নেত্রকোনায় দায়িত্ব পালনকালে এক ট্রাফিক পুলিশকে জখম করার অভিযোগ উঠেছে মাহাবুব রহমান (২৫) নামের এক ইজিবাইকচালকের বিরুদ্ধে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় শহরের মোক্তারপাড়া সেতুর দক্ষিণ পাশে ট্রাফিক বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ইজিবাইকচালককে পুলিশ আটক করেছে। পরে এ ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

আহত ট্রাফিক কনস্টেবলের নাম শামসুল হক। তিনি বর্তমানে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর অভিযুক্ত মাহাবুব নেত্রকোনা পৌরসভার আনন্দবাজার এলাকার বাসিন্দা।

নেত্রকোনার ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রতিদিনের মতো গতকাল ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছিলেন শামসুল হক। সন্ধ্যায় হঠাৎ মোক্তারপাড়া সেতুর দক্ষিণ পাশে যানজট হলে ট্রাফিক কনস্টেবল শামসুল হক সিগন্যাল দিয়ে কিছু ইজিবাইক থামান। এ সময় ইজিবাইকচালক মাহাবুব রেগে ইজিবাইক থেকে নেমে শামসুলের ওপর হামলা করেন। তিনি ইজিবাইকের চাবি দিয়ে শামসুলের গালে আঘাত করেন। এ ঘটনায় তাঁর গাল ও গলা কেটে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন ও অন্য ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা মাহাবুবকে আটক করেন এবং আহত শামসুল হককে উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শামসুল হকের মুখের বাঁ পাশে বেশ কয়েকটি সেলাই করতে হয়েছে। এ ঘটনায় গতকাল রাতে মামলা করা হয়েছে।

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহ নেওয়াজ আজ বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে ইজিবাইকচালককে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। তাঁর ইজিবাইকটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত ট্রাফিক কনস্টেবল বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলার পর অভিযুক্ত চালককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সকালে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এ ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

বাসযোগ্য শহর গড়তে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার প্রয়োজন

বাসযোগ্য শহর গড়তে জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার করতে হবে। এ জন্য নগরবাসীর সচেতনতা প্রয়োজন। যাতে তাঁরা দৈনন্দিন জীবনে যতটুকু সম্ভব কম কম জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করেন।

‘বাসযোগ্য শহর বিনির্মাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা’ শীর্ষক নীতি সংলাপে উপস্থিত বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বাংলামোটরে প্ল্যানার্স টাওয়ারে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) মিলনায়তনে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার। তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীলতার কারণে দেশের বায়ুমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে এবং ক্রমেই এটি তীব্র আকার ধারণ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুমান সব সময়ই নিম্নমানের থাকে। সংস্থার মতে, বায়ুদূষণ প্রতিবছর প্রায় ৭০ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঘটায়। পাশাপাশি স্ট্রোক, হৃদ্‌রোগ, ফুসফুস ক্যানসার এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগসহ বিভিন্ন গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জমান প্রবন্ধে ৯টি করণীয় ও সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালিসহ সব ক্ষেত্রে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা, পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন আনা এবং সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা।

এ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকারখানায় কার্বন নিঃসরণের মান নির্ধারণ ও এর কঠোর প্রয়োগ; নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ও আন্তর্জাতিক তহবিলের ব্যবহার; বৈদ্যুতিক যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি; নবায়নযোগ্য শক্তির উৎপাদন ও ব্যবহার উপযোগী করে ভবনের নকশা প্রণয়ন এবং বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের পরিবর্তে ব্লকের ব্যবহার বাড়ানো।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে স্টেট ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন) অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, অবশ্যই সাধ্যমতো জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে। সবাইকে নিজেদের জায়গা থেকেই এই চর্চা শুরু করতে হবে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের বায়ুমান ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক মো. জিয়াউল হক বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুতর সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে ইতিমধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তদারকির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, পরিবহন ও শিল্প খাতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির প্রয়োগ এবং জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে একটি সুস্থ ও সবুজ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি। এটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও একটি নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।

আরও পড়ুনপ্রস্তাবিত নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিটি দায়সারা২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

যৌথভাবে এ নীতি সংলাপের আয়োজন করে ক্যাপস, বিআইপি, বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক), সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিপিআরডি) এবং জেট নেট বিডি।

আলোচনায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের (ডব্লিউবিবিটি) পরিচালক গাউস পিয়ারী, অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশেদুজ্জামান মজুমদার, নেওয়াজ মোরশেদ, সেন্টার ফর ল অ্যান্ড পলিসি অ্যাফেয়ার্সের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মাহবুবুল আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, বারসিকের সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের ক্যাপাসিটি ডেভেলপমেন্টের কো-অর্ডিনেটর ওয়াসিউর রহমান, মিশন গ্রিন বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক আহসান এবং সেন্টার ফর পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (সিপিআরডি) গবেষণা কর্মকর্তা ইলমি তাবাচ্ছুম অংশ নেন।

আরও পড়ুননবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১০ বছরের কর অব্যাহতি১৪ নভেম্বর ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ