেষ্টায় অভিযুক্তকে নিয়ে থানায় তুলকালাম কাণ্ড ঘটেছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) বিকেলে অভিযুক্তকে ও শিশুটিকে হেফাজতে নেয় কোতয়ালি থানা পুলিশ। এসময় অভিযুক্তকে কয়েক দফায় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে একদল শিক্ষার্থী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে থানার এক কনস্টেবল হামলার শিকার হন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিশুকে আসামি করে কোতয়ালি থানায় মামলা করেছেন মেয়েটির বাবা। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত শহরের সার্কিট হাউজপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
শিশুটির বাবার অভিযোগ- তিনি, তার স্ত্রী ও ছেলে কাজের জন্য বাইরে ছিলেন। দুপুরের খাবার খেতে তিনি বাড়ি এসে দেখেন তাদের প্রতিবেশীর পঞ্চম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে তার মেয়ের পরিধেয় পোশাক খুলে পা বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণ চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি মেয়েকে উদ্ধার ও ছেলেটিকে আটক করেন। কিন্তু ছেলেটি তার হাত থেকে ছুটে পালিয়ে যায়।
এদিকে, শিশুটির ভাইয়ের কাছ থেকে খবর পেয়ে যশোর সরকারি এমএম কলেজ ও জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তকে আটকের চেষ্টা করে। সেখানে অভিযুক্তের বাবা ও তাদের বাড়িওয়ালার সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা থানায় এসে অবস্থান নেয়। বিকেল চারটার দিকে পুলিশ অভিযুক্ত কিশোরকে আটক করে থানায় নেওয়ার সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা হামলা চালায়। এছাড়া বিকেল ৫ টার পর থানা ভবনের ভিতরে সংশ্লিষ্ট অভিযোগে এক ব্যক্তিকে মারধর করে তারা। এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থানায় কর্তব্যরত পুলিশ তাদের ভবনের বাইরে নিয়ে যেতে চাইলে এক পুলিশ সদস্যকে ধাওয়া করে বিক্ষুব্ধরা। ওসির কক্ষে হেফাজতে থাকা ওই অভিযুক্তকে কয়েকদফা ছিনিয়ে নেওয়া চেষ্টা ও মারধর করে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। এ সময় থানার ভিতরে তারা ধর্ষক বিরোধী নানা স্লোগান দিতে থাকেন।
এ অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশারসহ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা কোতয়ালি থানায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) কাজী বাবুল হোসেন বলেন, “চার বছরের শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তার বয়স নির্ধারণে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সন্ধ্যায় আসামিকে আদালতে পাঠালে বিচারক কারাগারে প্রেরণ করেছেন।
ঢাকা/রিটন/টিপু
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও ছেলেকে বাঁচাতে পারলেন না বাবা
ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। অপহরণকারীরা প্রথমে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। ছেলেকে জীবিত ফেরত দিতে টাকা দিতে রাজি হন বাবা। পরে ৫, ১০, ১৫ ও তিন দিন পর ২৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়। জমিজমা বেচে চাহিদামতো টাকা দেন বাবা। কিন্তু ২৫ দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। এ ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সদরে।
নিহত মিলন হোসেন (২৩) দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁওয়ের চাপাপাড়ার পাঞ্জাব আলীর ছেলে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, অনলাইনে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টায় ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পেছন থেকে নিখোঁজ হন তিনি। রাত ১টায় ভুক্তভোগী পরিবারকে মোবাইল ফোনে অপহরণের বিষয়টি জানানো হয়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে তিন লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। পরদিন দুপুরে তিন লাখ টাকা দিতে রাজি হয় পরিবার। তবে পরে চক্রটি পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে। পরদিন টাকা বাড়িয়ে ১০ লাখ করা হয়। তিন দিন পরে ১৫ লাখ টাকা চায় চক্রটি। সবশেষে ২৫ লাখ টাকা চায়। ৯ মার্চ রাতে ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেন ছেলের বাবা। এর পরও ছেলেকে না পেয়ে গত বুধবার তিনি থানায় অপহরণ মামলা করেন। গত বুধবার রাতে দুই সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তারা হলো সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর গ্রামের মতিয়ার রহমানের ছেলে সেজান আলী (২৮) ও মাদারগঞ্জ পাইকপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে মুরাদ হোসেন (২৫)। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের দেওয়া তথ্যমতে, গতকাল সাহ্রির সময় সদর উপজেলার শিবগঞ্জ মহেশপুর বিট বাজার এলাকায় সেজান আলীর বাড়ির পরিত্যক্ত টয়লেট থেকে অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে গতকাল তেলীপাড়ার আবদুর রাজ্জাকের মেয়ে রত্না আক্তার ইভাকেও (১৯) গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে, ভোরে বিক্ষুব্ধ জনতা অপহরণকারী সন্দেহে সেজানের বাড়িঘর ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের বাধা দেয় বিক্ষুব্ধরা। আরেক সন্দেহভাজন অপহরণকারী মুরাদ হোসেনের বাড়িঘর ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ছাড়া গতকাল বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় ঘেরাও করেন স্থানীয়রা। জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন ডিসি। পরে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের সামনে শিক্ষার্থীরা ঘণ্টাব্যাপী রাস্তা অবরোধ করেন। এতে যানজট তৈরি হয়।
নিহতের চাচাতো ভাই হামিদুর রহমান জানান, সেজান ও মিলন মহব্বতপুর কারিগরি বিদ্যালয়ে এসএসসি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। তারা সহপাঠী ছিলেন। ঘটনার পরিকল্পনাকারী সেজান। কোনো গণমাধ্যমে কাজ না করলেও এলাকায় সাংবাদিক পরিচয় দিতেন। সেজান কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলনকে অপহরণ করান। অপহরণ করার পর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য সাংবাদিক হিসেবে বাড়িতেও যান। টাকা না দিলে বা পুলিশকে জানালে হত্যার হুমকি দেন। বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি ও ধারদেনা করে ২৫ লাখ টাকা জোগাড় করে পরিবার। ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী চলন্ত ট্রেনে সেই টাকা অপহরণকারীদের হাতে তুলে দেন বাবা। মিলনের মোবাইল চালু রেখে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল অপহরণকারীরা। টাকা নেওয়ার পর থেকে মোবাইল বন্ধ।
শিবগঞ্জ মহেশপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সেজানের পরিবারটি অনৈতিক ব্যবসায় জড়িত ছিল। বাড়ির জায়গাটুকুও তাদের নয়; পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কোয়ার্টার ছিল। সেটি তারা দখল করে রেখেছিল।’
সূত্র জানায়, হত্যার পর মিলনের একটি চোখ নষ্ট করাসহ গোপনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়েছে। মুক্তিপণ আদায় করার পর অপহরণকারীদের চিনে ফেলেন মিলন। এ কারণে তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের কাছ থেকে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি ইশরাত ফারজানা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাদের মতো আমারও দাবি অপরাধীর ফাঁসি হোক। অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত না হলে প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে আমিও রাস্তায় নামব। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।’