বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এর আগে খ্যাতি অর্জন করলেও চলতি বছরে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডসে (অস্কার) সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে পুরস্কার জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছেন হলিউড অভিনেত্রী জোয়ি সালদানা। জ্যাক আাঁদিয়ায়ের ‘এমেলিয়া প্যারেজ’ সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য তিনি এ সম্মাননা পান জোয়ি।
অস্কার জয়ের পর আবেগাপ্লুত হয়ে সালদানা তাঁর পরিবার ও অভিবাসী সম্প্রদায়ের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান এবং ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে অস্কার গ্রহণ করেছে।’ এর আগে একই সিনেমার জন্য চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কারও পান।
জোয়ি সালদানা ১৯৭৮ সালের ১৯ জুন নিউ জার্সির পাসাইক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ডোমিনিকান এবং বাবা পুয়ের্তো রিকান বংশোদ্ভূত। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার ডোমিনিকান রিপাবলিকে চলে যায়। যেখানে তিনি ব্যালে শেখা শুরু করেন। মাত্র ৯ বছর বয়সে বাবাকে হারান জোয়ি। বেড়ে ওঠার সময়টা তাঁর কেটেছে মায়ের কাছেই। বলতে গেলে একাই তিন মেয়েকে বড় করেছেন তাঁর মা। তাই মায়ের ঘর-বাইর সামলানোর ব্যাপারটা জোয়ির কাছে মোটেও নতুন কিছু নয়; বরং এটাই তিনি ছোটবেলায় নিজের মাকে করতে দেখেছেন। আর তাঁর ব্যক্তিত্বে মায়ের প্রভাব যে কতটা, সেটা তিনি অনেকবারই সাক্ষাৎকারে বলেছেন।
রুপালি পর্দায় জোয়ির যাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সেন্টার স্টেজ’ সিনেমার মাধ্যমে। যেখানে তিনি একজন ব্যালে ডান্সারের ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর ‘ক্রসরোডস’ এবং ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: দ্য কার্স অব দ্য ব্ল্যাক পার্ল’ ছবিতে অভিনয় করে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে থাকেন।
জোয়ি সফলতার পথে যাত্রা শুরু করেন ২০০৯ সালে জেমস ক্যামেরুনের ‘অ্যাভাটার’ সিনেমায় ‘নেইটিরি’ চরিত্রে অভিনয় করেন। যা তাঁকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এনে দেয়। এরপর মার্ভেল সিনেম্যাটিক ইউনিভার্সের ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’ ফ্র্যাঞ্চাইজির ‘গামোরা’ চরিত্রে অভিনয় করেন, যা তাঁকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তোলে। স্টার ট্রেক সিরিজেও তিনি ‘নিউটা উহুরা’ চরিত্রে অভিনয় করেন, যা সাই-ফাই সিনেমায় তাঁর শক্ত অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করেছে। এসব চরিত্রের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, তিনি কেবল গ্ল্যামারাস নায়িকা নন; বরং একজন শক্তিশালী অভিনেত্রী। সাই-ফাই থেকে অ্যাকশন, রোমান্স থেকে ড্রামা– সব ধরনের চরিত্রেই তিনি দক্ষতার ছাপ রেখেছেন।
চলতি বছরে জোয়ির এ অর্জন শুধু ব্যক্তিগত সাফল্যই নয়, বরং হলিউডে বৈচিত্র্য ও প্রতিনিধিত্বের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। কারণ, তিনি সবসময় নারীদের ক্ষমতায়ন, জাতিগত বৈষম্য দূরীকরণ ও শিল্পের বহুমুখী উপস্থাপনের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। অন্যদিকে জোয়িকে সব্যসাচী বলতেই পারেন। কারণ, তিনি ঘর-বাইর দুটিই সামলেছেন সমান দক্ষতায়। হলিউডে যখন তাঁর সুসময়, তখনই তিনি সন্তান নেন। ২০১৪ সালে মুক্তি পায় জোয়ির ‘গার্ডিয়ানস অব দ্য গ্যালাক্সি’। সে বছরই জন্ম নেয় তাঁর দুই যমজ ছেলে। বোওয়ি ও সাই। ছবিটির পরের কিস্তি আসে ২০১৭ সালে। সে বছর জন্মায় তাঁর তৃতীয় ছেলে জেন। ব্যস্ত সেই সময়েও হলিউডের পাশাপাশি ঠিকই পালন করেছেন মায়ের সব দায়িত্ব।
জোয়ি কখনোই শারীরিক গড়ন বা চেহারা দিয়ে কাউকে মূল্যায়ন করেন না। কাউকে খারাপ তখনই ভাবেন, যখন সে খারাপ কথা বলে বা কথায়-কাজে খারাপ প্রবণতা প্রকাশ করে। সালদানা শুধু একজন অভিনেত্রী নন, তিনি হলিউডে লাতিনো নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণা। তাঁর বহুমুখী প্রতিভা, কঠোর পরিশ্রম এবং নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছেন। ভবিষ্যতেও তাঁর কাজ দর্শকদের আনন্দ দেবে এবং সিনেমার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করাই যায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স অব দ য কর ছ ন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শিশুর পরিবারকে নিরাপত্তা দিতে হাইকোর্টের নির্দেশ
বরগুনায় ধর্ষণের শিকার কিশোরী ও তার পরিবারের নিরপত্তা নিশ্চিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া মাগুরায় নির্যাতনে মৃত্যুবরণকারী শিশুর বড় বোনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এই নিরাপত্তা দিতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত এক সম্পুরক আবেদনের শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন। একই আদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা নিয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে করতেও তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই আইনের ১৪ ধারায় বলা হয়েছে, ধর্ষণসহ নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। যদি পরিচয় প্রকাশ করা হয় তাহলে দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ ও ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসাইন।
আবেদনে বলা হয়েছে, বরগুনা পৌর এলাকায় গত ৪ মার্চ বিকেলে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে সপ্তম শ্রেণিপড়ুয়া কিশোরীকে এক বখাটের নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করে। এরপর তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। পরদিন সকালে ওই কিশোরীকে স্থানীয় পার্কে ফেলে রেখে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কিশোরীর বাবা (৩৭) ওই দিন রাতেই বরগুনা সদর থানায় সিজিত রায়সহ দুই জনের নামে ধর্ষণের মামলা করেন। এরপর ১১ মার্চ কর্মস্থলে গিয়ে নিখোঁজ হন কিশোরীর বাবা। ওই দিন দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বাড়ির পাশে তার লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় ভিকটীমের পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অন্যদিকে মাগুরায় ধষর্ণের শিকার হয়ে মারা যাওয়া শিশু আছিয়ার বোনও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে বলে আবদেনে উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য দুটি পরিবারের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আবেদনে হাইকোর্টের নির্দেশনা চাওয়া হয়।